প্রথম বাংলা – অভিনব কৌশলে প্রতারণার ফাঁদ পেতে অর্থ আত্মসাৎকারী চক্রের মূলহোতাসহ ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)’র গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- মোঃ কবির ওরফে মিজান উকিল, মোঃ পিটু খান, মোঃ সাইফুল ইসলাম, কেয়া রহমান ও সাদিয়া ইসলাম মৌ। এসময় তাদের হেফাজত হতে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ০৩ টি ব্রিফকেস, ০১ টি লাগেজ, ৩৬ টি টাকা সাদৃশ্য বান্ডেল, ১২ টি মোবাইল ফোন ও ২০ টি মোবাইল সিম উদ্ধারমূলে জব্দ করা হয়।
গতকাল (শুক্রবার) ১১ নভেম্বর ২০২২ খ্রি: গোয়েন্দা -ওয়ারী বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম রাজধানীর মিরপুর ও উত্তরা এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে উদ্ধারকৃত মালামালসহ তাদের গ্রেফতার করে।
আজ শনিবার (১২ নভেম্বর ২০২২ খ্রি.) বেলা ১২:০০ ঘটিকায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিপিএম-বার, পিপিএম-বার।
তিনি বলেন, প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী তার বগুড়ার গ্রামের বাড়িতে বিল্ডিং নির্মাণকালে প্রতারক দলের একজন সদস্য তার নিকটে এসে ভালো মানের জমি ক্রয় করে দেয়ার অনুরোধ করে। কথাবার্তার একপর্যায়ে প্রতারক জানায় তার বস একজন শিল্পপতি, ঢাকায় তার বিশাল সম্পদসহ নিজস্ব বাড়ী, ফ্ল্যাট, ক্লিনিক,মিল-ফ্যাক্টরি আছে। পরবর্তীতে ঐ প্রতারক ব্যক্তি জানায় তার বস বগুড়াতে একটি ভালো মানের ক্লিনিক নির্মাণ করতে চায়। এ বিষয়ে সাহায্য করতে অনুরোধ জানিয়ে ভুক্তভোগীর মোবাইল নাম্বার নিয়ে প্রতারক ঢাকায় চলে যায়। এরপর প্রতারকদের সাথে মোবাইল ফোনে কথাবার্তার একপর্যায়ে ভুক্তভোগীর বন্ধুত্ব তৈরি হয়। ভুক্তভোগী প্রতারকদের প্রলোভনে আকৃষ্ট হয়ে গত সেপ্টেম্বর ২০২২ খ্রিঃ ঢাকায় আসে।
ভুক্তভোগী ঢাকায় আসলে ঐ প্রতারক এবং তার সহযোগিরা তাকে ব্যাপক আপ্যায়ন করে। এরই এক পর্যায়ে প্রতারক চক্রের সদস্যরা ভুক্তভোগীকে ক্লিনিক ব্যবসায় অল্প সময়ে অধিক লাভের কথা বলে ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে প্রলুদ্ধ করে।
তিনি আরো বলেন, ঘটনার শিকার ভুক্তভোগী প্রতারক চক্রের সদস্যদের কথায় বিশ্বাস করে ৫ লক্ষ টাকা প্রদান করে। অবশিষ্ট টাকা ভুক্তভোগী তার আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ঋণ করে প্রতারকদের হাতে তুলে দেয়। ঘটনার এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী বুঝতে পারে যে সে প্রতারণার শিকার হয়েছে।
প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা কখনো শিল্পপতি, কখনো এমডি, কখনো মারওয়ারী হিসেবে বা এরকম আরো নানা পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রলুদ্ধ করত। প্রতারকেরার বিলাস বহুল ফ্লাট ভাড়া করে ভিতরে কথিত অফিস বানাতো। এরপর সুন্দরী মহিলাদের দিয়ে টার্গেট গ্রুপ/ব্যক্তিকে অভ্যর্থনা প্রদান করতো। টার্গেট ব্যক্তিকে বিভিন্ন দামী রেস্টুরেন্টের খাবার, ফ্রুটস, জুস পরিবেশনের মাধ্যমে আপ্যায়ন করত। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় তাদের প্রতারণার জন্য এজেন্ট রয়েছে।
ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা অতি লোভে বা অধিক মুনাফা লাভের আশায় পরিচিত বা অপরিচিত কাউকে যথাযথভাবে যাচাই-বাচাই না করে নিজের কষ্টার্জিত অর্থ প্রতারকচক্রের নিকট দিবেন না। প্রতারক চক্র সব সময়ই সাধারণ মানুষকে ঠকানোর জন্য নিত্য নতুন বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে থাকে। তাই প্রতারক চক্র সম্পর্কে প্রাথমিক পর্যায়ে কোন তথ্য পাওয়া গেলে অতি দ্রুত ডিবি পুলিশকে অবহিত করবেন। যাতে করে প্রতারক চক্রকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা যায়।
ডিএমপি’র গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, পিপিএম এর দিকনির্দেশনায়; ওয়ারী বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ী-চুরি প্রতিরোধ টিমের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।
সুত্র, DMP news