জেলা প্রতিনিধি চট্টগ্রাম:
গত ২২ জানুয়ারি ২০২৪ ইং তারিখে এক সাক্ষাৎকারে চট্টগ্রাম কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ মোজাহেদু ল ইসলাম চৌধুরী, জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার পত্রিকার জানানযে,দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম কলেজের আবাসিক হল গুলি বন্ধ হয়ে আছে, যার কারণে হলের সকল আসবাবপত্র ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে এবং ভবনগুলির দেওয়াল খসে খসে ভেঙ্গে পড়ছে,
এমত অবস্থায় গ্রাম গুঞ্জ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা অনে ক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে,কারণ তারা আবাসিক হল গুলোতে থাকতে পারছে না,তাই হল গুলি দ্রুত সংস্কা র করে চালু করার আহ্বান জানিয়েছেন,উনিশ শতকের নবজাগরণ-স্পন্দিত,ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদীচেতনা -নিষিক্ত, ১৯৭১-এর জনযুদ্ধে রক্তস্নাত আমাদের এই স্বোপার্জিত বাংলাদেশের প্রিয় বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। ‘
শৈলকিরীটিনী,সাগরকুন্তলা,সরিৎমালিনী’এই চট্টগ্রামে র সার্ধশতাব্দ প্রাচীন বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম কলেজ হিরণ্ময় ঐতিহ্যের আধার এই প্রতিষ্ঠান শিক্ষা ও সংস্কৃতিচর্চার অলোকসামান্য দীপাধার হিসেবে এই জনপদের অমিত সম্ভাবনার বহুমাত্রিক বিকাশে সতত পালন করছে উপ যুক্ত ধাত্রীর অতন্দ্র ভূমিকা।চট্টগ্রামের সরকারি রেকর্ড এবং প্রখ্যাত ইংরেজ সিভিলিয়ন উইলিয়াম উইলসন হা ন্টার সাহেবের A Statistical Account of Ben gal নামক গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, ১৮৬৯ সালে চট্টগ্রাম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে জে সি বোসের হাত ধরেকলেজ টির অগ্রযাত্রা সূচিত হয়েছিল। উল্লেখ্য,প্রতিষ্ঠিত হওয়া র অব্যবহিত পরেই অর্থাভাবে ১৮৭০ সালে এক বছর কাল কলেজ বন্ধ থাকে। মীরসরাই থানার ধুম,নিবাসী জমিদার গোলকচন্দ্র চৌধুরী ‘রায় বাহাদুর’ উপাধির বি নিময়ে,কলেজকে দশ হাজার টাকা দান করেনতাঁর এই অর্থানুকূল্যে ১৮৭১ সালে কলেজটি পুনরায় চালু হয়।
এ ব্যাপারে কবি নবীন সেন এক,উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। ১৯১০ সালে কলেজটি প্রথম শ্রেণির, ডিগ্রি কলেজ হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃ তি লাভ করে। শুরু,হয় আরবি,ফারসি,পালি, সংস্কৃত, ইতিহাস, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নশাস্ত্রে পাস ও অনার্স কোর্সে পাঠদান। আরও পরে ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দ
থেকে শুরু হয় ইংরেজি, অর্থনীতি ও দর্শন বিষয়ে পাস ও অনার্স কোর্সে পাঠদান।
১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে কলেজের অধ্যক্ষ পদে যোগদান করে ন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ প্রফেসর শামসুল ওলামা কামালউ দ্দিন (বি.এ.ক্যান্টাব)।তাঁর যোগদানের ফলে কলেজে র গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধিত হয়।তাঁর সময়ে ১৯২৫-২ ৬ সালে কলেজ পরিদর্শনে আসেন শেরে বাংলা এ. কে ফজলুল হক, ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস-এর প্রথম মহিলা সভাপতি সরোজিনী নাইডু এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
এই যুগন্ধর অধ্যক্ষ ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে ব্যাপক প্রতিকূলতা র মুখে তিনজন ছাত্রী ভর্তি করার মধ্য দিয়ে কলেজে সহশিক্ষার সূত্রপাত ঘটান। এতদঞ্চলের নারীজাগরণে এই অধ্যক্ষ ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন।কালের পরিক্রমায় বহু সংখ্যক খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ ও শিক্ষাপ্র শাসক কলেজের অধ্যক্ষ পদে আসীন হয়েছেন,
