প্রথম বাংলা – চিকিৎসা সেবা নিতে এসে গত চার মাসে লিফটে প্রাণহানির ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে গত ১ অক্টোবর। ওই ঘটনায় নিহত জাহিদুল ইসলামের (৪০) বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায়। তাঁর শিশুসন্তান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল।
এছাড়া চলতি বছরের ১২ মে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিফটে আটকা পড়ে মমতাজ (৫০) নামের এক রোগীর মৃত্যু হয়। এবং ৩ মে চিকিৎসা নিতে আসা জিল্লুর রহমান (৭০) নামের এক রোগী হাসপাতালের ১২ তলায় লিফটের পাশের একটি ফাঁকা দিয়ে পড়ে নিহত হন।
মৃত্যুর এমন ধারাবাহিক ঘটনার পরেও টনক নড়েনি সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, হাসপাতালে ছয়টি লিফট রয়েছে। ২৭ প্যাসেঞ্জারের প্রতিটি লিফট কেনায় খরচ হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ লাখ টাকা।
দরপত্র অনুযায়ী ইতালির বিখ্যাত মভি ব্র্যান্ডের লিফট সরবরাহ করার কথা। কিন্তু ইলেকট্রিক মোটর ছাড়া কেবিন ও যন্ত্রাংশ দেওয়া হয়েছে চীনের। নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করায় লোড বেশি হলেই আটকা পড়ে লিফট। প্রতি মাসে রক্ষণাবেক্ষণের কথা থাকলেও তা শুধু কাগজে-কলমেই দেখানো হয়। হাসপাতালের লিফট অপারেটর সরবরাহসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছেন গণপূর্তের ইএম বিভাগ- ১০, ঢাকা এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল হালিম। তিনি নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে ঢাকার অফিস থেকে গাজীপুর ও মানিকগঞ্জে বৈদ্যুতিক কাজ বাস্তবায়ন ও তদারকি করে থাকেন।
লিফটে যতবার ত্রুটি দেখা দিয়েছে কোনো বারই পদক্ষেপ নেয়নি গণপূর্ত কর্তৃপক্ষ। তবে সর্বশেষ ঘটনার পর চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে (সিভিল) প্রধান করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালকের প্রতিনিধি, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) এবং হাসপাতালের সহকারী পরিচালক। যদিও তদন্ত কমিটির কোনো তথ্যই সামনে আসেনি।
অন্যদিকে, লিফটে প্রাণহানির ঘটনার পুনরাবৃত্তি অত্যন্ত অনভিপ্রেত ও উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যাদি পর্যালোচনা করে স্বপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ মনে করেন, লিফট দুর্ঘটনার ঘটনাটি হাসপাতালের সমগ্র স্বাস্থ্য-সেবাসহ প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও গাফিলতি সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। জবাবদিহিতার সংস্কৃতি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে পারে।
এরপর ঘটনাটির সঠিক তদন্ত করে কাদের অবহেলায় লিফটে ৪৫ মিনিট আটকে থেকে রোগীর মৃত্যু হলো, তা শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বলা হয়। এরপরও এ পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। মাত্র চার মাসের ব্যবধানে ওই হাসপাতালে একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি অত্যন্ত অনভিপ্রেত। ওঠানামা করার জন্য লিফট একটি অত্যাধুনিক বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্র, নিয়মিতভাবে যার ত্রুটিবিচ্যুতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন ।
এ প্রেক্ষাপটে, কার বা কাদের অবহেলায় সেখানকার লিফট থেকে পড়ে বারবার মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনা ঘটছে, সে বিষয়ে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, গাজীপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং নির্বাহী প্রকৌশলীকে (ইলেকট্রিক্যাল) কমিশনের বেঞ্চ-১ এর সভায় হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হালিম মিয়াকে বারবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই। একই বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতারকে ফোন করা হলে তাঁরও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ছবি, সংগৃহীত