নিজস্ব প্রতিবেদক”
বাংলাদেশের চিফ অব আর্মি স্টাফ (সিএএস) বা সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে কানাডা ভ্রমণের ভিসা দেয়া হয়নি। ফলে তাঁর জন্য নির্ধারিত সকল কর্মসূচি, হোটেল ও সেমিনারের জন্য দেয়া সকল বুকিং বাতিল করেছে বাংলাদেশ হাইকমিশন, অটোয়া। সেনাপ্রধান এখন অ্যামেরিকা সফরে রয়েছেন। সাথে আছেন তাঁর সহধর্মিণী সারাহনাজ কমলিকা জামান এবং আরও দুজন সামরিক কর্মকর্তা।
জানা যায়, সেনাপ্রধান ও তাঁর সফরসঙ্গীরা গত ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশ থেকে টার্কিশ এয়ারলাইনসের TK713 ফ্লাইটে ঢাকা থেকে ভোর ৬.২০ ঘটিকায় ইস্তাম্বুলের উদ্দেশে রওয়ানা। একইদিন সন্ধ্যা ৬.৪৫মিনিটে ইস্তাম্বুল থেকে একই এয়ারলাইনসের TK11 ফ্লাইটে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি(জেএফকে) বিমানবন্দরে পৌঁছান সেনাপ্রধান।
স্টেইট ডিপার্টমেন্টসহ সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে তাঁর পূর্বনির্ধারিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যোগ দিতেই এসেছে ন।বাংলাদেশের ক্ষমতার পরিবর্তনে দেশটির সেনাবাহিনী ও জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যে কারণে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অভ্যুত্থানকে ছাত্র-সামরিক অভ্যুত্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে।
সামরিক বাহিনী সরাসরি ক্ষমতা গ্রহণ না করলেও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে পেছন থেকে চালাচ্ছেন জেনারেল ওয়াকার, এটিই প্রচলিত ধারণা। ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, দেশের মুনসুন রেভুলুশনের আড়ালে অ্যামেরিকার হাত রয়েছে।
এরকম পরিস্থিতিতে সেনাপ্রধানের আমেরিকা সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করছে বিশ্লেষকরা। মাত্র কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশের নবনিযুক্ত পররাষ্ট্র সচিব মোঃ জসিম উদ্দিন এবং গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে অন্তর্বর্তীকা লীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস অ্যামেরিকা সফর করে গেছেন। এরপরেই সফরে এলেন ক্ষমতার আসল কেন্দ্র বলে স্বীকৃত সেনাবাহিনীর প্রধান।
সফরসূচি খতিয়ে দেখা যায় ১৯ অক্টোবর বিকালে সড়কপথে বাফেলো থেকে অটোয়া পৌঁছানোর কথা ছিল। যদিও এটি সরকারী সফরভুক্ত ছিল না, অর্থাৎ প্লেজার ট্রিপ ছিল; তবুও বাংলাদেশ হাইকমিশন, অটোয়া অফিস সেনাপ্রধানের কানাডা সফর উপলক্ষে যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। ২১ তারিখে অটোয়া থেকে ওয়াশিংটন ফিরে, ২৩ তারিখে একই পথে বাংলাদেশের উদ্দেশে যাত্রা করবেন সেনাপ্রধান।
বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, দেশে অবস্থানকালেই চারজন কানাডার ভিসার জন্য অনলাইনে ফরম ফিলাপ করেন। কিন্তু কানাডিয়ান ভিসা প্রদান কর্তৃপক্ষ সফরসঙ্গী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম আসাদুল হক এনডিসি ও মেজর মোঃ শোয়াইব রিফাত অমি পিএসসি-কে পাসপোর্ট জমা দিয়ে ভিসা সংগ্রহ করার কথা জানালেও সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ও তাঁর সহধর্মিণী সারাহনাজ কমলিকা জামানকে ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা দিতে নিষেধ করেন।
এরপর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনেক চেষ্টা তদবির করেও কানাডার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে সক্ষম হননি। এটিকে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ও সেনাবাহিনীর জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
জানা গেছে, সম্প্রতি বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান, সংখ্যালঘু নির্যাতন, সরকার সমর্থক নন এমন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের নির্যাতন ও আশুলিয়ায় সেনাসদস্যদের গুলিতে শ্রমিক নিহতের ঘটনার প্রেক্ষিতেই সেনাপ্রধান ও তাঁর স্ত্রীকে ভিসা প্রদানে অস্বীকৃতি জানায় কানাডা। যাকে বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক পরাজয় বলে মনে করেন সাবেক একজন ক্যারিয়ার ডিপ্লোম্যাট।
অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার নাহিদা সোবহান সেনাপ্রধা নের সফর উপলক্ষে কানাডাপ্রবাসী অবসরপ্রাপ্ত সামরিক অফিসার ও কিছু সাইট ভিজিটের সকল প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। সেনাপ্রধান ও সফরসঙ্গীদের থাকার জন্য Fairmont Chateau Laurier হোটেলে কক্ষও বুকিং দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ভিসা না পাওয়ায় সকল প্রস্তুতি এখন নিস্ফল হলো।
সেনাপ্রধানের কানাডা সফর উপলক্ষে হাইকমিশনার নাহিদা সোবহানের স্বামী ও কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোঃ নজরুল ইসলাম ইতোমধ্যে অটোয়া পৌঁছেছেন।তাঁকে টরেন্টোর পিয়ারসান বিমানবন্দরে টরেন্টোতে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল ফারুক হোসেন স্বাগত জানিয়ে অটোয়ায় পৌঁছে দেন।
নজরুল ইসলামের উদ্দেশ্য ছিল জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সাথে পরিচয় ও সখ্যতা বৃদ্ধি করে সম্পর্ককে ক্যাশে পরিণত করা। কেননা, সম্প্রতি দুদক থেকে যে ৩৮ জন কূটনীতিকের সম্পর্কে তথ্য জানতে চেয়েছে তার মধ্যে নজরুল ইসলাম অন্যতম। সে-আশাতেও নিরাশ হতে হলো স্বামী-স্ত্রীকে।
জানা গেছে,অ্যামেরিকায় পৌঁছে পুনরায় কানাডার ভিসার জন্য চেষ্টা করবেন দুজন”ভিসা পেলে কানাডা সফর করবেন সেনাপ্রধান।