তাঁদের মধ্যে উইলিয়াম ভাট, এফ.সি টার্নার (অক্সন), এ্যাজারটন স্মিথ (লিডস), জে আর ব্যারো (অক্সন), এক সময়কার বাংলার জনশিক্ষার পরিচালক জে.এন. বটমলি প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। খ্যাতকীর্তি বাঙালিঅধ্যক্ষ ও অধ্যাপকদের মধ্যে অধ্যাপক সুরেন্দ্রনাথ দাসগুপ্ত, এমএ,পিএইচডি,সাহিত্য সমালোচক ড. সুবোধচন্দ্র সে নগুপ্ত,অধ্যাপক জনার্দন চক্রবর্তী,বিখ্যাত ইতিহাসবিদ এ.ডাবলিয়ু মাহমুদ,মৌলভী শাইখ শারাফুদ্দিন,শ্রী সতী শচন্দ্র গাঙ্গুলী ও শ্রী দীনেশচন্দ্র সেন।
বরেণ্য অধ্যাপকদের মধ্যে আরও ছিলেন ড. ভবতোষ দত্ত,অধ্যাপক আবুল ফজল,অধ্যাপক মনসুর উদ্দিন আহমদ,অধ্যাপক মোতাহের হোসেন চৌধুরী,অধ্যাপক যোগেশ চন্দ্র সিংহ,অধ্যাপক জালাল উদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক এফ. রহমান,অধ্যাপক ড.এ.এফ.এম.কামাল উদ্দিন,অপূর্বকুমার চন্দ (অক্সন),প্রফেসর আবু হেনা, প্রফেসর ড. মুহম্মদ এনামুল হক,অধ্যাপক বদরুদ্দিন উমর,এ.এফ.এম. মোজাফ্ফর আহমেদ,এস.এ.আর মতিন উদ্দিন (অক্সন),অধ্যাপক এম. এ সামাদ,
প্রফেসর আহমদ ফজলে দাইয়ান,অধ্যাপক হাবিবুররহ মান,ড. জাহাঙ্গীর তারেক,ড. হুমায়ুন আজাদ,অধ্যাপক ফেরদাউস খান,অধ্যাপক আলাউদ্দিন আল আজাদ, ড. মনিরুজ্জামান,অধ্যাপক আবদার রশীদ,অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন আহমদ,মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান এমএ সসি (লন্ডন),ড. আশরাফ সিদ্দিকী, প্রফেসর রওশন আক্তার হানিফ, প্রফেসর ড. ফাতেমা নারগিস চৌধুরী,
এমএসসি (টরেন্টো) পিএইচডি,(ম্যাকগিল) -এর নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। এক কথায়,এ-কলেজেঅধ্যাপ না করেছেন উপমহাদেশের প্রবাদতুল্য বহু জ্ঞানতাপস গুণী শিক্ষক। এ কলেজের প্রাক্তন কৃতী ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায়ভারতীয়দের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকারী শ্রী সুবিমল দত্ত,বিজ্ঞানী প্রি য়দারঞ্জন রায়,মাস্টারদা সূর্যসেন,বিপ্লবী পূর্ণেন্দু দস্তিদা র,কল্পনাদত্ত,নূর আহম্মদ চেয়ারম্যান,আবদুল করিমসা হিত্য বিশারদ,সাহিত্যিক মাহবুবুল আলম,
কবি ওহীদুল আলম,অধ্যাপক আসহাব উদ্দিন আহমদ ,পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী এ. কে. খান,পূর্বপাকিস্তানে র গভর্নর জাকির হোসেন,পূর্ব পাকিস্তানের মন্ত্রী সাহি ত্যিক হাবিবুল্লাহ বাহার,পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টেরবিচা রপতি ইমাম হোসেন,বিজ্ঞানী আবদুল্লাহ আল মুতী, ড. এনামুল হক,ড. আহমদ শরীফ,অধ্যাপক মোহাম্মদ খা লেদ,ভাষাসৈনিক আব্দুল্লাহ আল হারুন,বেলাল মোহা ম্মদ,নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূস,সাংস্কৃতিক ব্য ক্তিত্ব ডা. কামাল এ.খাঁন, নাট্যব্যক্তিত্ব মাহবুব হাসান,
বিশিষ্ট চিন্তক ও সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন,প্রফে সর এমেরিটাস আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন (সা বেক উপাচার্য, চবি), ইতিহাসবিদ প্রফেসর মুনতাসির মামুন,বিশিষ্ট পণ্ডিত ও সমাজবিশ্লেষক সলিমুল্লাহ খান সাহিত্যিক চৌধুরী জহুরুল হক প্রমুখ।
শুধু সাহিত্য ও সংস্কৃতির অপার উৎকর্ষ সাধনে নয়, বাঙালির জাতীয়তাবাদী চেতনার জাগরণেও এ-কলেজের ছাত্র-শিক্ষকের ভূমিকা ছিল অনন্য। ১৯৩০ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্