লেখক তরুণ প্রতিবাদী জিয়া উদ্দিন
সাবেক প্রধান শিক্ষক
বঙ্গবন্ধু রেডক্রিসেন্ট উচ্চ বিদ্যালয়, সাবরাং,টেকনাফ৷
শিক্ষার্থীঃ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
প্রসঙ্গঃ টেকনাফের অপহরণ
আমাদের টেকনাফের মানুষের মন আজ অনেকটা শীতকালীন শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনির মতো দুমড়েমুচড়ে গেছে৷ অথবা গ্রীষ্মকালীন সময়ে প্রচণ্ড খরতাপে মাঠ ফেটে চৌচির হওয়ার মতো হয়ে গেছে তাদের মন৷
কারণ হিসেবে জানতে চাইলে একটা বিষয় শুধু উপলব্ধি করছি৷ বগলের নিচের বিষফোঁড়ার মতো অসহ্য যন্ত্রণা দিচ্ছে যে বিষয়টি তা হল রোহিঙ্গা কর্তৃক বল্গাহীন অপহরণ অথচ সে অনুপাতে আমাদের প্রশাসন, রাজনীতিবিদ কিংবা আমরা সাধারণ জনগণ সবার সজাগদৃষ্টি খুবই ম্রীয়মান৷
আমরা যদি এখনো ঘুমে বিভোর থাকি, কিছু হয়নি এমন ভাব নিয়ে থাকি, আমাদের এলাকায় অপহরণ হয়নি, হয়েছে তো অন্য এলাকায় ইত্যাদি অনুর্বর চিন্তা করে থাকি তাহলে খুব বেশি দেরি নেয় আপনিও গুমের শিকার হতে!
একটা গোষ্ঠী কে আমরা যদি এভাবে রাজার মতো করে, নিষ্ককর্মা রেখে বিনা পরিশ্রমে জামাই আদর করে খাওয়ায় তাহলে অপরাধ বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, সামাজিক মনোবিজ্ঞান ইত্যাদির মতে এটাই সত্য যে তারা যেকোনো সামাজিক অপরাধে জড়াবে৷ নিরক্ষরতা তাদেরকে আরো নির্দয় করে তুলেছে৷ এনজিও সংস্থার মাধ্যমে তাদের নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷
অথচ এই শিক্ষা কি তাদের দেয়া হয় নি যে এই দেশে শরণার্থী হিসেবে থেকে, এই দেশের আলো বাতাসে বেঁচে থেকে, এই দেশের মানুষের প্রতি এই রকম আচরণ করাটা অন্যায়?
যেই চোরাগোপ্তা আক্রমণে তারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে সেটা তাদের দেশে থেকে যদি ভোটাধিকারের আন্দোলন করত তাহলে তারা হয়তো সফল হতো৷
কি এক অকৃতজ্ঞ জাতি এরা? যাদের পিট এবং পেটের উপর তাদের আশ্রয় হয়েছিল তারাই আবার আমাদের টেকনাফের শত মায়ের বুক খালি করছে?
আজ আবার এক ধ্বনি তোলা দরকার যেমনটা তুলেছিলেন পাহাড়তলী বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার৷ এমন স্বপ্নে উজ্জীবিত থাকা দরকার যেমনটা আমাদের জহির রায়হান দেখেছিলেন৷ ব্রিটিশদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে, বাক স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে,বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় মাস্টার দা সূর্য সেনের নেতৃত্বে বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরীর।
যেভাবে গুটি কয়েক হয়েও ইস্পাত কঠিন মনোবল নিয়ে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করেছিল, আজও সময় এসেছে ভেদাভেদ ভুলে একই প্ল্যাটফর্মে এসে অপহরণকারী তথা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণ প্রতিরোধ গড়ে তোলার৷
কিন্তু আমরা পারবো তো এভাবে প্রতিরোধ করতে? আবেগের বসে নয় কিছু সিদ্ধান্ত নীতি থেকে গ্রহণ করতে হবে৷ বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধার কেউ আছে? তাহলে এই কাজগুলো আমাদের কে আগে করতে হবেঃ
১৷ কোন রোহিঙ্গা কে বাসা ভাড়া দিতে পারবেন না৷
২৷ রোহিঙ্গাদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যাবেনা৷
৩৷ নিজে অভিভাবক হয়ে রোহিঙ্গাদের জন্ম নিবন্ধন করে দিতে পারবেন না৷
৪৷ রোহিঙ্গাদের আইডি কার্ড করার সময় জমির খতিয়ান দিয়ে সাহায্য করতে পারবেনা৷
৫৷ পাসপোর্ট তৈরীর কাজে সামান্য টাকার জন্য দালালী করে রোহিঙ্গাদের পুলিশ ভেরিফিকেশন না যায় মতো ঘুষ নিতে পারবেন না৷
৬৷ দুনিয়াতে না পেলেও আখেরাতে পাব এই আশায় রোহিঙ্গাদের ছেলে-মেয়ে কে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে পারবেন না৷
৭৷ সস্তা শ্রমিক পাওয়ার জন্য স্থানীয়দের বাদ দিয়ে ক্যাম্প থেকে কোন শ্রমিক আনতে পারবেন না৷
৮৷ স্থানীয় ছেলে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে আলেম হয়েছে অথচ তাকে বাদ দিয়ে শুধু কম বেতন এবং চোখ রাঙিয়ে কথা বলতে না পারে মতো রোহিঙ্গা কাউকে মসজিদের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব দিতে পারবেন না৷
৯৷ কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানোর সময় ১০০% জন্ম নিবন্ধন সনদ নিশ্চিত করতে হবে৷
১০৷ রোহিঙ্গাদের পক্ষে দালালী করে কাউকে জমি কিনে দিতে পারবেন না৷
আরো অনেক কারণ আছে এই মুহূর্তে আর লিখলাম না৷ যদি আপনারা নিজেদের অবস্থান থেকে এসবের নিশ্চায়ন করতে পারেন তাহলে সুরাহা হবে এই অপহরণের৷
অন্যথায় আমরা যতই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করি না কেন সেই আন্দোলন বীজই থেকে যাবে কখনো ফল হিসেবে ভোগ করতে পারব না৷ বরং রোহিঙ্গারা আমাদের কারো বাড়িতে গোপনে আশ্রয়ে থেকে আমাদের আন্দোলন দেখে বিকৃত হাসি হাসবে৷
তাই বলছি, প্রিয় টেকনাফের সর্বস্তরের জনসাধারণ, আমি বিশ্বাস করি আমার টেকনাফে এমন অনেক সূর্য সন্তান আছেন যারা সারা দেশে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা রাখেন৷ আপনাদের মধ্য থেকে যেকোনো একজনের একটা আওয়াজ চাই যেই আওয়াজে প্রকম্পিত হবে অপহরণকারীদের মন, সমূলে উৎপাটন হবে সন্ত্রাসী আর জঙ্গীবাদীদের আস্তানা৷
এরচেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে, আমরা স্থানীয় হয়েও আমাদের আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধের জন্য আমাদেরকেই যদি মানববন্ধন করতে হয়?