হাফেজ আহমদ স্টাফ রিপোর্টার
সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে পাত্রী দেখতে গিয়ে নিখোঁজে র ২৫ দিন পর তিন বন্ধুর উদ্ধার করা লাশের ঘটনায় দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠেছে। ইতিপূর্বে ঘটনায় জড়িত ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও র্যাব। উদ্ধার করা হয়েছে নিহত জমির হোসেন রুবেলের মোবাইল সেট।
উদ্ধারকৃত মোবাইলের কল লিস্টের সূত্র ধরে মাঠে নামে পুলিশ পরে আরো একজনকে আটক করা হয়। নিখোঁজে র পর ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে স্বজনদের কাছে পাঠানো হয় নৃশংস নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ। এই ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চেহারার আংশিক ও কন্ঠ শনাক্ত করে।একজনকে আটক করে র্যাব,পরে তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক আরো একজনকে আটক করে বাহিনীটি গত ২৪ মে বুধবার টেকনাফ দমদমিয়া হাবিরছড়া গহীন অরণ্য থেকে উদ্ধার করা হয় জমির হোসেন রুবেল, মোহাম্মদ ইউছুপ, মোঃ ইমরানের দ্বিখণ্ডিত ক্ষতবিক্ষত কঙ্কাল। প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষে স্ব স্ব এলাকায় দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, র্যাবের হাতে আটককৃত ছৈয়দ হোসেন প্রকাশ সোনালী ডাকাতকে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ।বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দি দিয়েছে সোনালি ডাকাত। জবানবন্দিতে হত্যাকান্ডের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে অপহরণের ঘটনায় জড়িত সোনালী ডাকাত।পুলিশের হাতে গ্রেফতার শফি আলম ওরফে বেলাল ডাকাতকে আজ (রবিবার) পুনরায় রিমান্ড প্রার্থনা করবে পুলিশ। এদিকে জবানবন্দিতে জমির হোসেন রুবেলের ডিভোর্স প্রাপ্ত স্ত্রী মিনুয়ারা বেগম ওরফে মিনার সংশ্লিষ্টতার কথাও উঠে এসেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মিনাকে ধরতে অভিযান শুরু করছে বলে সূত্রে জানা গেছে। নিখোঁজের ২৫ দিন পর কঙ্কাল উদ্ধার করার ঘটনা নিয়ে নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সোনালী ডাকাতের দেওয়া তথ্য মতে ১৪ জনের অপহরণকারী দলের ৪ জনকে আটক করা হলেও ঘটনায় জড়িত আরো ১০ জন এবং হত্যাকান্ডের মূল মাস্টার মাইন্ড রোহিঙ্গা নারী আল ইয়াকিন গ্রুপের সদস্য রুবেলের ডিভোর্স প্রাপ্ত স্ত্রী মিনুয়ারা বেগম ওরফে মিনাকে ধরতে কাজ করছে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
নিহত জমির হোসেন রুবেলের বোন মিনুয়ারা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানালেন, অপহরণের ঘটনায় নেপথ্যে থাকতে পারে রোহিঙ্গা নারী তার ভাই রুবেলের ডিভোর্সপ্রাপ্ত উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জাফর আলমের মেয়ে মিনু আরা বেগম ওরফে মিনার।
বিয়ের পর তাদের মধ্যে সুখের সংসার চলে আসছিল, রুবেল মিনা দম্পতির ৩ কন্যা শিশু রয়েছে। তারা এখন ফুফির সাথে বসবাস করে ঈদগাঁও ইউনিয়নের ভাদিতলা এলাকায়।
পারিবারিক কলহের জেরে রুবেল ডিভোর্স প্রদান করে রোহিঙ্গা নারী মিনাকে। সে সময় দেয়া হয়নি ক্ষতিপূরণের অর্থ। দেড় বছর আগে ডিভোর্স কার্যকর হলেও নানা বিষয়ে রুবেল -মিনার যোগাযোগ ছিল। বছর খানেক আগে ঢাকা শহরে বিয়ে করে ফ্ল্যাট বাসা নিয়ে থাকে রোহিঙ্গা নারী মিনা৷ সুখের সংসার ভেঙে গেলে আরো একটি বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করে রুবেল। সে কথা জানায় ডিভোর্স প্রাপ্ত স্ত্রী মিনাকে। মিনা তার পছন্দের কোহিনূর আক্তার নামের নারীর সন্ধান দেয় টেকনাফে। সে অনুযায়ী কথিত হবু স্ত্রীর ভাই পরিচয় দিয়ে শফি আলম প্রকাশ বেলালের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা রাখতে বলে।
