রতন আলী মোড়ল জেলা প্রতিনিধি শরীয়তপুর : গত ৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটার সময় শরীয়তপুর নড়িয়া থানাধীন পাঁচগাও গ্রামের সামনে চন্ডিপুর লঞ্চঘাটে অজ্ঞাত নাম (৩০) বছর বয়সী, রশি দিয়ে হাত-পা বাঁধা এবং মুখে কস্টেপ পেঁচানো অবস্থায় এক মহিলার লাশ উদ্ধার করেছিল সুরেশ্বর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি কর্তৃপক্ষ।
লাশটি পরিচয় অজ্ঞাত থাকায়, পরিচয় সনাক্তের জন্য ফরিদপুর ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) ইউনিটের ফিঙ্গারপ্রিন্ট এক্সপার্টদের সহায়তা নেয়া হয়। সিআইডি ফিঙ্গারপ্রিন্ট এক্স পার্টরা জাতীয় পরিচয় পত্রের মাধ্যমে জানতে পারেন মৃত নারীর নাম আঁখিনূর আক্তার (৩০), সে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং থানাধীন বেজগাঁও ইউনিয়নের জোরপুল ঢুলুগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মো. আফজাল শেখের মেয়ে। তার মাতার নাম শাহানা বেগম। লাশ ময়না তদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
হত্যার বিষয়ে মৃতের বাবা বাদী হয়ে শরীয়তপুর নড়িয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সুরেশ্বর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো. নাজমুল ইসলামকে।
নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির এসআই নাজমুল ইসলাম তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য ও আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) বেলা ১২ টার সময় সুরেশ্বর নৌ-পুলিশ ফাঁড়িতে চাঁদপুর অঞ্চলের নৌ- পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে হত্যাকান্ডের রহস্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। তিনি বলেন, হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মৃত আঁখিনুরের স্বামী মো. জা হাঙ্গীর শেখ (৪৪) ও তার বন্ধু শাহ আলম ব্যাপারী (৪৪)। স্বামী জাহাঙ্গীর শেখের ব্যবসায়িক কাজে স্ত্রী আখিনুর দুইবারে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা লোন তুলে দেন। কিন্তু ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় পরবর্তীতে স্ত্রীকে পুনরায় এক লক্ষ টাকা লোন উঠিয়ে দিতে বললে,
স্ত্রী লোন উঠিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। আর তাই স্ত্রীকে কে হত্যার পরিকল্পনা করে স্বামী জাহাঙ্গীর শেখ ও তার বন্ধু শাহ আলম ব্যাপারী। পরিকল্পনা অনুযায়ী শাহ আলম ব্যপারী বন্ধুকে শরীয়তপুর জাজিরা থেকে এক লক্ষ টাকা লোন তুলে দেয়ার কথা বলে ১ নভেম্বর আখিনুর সহ তার স্বামী জাহাঙ্গীর শেখ ও শাহ আলম ব্যপারী ট্রলারযোগে লৌহজং থেকে জাজিরার উদ্দেশ্যে রওনা করে। দুপুর ১ টা ৩০ মিনিটের সময় ট্রলারটি পদ্মা নদীর মাঝে অবস্থিত বালুরটেকের সামনে পৌছলে শাহ
আলম ব্যপারী পিছন থেকে আখিনুর কে ঘাড় ধরে ট্রলারের মাঝে ফেলে দেয় এবং বুকের উপর বসে দুই হাত দিয়ে গলা চেপে ধরে। এ সময় স্বামী জাহাঙ্গীর শেখ স্ত্রীর দুই হাত বেঁধে ফেলে। কিছুক্ষণ পর মৃত্যু নিশ্চিত করে, আখিনুরের নাক মুখে কস্টেপ পেঁচিয়ে, দুই হাত-পা বেঁধে পদ্মা নদীর মাঝে ফেলে দিয়ে বাড়ি ফিরে যায় এবং স্বামী লৌহজং থানায় স্ত্রী নিখোঁজের একটি সাধারণ ডায়েরি করে।
লাশ উদ্ধারের পর থেকেই সুরেশ্বর নৌ পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে হত্যার রহস্য উদঘাটনে নামে এবং ১৬ দিনের মধ্যে রহস্য উদঘাটন করে। হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী স্বামী জাহাঙ্গীর শেখ ও সহযোগী শাহ আলম ব্যপারী কে সুরেশ্বর নৌ-পুলিশ কর্তৃপক্ষ গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেন।