নিজস্ব প্রতিবেদকঃ- মাদক ব্যবসায়ীদের ‘গলায় পাড়া’ দেবেন বলে হুংকার দিয়েছেন আলোচিত সাংসদ ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান।
তিনি মাদক ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘মাদক ব্যবসায়ী আমার মামু, শালা, দুলাভাই হলেও ছাড়ব না। আমাকে আগের রূপে নিয়েন না। কারো পরিচিত কেউ মাদক ব্যবসা করলে তাকে ছেড়ে দিতে বলুন, নইলে নারায়ণগঞ্জ থেকে বাড়িঘর বিক্রি করিয়ে ছাড়ব। এবার আমি মাদক ব্যবসায়ীদের গলায় পাড়া দেব। আর উকিলেরা প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের মামলা নিয়েন না। আর মাদক ব্যবসায়ীদের যে জামিন দেবেন, তাকেও নারায়ণগঞ্জে থাকতে দেব না।
বুধবার বিকালে লিংক রোডের নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল পার্কে নির্বাচনোত্তর পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামীম ওসমান বলেন, দেশের মানুষকে না খাইয়ে মারার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এমনও হতে পারে, টাকা দিয়েও আপনি জিনিস কিনতে পারছেন না। সামনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে না, দেশের বিরুদ্ধে আরও অনেক গেইম হবে। ভৌগোলিকভাবে অনেক কিছু ঘটছে। অনেক বড় বড় শক্তি এর সাথে জড়িত। আমরা একটি ক্রাইসিস ওভারকাম করতে যাচ্ছি, যা আসবে, দেখা যাবে ইনশাআল্লাহ। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমাদের ভরসা আছে। মৃত্যুকে এক পয়সা দাম না দেওয়ার নাম শেখ হাসিনা, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর নাম শেখ হাসিনা। ২১ বার চেষ্টা করেও তাকে মারতে পারেনি। শয়তান কোনো দিন আল্লাহর রহমতের সঙ্গে পারে না। আল্লাহ যেন দেশের জন্য, আমাদের বাচ্চাদের জন্য শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে রাখেন।
শামীম ওসমান বলেন, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ইসলামিক ফ্রন্ট, জাতীয় পার্টি বুঝি না, ভালো মানুষ বুঝি কেবল। আমরা প্রেস ক্লাব, আইনজীবী, ইমাম সাহেব, পুরোহিত, ছাত্র-ছাত্রী সবাইকে নিয়ে মাদক-সন্ত্রাস, ইভটিজিং ও চাঁদাবাজি বন্ধ করতে ‘প্রত্যাশা’ নামের একটি সংগঠন গড়ব। মানুষ যার ডাকে সাড়া দেয় সেই নেতা। আগামীতে আমি আর নির্বাচন করব না। আমি চলে যাওয়ার পরে যাতে এখানে যেই দাঁড়াক সে যেন পাশ করতে পারে। নেতাকর্মীদের জন্য আমার জান হাজির কিন্তু খারাপ মানুষ আমার সঙ্গে থাকলে আমি তাকে রাখব না। নেতাকর্মীদের ঋণ আমি শোধ করতে পারব না। কর্মীরা টাকাপয়সা চায় না। আজকে থেকে আমার সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ হবে ডাইরেক্ট। রাজনীতিকে আমি ধান্ধা হিসেবে নেইনি। নিলে ২৩ সালে এসে বাড়িঘর বন্ধক রাখতে হতো না।
গ্যাস সমস্যার কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই নেতা বলেন, সরকার এখন খাদ্যের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। কেননা আমরা মনে করছি সামনে সারাবিশ্বে খাদ্য ও তেলের সংকট হবে। গ্যাসের সমস্যা শেষ হতে মার্চ মাস লেগে যাবে।
মাদকের ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে চারবারের এই সংসদ সদস্য বলেন, আমি কারো কাছে এবারো ভোট চাইনি। প্রথমবার এমপি হয়ে আল্লাহর ঘরে গিয়ে ওয়াদা করেছিলাম পতিতাপল্লী উচ্ছেদের। ২০০ বছরের এই গজব আমরা নেত্রীর সহযোগিতায় উচ্ছেদ করেছিলাম কিন্তু পুনর্বাসনের মাধ্যমে; কিন্তু এখন নারায়ণগঞ্জের এমন কোনো এলাকা নাই যেখানে মাদক ব্যবসা নাই। এই মাদক থেকেই সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং, ইভটিজিংয়ের মতো অপরাধগুলোর সৃষ্টি হয়। গতকালও মাসদাইরে একজনের মাথায় কিশোর গ্যাংয়ের কোপে ৪০টি সেলাই লেগেছে। জেলার ১৮০০ পুলিশ মাদক কন্ট্রোল করতে পারবে না। রাজনীতিবিদ, পুলিশ, সাংবাদিকদের অনেকেও মাদক বিক্রিতে জড়িত। মাদক যারা বেচে তারা হয়তো আমার সাথেই বসে আছে। আগামী ২৭ জানুয়ারি থেকে আমাকে এক মাস কাজ করতে দিন। গোপনে মাদক ব্যবসায়ীদের নাম দিবেন আমার কাছে। মাদক বেচলে তার গলায় পাড়া দিব আমি। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে নারায়ণগঞ্জে এক চিমটি মাদকও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীল,জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহিদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা,জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হাসান নিপু, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহদাত হোসেন সাজনু প্রমুখ।