স্টাফ রিপোর্টার,
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে সিএনজি চালক ইয়াসিনের মৃত্যুর ঘটনায় ওসিসহ ৫ পুলিশের নামে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহতের মেয়ে মরিয়ম আক্তার।
অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা হলেন-ওসি তরিকুল ইসলাম,এসআই কামাল হোসেন,এসআই মস্তফা মিয়া, এএসআই নাহিদ হাসান, কনস্টেবল আশরাফুল ইসলাম। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং-০৫ কিশোরগঞ্জ, সি.আর মোঃ নং ৩৭/২০২৫। মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই এর কাছে হস্তান্তর করা হয়। উক্ত ঘটনায় মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনাকারী চার পুলিশ সদস্যকে ক্লোজড করে রাখা হয়েছে কিশোরগঞ্জ পুলিশ লাইন্সে ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছেন কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ।
অভিযোগে বলা হয়েছে যে, গত ০৬ জানুয়ারি ২০২৫ সোমবার রাতে উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের চর ঝাকালিয়া গ্রামে ওসি তরিকুল ইসলামের নির্দেশনায় এস আই কামাল গংরা মাদক বিরোধী অভিযানের নামে সিএনজি চালক ইয়াসিন মিয়াকে বেআইনি ভাবে বেধড়ক পিটিয়ে হত্যা করেন।
তবে পুলিশ জানায়, নিহত ইয়াসিন মিয়া একজন মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবনকারী,(তার নামে দুটি মাদক মামলা রয়েছে) অভিযানের সময় পালাতে গিয়ে পড়ে গিয়ে অচেতন হয়ে যান, পরে চিকিৎসার জন্য কটিয়াদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
গত ৬ জানুয়ারি সোমবার রাতে কটিয়াদী উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের চরঝাকালিয়া গ্রামের মাদক সম্রাট ১৯ টি মাদক মামলার আসামি লিটন মিয়ার বাড়িতে ৪ সদস্যের একটি পুলিশ টিম অভিযান চালায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বাড়িতে থাকা লোকজন দৌড়ে পালিয়ে গেলেও ইয়াসিন মিয়া নামে এক সিএনজি চালক অতিরিক্ত মাদক সেবন করার ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ে।পরে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য কটিয়াদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।অফিসার ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম কটিয়াদী থানার একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লাশের সূরাতহাল প্রস্তুত করার জন্য বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর আবেদন করেন।
এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হোসেনপুর সার্কেল) ও মৃত ইয়াসিন এর পরিবারের সদস্যসহ উপস্থিত ৫০ জন লোকের সম্মুখে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করেন কিন্তু মৃত ইয়াসিন মিয়ার শরীরের কোথাও কোন রকমের চিহ্ন পাওয়া যায় নাই এবং উপস্থিত ডাক্তারগণ জানান স্টক জনিত কারণে মারা গেছেন। তথাপিও মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য লাশ পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য সৈয়দ নজরুল হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
নিহত ইয়াসিনের স্ত্রী আমেনার সহোদর বড় ভাই দুলাল মিয়া জানান, ভগ্নিপতি ইয়াসিন নিয়মিত মাদক সেবন করতো।তাকে মাদক সেবন করতে বার বার নিষেধ করা হলেও সে মাদক সেবন বন্ধ করে নাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফেকামারা এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান,ইয়াসিন একজন পরিচিত মাদক সেবনকারী ও লিটনের সহযোগী মাদক ব্যবসায়ী। সে হয়তো অতিরিক্ত মাদক সেবন করার ফলে অনাকাঙ্খিত অকাল মৃত্যু হয়েছে। তাতে পুলিশের দোষ কী? হয়তো একটি কুচক্রী মহল অভিযান থেকে পুলিশকে বিরত রাখা এবং পুলিশের মনোবল দুর্বল করার জন্য পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।তারা আরো জানান,আমরা চাই এদেশের প্রত্যেকটা মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীর বিচার হোক।শুধুমাত্র মাদকের কারণেই এদেশের যুব সমাজ আজ ধ্বংসের পথে।
অন্যদিকে একটি গোপন সূত্রে জানা যায়,বেশ কয়েকবছর পূর্বে সিএনজি চালক ইয়াসিন তার স্ত্রী-সন্তানসহ কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাসা ভাড়া থাকতো।কিন্তু সে প্রতিদিনই মাদক সেবন করে মাতলামি করার কারণে তাকে বাড়িওয়ালা বাসা থেকে বের করে দেন।এমনকি তার নিজ এলাকা নরসিংদী সদর থানা এলাকায় মাদক ব্যবসা এবং মাদক সেবন করে এলাকা থেকে বিতারিত হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।
এ বিষয়ে কটিয়াদী উপজেলা ছাত্র দলের আহবায়ক তশরিফুল হাছিব জানান,বিভিন্ন এলাকায় যখন মাদক সেবন ও বিক্রি হয় তখন আমরাই পুলিশকে তথ্য দেয় মাদক নির্মূলে কাজ করার জন্য। এখন মাদক নির্মূল অভিযানে গিয়ে পুলিশ যদি দেখে কোনো মাদক সেবনকারীর অতিরিক্ত মাদক সেবন করে অসুস্থ্য হয়ে গেছে কিংবা পরবর্তীতে মারা যায় তাতে পুলিশের কি অপরাধ?তাই সকলের প্রতি আহ্বান থাকবে পুলিশ জনগণের বন্ধু অতএব পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করবেন না।তাহলে দেশ ও জাতির ক্ষতি হবে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কটিয়াদী উপজেলার সমন্বয়ক রাব্বি খান জানান,মৃত ইয়াছিনের লাশ কটিয়াদী সদর হাসপাতালে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরীর সময় উপস্থিত ছিলাম।সেখানে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ সুরতহাল রিপোর্টে বাহ্যিক কোনো আগাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।এখন হয়তো মাদক ব্যবসায়ী লিটন কিছু কুচুক্রীমহলের সহযোগিতায় পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার চেষ্টা করছে।এসব মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচার করা হউক।
এছাড়াও কটিয়াদী উপজেলা বিএনপি,জামায়াতের বেশ কয়েকজন নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন ইউনিয়নের মেম্বার,চেয়ারম্যান, শিক্ষক,মসজিদের ইমামসহ গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গের সাথে কথা বলে জানা যায়,বর্তমান ওসি তরিকুল ইসলাম নিয়মিত মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনার ফলে কটিয়াদী থানা এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী উভয়ই আগের মতো এই অবৈধ ব্যবসা ও সেবন করতে পারছে না। পুলিশের এই কার্যক্রমকে ব্যাহত করার জন্যে কিছু কুচুক্রী মহল হয়তো ঐসব মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবনকারীরাই পুলিশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে কিংবা তৃতীয় পক্ষ হিসেবে এই ধরণের মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশকে হয়রানি করছে।
কিশোরগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হোসেনপুর সার্কেল) মোঃ তোফাজ্জল হোসেন জানান, কটিয়াদীতে সিএনজি চালক ইয়াসিন মিয়া নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় সাব-ইন্সপেক্টর কামাল হোসেন সহ চার পুলিশ সদস্যকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করে নেওয়া হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ ময়না তদন্তের রিপোর্ট না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাচ্ছে না।মৃত ইয়াসিন এর পোসমাডাম রিপোর্ট প্রাপ্তি সাপেক্ষে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।