নিজস্ব প্রতিবেদন ——-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের ব-দ্বীপ পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এমনভাবে প্রকল্প প্রণয়ন করতে বলেছেন, যাতে বাংলাদেশ জলবায়ু তহবিলের প্রতি শ্রুত ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থায়ন পায়। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এনইসি সভাকক্ষে জাতীয় অ র্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়তিনি এ নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী সভায় সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠকশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের ব্রিফকালে বলেন,সম্প্রতি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জলবায়ু তহবিলের ১ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন পাওয়ার বিষ য়টি আলোচনা হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান,জলবায়ু তহবি লের অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুন্দরবনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকা র দেওয়া হবে। সড়ক পুনর্বাসন সংক্রান্ত একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়ার বিষয় উল্লেখ করে এম এ মান্নান বলে ন,হাওর ও নিচু এলাকা যেখানে পানির চাপ বেশি,
সেখানে পানির প্রবাহ নিরবিচ্ছন্ন রাখতে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের ঐসব এলাকায় আরও সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী সরকারি তহবিলের অপচয় রোধে, সেতু কিংবা এ জাতীয় অবকাঠামোর নকশা ও উচ্চতা সম্পর্কে কর্মকর্তা এবং প্র কৌশলীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন,যাতে নির্মাণের পর কোনো স্থাপনা ভাঙার প্রয়োজন না হয়।প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় কোষাগারকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে আইন মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, জলবায়ু তহবিল থেকে বাংলাদেশের অর্থায়নের সর্বোচ্চ সীমা ১ বিলিয়ন ডলার। এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন,জলবায়ু তহবিল থেকে বাংলাদেশে র জন্য ইতোমধ্যে ১ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে দেশকে বাঁচাতে ব-দ্বীপ পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রকল্পে অর্থায়ন ক রা হবে।গত আগস্ট মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্য স্ফীতি বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়ে এম এ মান্নান বলেন,মূল্যস্ফী তি বেড়েছে।
তবে সরকারও এ বিষয়ে খুব সচেতন রয়েছে তিনি বলেন ,আমরা অতীতের মতো এবারও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করব। আশা করছি, খুব শীঘ্রই আমরা ঘুঁরে দাঁড়াতে পারব।মুরগী ও ডিমের উচ্চ মূল্যের কারণে মূলত গত মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে এবং সেটা অন্যান্য খাদ্যপণ্যকে প্রভাবিত করেছে তিনি বলেন,বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি হঠাৎ করে বৃদ্ধি পায়নি বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায় এবং আবার ধী রে ধীরে হ্রাসও পায়। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন,বিপুল অর্থনৈ তিক বিপর্যয় পুনরুদ্ধারের প্রচেস্টায় শ্রীলঙ্কার মানুষতাদের জীবনযাত্রার মান খুব সাধারণ পর্যায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যকরে চলেছে।
সুদের হার বাড়ানোর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টার দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন,সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়া নোর কথা ভাবতে পারে। তবে তিনি এও মনে করেন যে উচ্চ সুদহার বিনিয়োগের গতিকে মন্থর করতে পারে,যাপ্রবৃ দ্ধি হ্রাস করে থাকে।সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক হারে টাকা ছাপাচ্ছে- এমন অভিযোগ নাকোচ করে।
শামসুল আলম বলেন,সরকারকে সাধারণত পুরানো ও ছেঁ ড়া নোট বদলের জন্য টাকা ছাপতে হয়। তিনি বলেন,সা ধারণত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা যায়। কারণ এই সময়ে দেশে বেশি বৃষ্টিপাত হয়,যার ফলে উৎপাদন ও সরবরাহ কিছুটা বাঁধাগ্রস্ত হয়। প্রতিমন্ত্রী বলেন,‘তবে, এ বছর বন্যার কারণে ফসলের তেমন কো নো ক্ষতি হয়নি। আশা করছি, নভেম্বর থেকে মূল্যস্ফীতি আবার কমতে শুরু করবে। কারণ সরবরাহ চেইনে তেমন কোনো বিঘœ সৃষ্টি হয়নি।’
এক প্রশ্নের উত্তরে শামসুল আলম বলেন,সরকারের নীতি গত হস্তক্ষেপের কারণে বৈশ্বিক খারাপ পরিস্থিতি সত্ত্বেও মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের মধ্যেই ছিল,তা না হলে- মূল্যস্ফীতি ১৩ থেকে ১৪ শতাংশে পৌঁছে যেতো।তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি বাড়লে দ্রুত বেড়ে যায়,কিন্তু যখন কমতে শুরু করে,তখন মূল্যের অনমনীয়তা ফ্যাক্টর গুরুত্বপূর্ণ। শ্রীলঙ্কা র উদাহরণ তুলে ধরে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, শ্রীলঙ্কা নীতি সুদহার ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে অথচ তাদের প্রবৃদ্ধি র হার নেতিবাচক। কিন্তু আমাদের প্রবৃদ্ধি যদি নেতিবাচক হয়,তাহলে অনেকেই চাকরি হারাবে। মোদ্দা বিষয়- শ্রীল ঙ্কার অর্থনৈতিক কাঠামো আমাদের থেকে আলাদা।
মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদ ক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শামসুল আলম বলেন, মূল্যস্ফী তি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার চাল আমদানিতে শুল্ক ৬০ শ তাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করেছে। নীতি সুদহার দু ’দফা বাড়ানো হয়েছে এবং সুদহারের সীমা প্রত্যাহার করা হয়। পাশাপাশি সরবরাহ চেইন শক্তিশালী করতে সামগ্রিক ভর্তুকি বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন,এছাড়া কৃষি ঋণের পুরোটা বিতরণ করা হয়েছে এবং টাকার অবমূল্যায়ন শেষ পর্যন্ত রপ্তানিকারকদের জন্য ‘প্রণোদনা’ হিসেবে কাজ করছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিত কর্ম কার বলেন, প্রকল্পের বিপরীতে উন্নয়ন সহযোগিদের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ এবং সময়মত সেই ঋণ পরিশোধ করার পর্যাপ্ত সক্ষমতা বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের রয়েছে।পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করায় একনেকের পক্ষ থেকে তাকে উষ্ণ অভিনন্দন জানানো হয়। তিনি বলেন, এবারের জি-২০ সম্মেলনে শেখ হাসিনার উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত অংশগ্রহণ বর্হিবিশ্বে আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছে। এম এ মান্নান বলেন, একনেক সভায় আরও উল্লেখ করা হয় যে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। এছাড়া, একনেক বৈঠকে ইকো নমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) প্রতিবেদন সম্প র্কে অবহিত করা হয়,যেখানে বলা হয়েছে- বাংলাদেশ ২০ ৪০ সালের মধ্যে শীর্ষ ২০ অর্থনীতির দেশ হবে।এর আগে একনেক বৈঠকে এম এ মান্নান প্রধানমন্ত্রীকে ‘স্টেট অব দ্য ডেভলপমেন্ট: ইম্প্যাক্ট অব মেগা প্রজেক্টস’ শীর্ষক একটি প্রকাশনা হস্তান্তর করেন। ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ডিজেএফবি) প্রকাশনাটি সংকলন ও সম্পাদনা করেছে।