এপ্রিলের ২৫-২৬ তারিখ দুইদিন মুঠোফোনে কথা হয় রুবেল ও শফির। সিদ্ধান্ত হয় ২৮ এপ্রিল রুবেল পাত্রী দেখতে যাবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরদিন তথা ২৮ এপ্রিল তারা পাত্রী দেখতে যাবে। সে লক্ষে কক্সবাজার শহরের উত্তর নুনিয়াছড়া থেকে রিজার্ভ সিএনজি নিয়ে রওনা দেয় তারা ৩ বন্ধু। গাড়ীতেই একাধিক বার কথা হয় শফির সাথে, কোন জায়গায় পৌঁছেছে, কতক্ষণ লাগবে, কোন রোড দিয়ে যাবে সব খবরাখবর রাখছিল শফি আলম প্রকাশ বেলাল। শফি আলম প্রকাশ বেলাল ছিল রোহিঙ্গা নারী মিনার ঘনিষ্ঠ এবং তাদের চক্রের নারী সদস্য ছিল মিনা।
এ দলের প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দেয় ছৈয়দ হোসেন প্রকাশ সোনালী ডাকাত। রুবেলদের বহনকারী সিএনজি গাড়িটি কক্সবাজার টেকনাফ সড়কের দমদমিয়া এলাকায় পৌঁছলে আগে থেকে পরিকল্পনা মতে উৎপেতে থাকা শফি আলম প্রকাশ বেলাল ও ছৈয়দ হোসেন প্রকাশ সোনালী ডাকাতের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী তাদের তুলে নিয়ে গহীন অরণ্যে নিয়ে যায়।
রুবেলের মেঝ বোন মিনুআরা জানান, এপ্রিলের ২৮ তারিখ রুবেলসহ তার দুুুই বন্ধুকে অপহরণের ৪ দিন পর ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে বর্বর নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ পাঠায় স্বজনদের কাছে। এর আগে ৩০ এপ্রিল ভিকটিমদের পরিবার পৃথক ৩ টি জিডি করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায়। জিডির সূত্র ধরে মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সম্ভাব্য কয়েকটি স্থানে অপহৃতদের সন্ধানে অভিযান চালায় পুলিশ।
কিন্ত অপহরণকারীরা পুলিশের অভিযান টের পেয়ে স্থান ও সীম পরিবর্তন করতে থাকে। এক পর্যায়ে আত্মীয় স্বজ নদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় অপহরণ কারীরা। উদ্বেগ উৎকন্ঠা বিরাজ করে তিন পরিবারের স্বজনদের মাঝে। তবে অপহরণকারীদের সাথে সেই রোহিঙ্গা নারী মিনার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল৷ নিহত জমির হোসেন রুবেলের মেঝ বোন আরো জানায়, লাশ উদ্ধারের ১০ দিন আগে রুবেলের মায়ের নম্বরে কল করে মিনা।
ঐ সময় মিনা রুবেলের বোনের সাথে কথা বলে জানায়, আপনার ভাইকে অপহরণ করেছে বলে শুনেছি, অপহর ণকারীদের দলে তার এক মামা আছে, দুই লাখ টাকা তার হাতে দিলে রুবেলকে মুক্ত করতে পারবে। তখন রুবেলের বোন কিংকর্তব্য বিমুঢ় হয়ে পড়ে৷ এর একদিন পর পূনরায় ফোন করে রুবেলের মায়ের নম্বরে। কথা বলে নিজেকে এক সময়ের কক্সবাজারের ওসি পরিচয় দিয়ে। সেও অপহরণকারীদের সাথে মিনার যোগাযোগ আছে জানিয়ে মিনার হাতে দুই লাখ টাকা তুলে দিতে বলে মুক্তিপণ না দিলে রুবেলসহ অপর দুই বন্ধুকে মেরে পেল তে পারে বলেও ধমকের শুরে কথা বলে মিনার স্বামী। মিনা এবং তার স্বামীর কথা রুবেলের পরিবারের সন্দেহ হলে যোগাযোগ করে পুলিশের সঙ্গে।এরই মধ্যে অপহ রণে জড়িত কথিত হবু পাত্রীর ভাই শফি আলম প্রকাশ বেলালের সম্পৃক্ততা খুঁজে পায় পুলিশ।পরে রুবেলের পরিবারকে টেকনাফ মডেল থানায় নিয়ে গিয়ে মামলা রেকর্ড করে।