এমডি ইলিয়াছ সেনবাগ প্রতিনিধি
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের ৭ নম্বর মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলীর (৪২) বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা (ওয়ারেন্ট) জারি করেছেন আদালত। তিনমাস আগের এ পরোয়ানার পর প্রকাশ্যে সব কর্মকাণ্ড চালালেও পুলিশের দাবি তিনি পলাতক। সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানির পর এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী মুছাপুর ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকার মোতাহের হোসেনের ছেলে
আদালত সূত্রে জানা গেছে, চাঁদাবাজি, মারধর ও টাকা লুটের মামলায় গত ৯ ফেব্রুয়ারি মুছাপুরের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ২ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক এস এম মোসলেহ উদ্দিন মিজান আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করতে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৭ অক্টোবর মুছাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা এনামুল হক ভুইয়া (৬৮) বাদী হয়ে চেয়ারম্যান আইয়ুব আলীসহ তার আট সহযোগীর বিরুদ্ধে চাঁদা না পেয়ে মারধর, হত্যাচেষ্টা, শ্লীলতাহানিসহ দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে আদালতে পিটিশন দায়ের করেন। বিচারক অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি) নির্দেশ দেন।
মামলার বাদী এনামুল হক ভুইয়া জাগো নিউজকে বলেন, আমি মুছাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। গত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আমি চেয়ারম্যান আইয়ুব আলীর বিপক্ষে ছিলাম। সেই ক্ষোভ থেকে চেয়ারম্যান আমার বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না পেয়ে তিনি আমার বিদ্যালয়ের দোকানঘর থেকে জোর করে ভাড়া তোলার চেষ্টা করেন। আমি বাধা দিলে ক্ষুব্ধ হয়ে চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী গত বছরের ২৬ আগস্ট রাত পৌনে ৯টায় বাংলাবাজারে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে সহযোগীদের নিয়ে আমার ওপর হামলা করেন। এ বিষয়ে আমি কোম্পানীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিয়ে পুলিশ তা নেয়নি। পরে আদালতে মামলা করি।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ফজলুল হক জাগো নিউজকে বলেন, আদালতের নির্দেশে এনামুল হক ভুইয়ার দায়ের করা অভিযোগটি তদন্ত করে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এতে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে চাঁদা দাবি, বাদীকে মারধরসহ ৫০ হাজার টাকা লুটে নেওয়ার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই আসামি আইয়ুব আলীসহ তার সহযোগী রিয়াজ মাহমুদ (২৬), সাইফুল্লাহ (২৬), দেলোয়ার হোসেন রাশেদ (২৫), আরমান (২২), আশিকুল ইসলাম তানজিদ (২১), সাইদী হোসেন প্রাপ্ত (১৮), শাহরিয়ার শাবির (২১) ও কোরবান আলী ফকিরের (৩৪) বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা জাগো নিউজকে বলেন, চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভাসহ প্রতিনিয়ত থানায় যাতায়াত করেন। পুলিশ তাকে খুঁজে না পাওয়া হাস্যকর। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নিজ এলাকায় আইনের এমন দ্বৈতনীতি অগ্রহণযোগ্য। আইন সবার জন্য সমান হওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আজীবন সংগ্রাম করে আসছেন।
বিষয়টি নিয়ে জানতে একাধিকবার কল করা হলেও অভিযুক্ত চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী ফোন রিসিভ করেননি। তবে তার পরিষদের এক সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী এলাকায় আছেন এবং পরিষদের সব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাদেকুর রহমান ওই ইউপি চেয়ারম্যানের গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়টি নিশ্চিত করে জাগো নিউজকে বলেন, পলাতক থাকায় খোঁজ করে পুলিশ তাকে পায়নি। আদালতের নির্দেশ পালনে আবারও অভিযান চালানো হবে।