প্রথম বাংলা -হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে র শুল্ক বিভাগের গুদামে থাকা লকার থেকে সম্প্রতি চুরি হয় ৫৫ কেজি সোনা। এই বিপুল পরিমাণ সোনা গায়েব হওয়ার পর নজরে আসে বিমানবন্দরের শুল্ক বিভাগের গুদামের নানা অনিয়ম। এমনকি বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আকরাম শেখ ও মাসুদ রানা ঊ র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো এক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অভিযোগকা রীদের চাকরি থেকে অব্যাহতির হুমকি দেন বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেওয়া হয়।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের শুল্ক বিভা গের গুদাম থেকে সোনা চুরির ঘটনায় করা মামলায় চার রজস্ব কর্মকর্তাসহ আট আসামি এমন তথ্য দেন।গত সোম বার আট আসামিকে আদালতে হাজির করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক রাশেদুল ইসলাম। প্রতিবেদনে এসব কথা উল্লেখ করেন তিনি।
এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক রাশেদুল ইসলাম একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যম কে বলেন, ‘চার রাজস্ব কর্মকর্তাসহ আট আসামি রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন এসব তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে।’
প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন,রিমান্ডে জিজ্ঞাসা বাদে আসামিরা সোনা চুরির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে ছেন।গ্রেফতার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আকরাম শেখ ও মাসুদ রানা গুদামের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন ক র্তৃপক্ষকে জানালে কোনো রকম ঝামেলা ছাড়া তাদের দা য়িত্ব বুঝে নিতে বলা হয়। অন্যথায় চাকরি থেকে অব্যাহতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
রিমান্ডে থাকা রাজস্ব কর্মকর্তা শাহিদুল ইসলাম,সাইদুল ইস লাম ও সিপাহি নিয়ামত হাওলাদার জিজ্ঞাসাবাদে জানান, গত জানুয়ারিতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানব ন্দরের ট্রানজিট ও শুল্ক বিভাগের গুদামের দায়িত্ব পান তা রা। দায়িত্ব নেওয়ার এক থেকে দেড় মাস পর এক যাত্রীর জব্দ করা মালামাল (সোনা) বুঝিয়ে দেওয়ার সময় সেগু লো পাওয়া যাচ্ছিল না। এসময় এ বিষয়ে পূর্ববর্তী দায়িত্বর ত সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাকে জানালে তারাসহ আগের এআরও সাহেব এবং তার অধীনস্থ সিপাহি একসঙ্গে ওই মালামাল খোঁজ করেন।
ওইদিন মালামাল না পেয়ে পরদিনও তারা খোঁজাখুঁজিকরে ন।এরপরও ওই যাত্রীর মালামাল গুদামে না পেয়ে রাজস্ব কর্মকর্তা শাহিদুল ইসলাম, সাইদুল ইসলাম এবং আগের এ আরও সাহেবের পরামর্শে তারা গুদামে থাকা বাজেয়াপ্ত সোনা থেকে ওই যাত্রীর সোনা ফেরত দেন। এর ফলে গুদামে থাকা বাজেয়াপ্ত সোনা থেকে ওই পরিমাণ সোনা কমে যায়।
গুদামের সোনা-অলংকার লুকিয়ে রাখার তথ্য মিলেছে
প্রতিবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন,গত জুন মাসে বাজেট ঘোষণার দিন থেকে ২ জুন পর্যন্ত আনু মানিক ২৭০ পিস সোনার বার জব্দ করে গুদামে রাখা হয় এরপর সেগুলো গুদাম রেজিস্ট্রারে ওঠানোর সময় গণনা করে দেখা যায় জব্দ করা ২৭০ পিসের মধ্যে মাত্র ৯০পিস সোনার বার রয়েছে।অর্থাৎ বাকি সোনার বার মিসিং ছিল। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়নি এবং কোনো মামলাও দায়ের হয়নি।
গ্রেফতার আসামিদের দেওয়া তথ্যমতে,গত ২ জুন পর্যন্ত সর্বমোট ১৫ কেজি সোনার বার এবং সোনার গয়না তারা গুদাম থেকে নিয়েছেন।এছাড়াও গত ১২ সেপ্টেম্বর আসা মিদের দেওয়া তথ্যমতে,ঘটনাস্থল থেকে একই ডিএম নম্ব র সম্বলিত জব্দ করা এক হাজার ৯৬ গ্রাম সোনার বার বা অলংকার অন্য কোথাও লুকিয়ে রাখা হয়েছে।এ অবস্থায় এসব সোনা উদ্ধারে গ্রেফতার আসামি রাজস্ব কর্মকর্তা শা হিদুল ইসলাম, সাইদুল ইসলাম ও সিপাহি নিয়ামত হাওলা দারকে ফের রিমান্ডে নিয়ে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ আব শ্যক বলে উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
এদিকে,হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের শু ল্ক বিভাগের গুদাম থেকে ৫৫ কেজি সোনা চুরির ঘটনায় করা মামলায় দুই রাজস্ব কর্মকর্তাসহ তিনজনের আবারও তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডকৃতরা হলেন- সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম, সাইদুল ইসলাম সাহেদ ও সিপাহি মো. আফজাল হোসেন।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিমানবন্দর থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের এসআই মোজা ফফর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।তিনি বলেন,সো মবার পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে আট আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়।এরপর সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. শহি দুল ইসলাম,সাইদুল ইসলাম সাহেদ ও সিপাহি মো.আফজা ল হোসেনকে আবার পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।অপরদিকে অন্য পাঁচ আসামি কে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম শান্তা আক্তার তিনজনের চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।অন্য পাঁচজন কে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
এর আগে ১৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজি স্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান তাদের পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড পাওয়া আসামিরা হলেন- সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম,সাইদুল ইসলাম সাহেদ,আকরাম শেখ ,মো. মাসুম রানা,সিপাহি মো. মোজাম্মেল হক,মো.নিয়ামত হাওলাদার,মো. রেজাউল করিম,মো. আফজাল হোসেন।
গত ২২ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়,ঢাকা কাস্টম হাউজের বিমানবন্দর ট্রানজিট গু দামে ৫৫ কেজি সোনা পাওয়া যাচ্ছে না অর্থাৎ ছয়টি ডিটে নশন মেমোর পণ্যের হিসাবে গরমিল।সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়,সোনা চুরির এ ঘটনা ঢাকা শুল্ক বিভাগের নজরে আসে গত ২ সেপ্টেম্বর। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় পর দিন ৩ সেপ্টেম্বর। বিমানবন্দরের কাস্টম হাউজের নিজস্ব গুদামে দিনভর ইনভেন্টরি শেষে ৫৫ কেজি সোনা চুরি বা বেহাত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এসব সোনার দাম প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এ ঘটনায় শুল্ক বিভাগ একজন যুগ্ম কমিশনারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।
সোনা চুরির ঘটনায় কাস্টম হাউজের সহকারী রাজস্ব কর্ম কর্তা সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে ৩ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন এতে আসা মি করা হয় অজ্ঞাতপরিচয়দের।মামলার এজাহারে বলা হ য়েছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ঢাকা কাস্টম হাউজের গুদাম থেকে ৫৫ কেজি ৫০১ গ্রাম সোনা খোয়া গেছে, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৫০ কোটিটাকার বেশি। সাধারণত বিমানবন্দরে যাত্রীদের কাছ থেকে জব্দ করা সোনার বার,অলংকারসহ মূল্যবান জিনিস এই গুদামে রাখা হয়। গুদামে রক্ষিত সোনার হিসাব মেলাতে গিয়েই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে।