প্রথম বাংলা – রাজধানীর খিলক্ষেত থানার একটি বাসা থেকে স্বর্ণ, রূপা ও নগদ টাকা চুরির ঘটনায় জড়িত চোর চক্রের ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা গুলাশান বিভাগ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- মোঃ জব্বার মোল্লাহ, মোঃ জামাল সিকদার, মোঃ আবুল, আজিমুদ্দিন, মোঃ আনোয়ার হোসেন ও মোঃ আব্দুল ওহাব। এসময় তাদের হেফাজত হতে প্রায় ৯ ভরি স্বর্ণ, ৮২ ভরি রূপা ও নগদ প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়।
শনিবার (৮ সেপ্টেম্বর ২০২২) রাজধানীর তাঁতীবাজার, পল্লবী থানা, ও গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
আজ রবিবার (৯ সেপ্টেম্বর ২০২২) দুপুর ১২:০০ টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
তিনি বলেন, আগস্ট মাসের ১৭ তারিখে খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ-২ এর ১৫ নং রোড়ে ডাক্তার দম্পতির বাসায় দরজা ভেঙ্গে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে অজ্ঞাতনামা চোরেরা ৪২ ভরি স্বর্ণ ও ইউএস ডলার চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী খিলক্ষেত থানায় মামলা করেন।
তিনি আরো বলেন, মামলাটি রুজুর পরে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম কাজ শুরু করেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে চুরির ঘটনার সাথে জড়িত চোরদের শনাক্ত করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর তাঁতীবাজার, পল্লবী থানা, ও গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চোর চক্রের সর্দার ও স্বর্ণের দোকান মালিকসহ মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সর্ম্পকে ডিবি প্রধান বলেন, চোর চক্রটির সর্দার মোঃ জব্বার মোল্লাহ । সাদা পাঞ্জাবি- লুঙ্গি, মাথায় চুপি এই বেশভূষাগুলোই এই মুরুব্বী চোর চক্রের প্রধান হাতিয়ার। দাড়ি টুপি-পাঞ্জাবি পরা থাকায় কোন অপরিচিত ভবনে উঠলেও প্রাথমিকভাবে কেউ তাদেরকে সন্দেহ করে না।
কেউ জিজ্ঞাসাবাদ করলে কৌশলে তারা সেই প্রশ্নের উত্তর দেয়। এই চোর চক্র বিভিন্ন জেলা থেকে এসে তারা একত্রিত হয়। একটি এলাকা থেকে হাঁটা শুরু করে এবং সুবিধামত ভবন টার্গেট করে। টার্গেটকৃত ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে ঘুরে যে বাসার প্রধান দরজা লক করা থাকে, সেই বাসার দরজা ভেঙ্গে চুরি করে।
গ্রেফতারকৃতদের অপরাধের কৌশল সর্ম্পকে তিনি বলেন, ৮-১০ বছর বয়স থেকে তারা ঢাকার কারওয়ান বাজার, মিরপুরসহ সংসদ ভবনের আশেপাশের এলাকায় টোকাইগিরি করত। এ সময় তারা বাসা বাড়ির ছাদে রোদে দেয়া জামাকাপড়, জুতা, রড ইত্যাদি চুরি করে বিক্রি করতো। চোরাই মাল বিক্রি করতে গিয়ে একে অন্যের সাথে পরিচিত হয়। পরে তারা একত্রে চুরি করা শুরু করে।
তিনি আরো বলেন, বিগত ২০-২৫ বছর ধরে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় দরজা ভেঙে বাসায় ঢুকে তারা চুরি করা শুরু করেছেন। চুরি করার আগের দিন তারা কথা বলে ঠিক করে কোথায় চুরি করবে, সেমতে পরদিন সকালবেলা তারা এই এলাকায় হাজির হয়। একত্রে চা পান করার পর তারা হাঁটতে থাকে এবং খেয়াল করে দেখে কোন বাসায় দারোয়ান ও সিসিটিভি ক্যামেরা নেই।
তারা বাসা টার্গেটের পর দুইজন বাসার ভিতরে প্রবেশ করে, বাকি ২-৩ জন বাইরে পাহারায় থাকে ১০ মিনিটের মধ্যে চুরির কাজ শেষ করেন। চোরাইকৃত মালামাল ভাগ করে নিয়ে যে যার যার এলাকায় চলে যায়। ওই চোর চক্র শুধুমাত্র মূল্যবান অলংকার ও বিদেশি কারেন্সি, টাকা ইত্যাদি চুরি করে।
তিনি জানান, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদের সকল সহযোগীদের আইনের আওতায় আনা হবে।গ্রেফতারকৃতদের পুলিশ রিমান্ডের আবেদনসহ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান গোয়েন্দা এ পুলিশ কর্মকর্তা।
বহুতল ভবনে নিরাপত্তার স্বার্থে সিসি ক্যামেরা ও দারোয়ান রাখার জন্য বাড়িওয়ালাদের প্রতি অনুরোধ করেন ডিবি প্রধান।
সুত্র, ডিএমপি নিউজ