প্রথম বাংলা – মুক্তাগাছার সিএনজি-অটোরিকশা চালক কামালকে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী থানাধীন এলাকায় হত্যা করে সিএনজি ছিনতাই এর ক্লুলেস ঘটনার রহস্য উন্মোচনপূর্বক ছিনতাইকৃত সিএনজি-অটোরিকশা উদ্ধার এবং হত্যার সাথে জড়িত সকলকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৪, ব্যাটালিয়ন সদর, ময়মনসিংহ।
বাংলাদেশ আমার অহংকার”এই স্লোগান নিয়ে র্যাব যুব সমাজ তথা বাংলাদেশকে মাদকের ভয়াল থাবা, সন্ত্রাস, জঙ্গী, ছিনতাই, ডাকাতি, জুয়া, অপহরণ, খুন, ধর্ষণ, অসাধু অস্ত্র ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন ধরণের অবৈধ কর্মকান্ড থেকে রক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশব্যাপী আপোষহীন অবস্থানে থেকে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে শিশু ধর্ষণের সাথে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে সর্বস্তরের জনগনের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে র্যাব।
গত ২৮ মার্চ ২০২৩ খ্রি সকালে টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ি থানাধীন ছাতারকান্দি নাথেরপাড়া এলাকার ঢাকা -জামালপুর মহাসড়কের পাকা রাস্তার উপর জনৈক এক ব্যাক্তিকে গুরুতর আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে সংবাদ দিলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ধনবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে। পরবর্তীতে, পুলিশ মারফত সংবাদ পেয়ে ভিকটিমের ছোট ভাই নাজমুল ভিকটিমের লাশ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে সনাক্ত করে।
পরবর্তীতে, ভিকটিমের ছোট ভাই মোঃ নাজমুল হোসেন (৩৪), পিতা-মোঃ আঃ জব্বার, সাং-রঘুনাথপুর নতুন বাজার, থানাঃ মুক্তাগাছা, জেলাঃ ময়মনসিংহ বাদী হয়ে ধনবাড়ী থানার মামলা নং-০১, তারিখঃ ০১/০৪/২০২৩ ইং, ধারা- ৩০২/৩৯৪/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০ দায়ের করেন।
উক্ত ঘটনার সংবাদ প্রাপ্তির পর থেকে র্যাব-১৪, ময়মন সিংহ উক্ত ঘটনাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে হত্যা কান্ডের সাথে জড়িত আসামীদের সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে অধিনায়ক মহোদয়ের নির্দেশক্রমে সিনিয়র সহকারী পরিচালক মোঃ আনোয়ার হোসেন এর নেতৃত্বে র্যাবের একটি অভিযানিক দল ১০/০৪/২০২৩ ইং ঈশ্বরগঞ্জ এর গোল্লা জয়পুর এলাকায় নিজ বাড়ি হতে আসামী ০১। মোঃ ইসলাম উদ্দিন ফকির (৩০), পিতা- জয়নাল আবেদীন ফকির,সাং- গোল্লা জয়পুর, থানা-ঈশ্বরগঞ্জ,
জেলা- ময়মনসিংহকে এবং ০৬/০৬/২০২৩ ইং আসামী ঢাকা জেলার পূর্ব মানিকনগর এলাকা হতে সকাল অনুমান ০৬.০০ ঘটিকার সময় আসামী ০২। মোঃ শফিকুল ইসলা ম (৪৫),পিতা- মোহাম্মদ আব্দুল জলিল,সাং- বোরকা, থানা ফুলবাড়িয়া,জেলা : ময়মনসিংহকে এবং একই তারিখ দুপুর অনুমান ১২.০০ ঘটিকার সময় মানিকগঞ্জ জেলার সদর থানাধীন আকিজ ফ্যাক্টরীর সামনে, আসামী ০৩।
মোঃ আবুল কাশেম (৫২), পিতা-মোঃ আবুল হোসেন, সাং- চৈতনগর, থানা : কলমাকান্দা,জেলা : নেত্রকোনাকে গ্রেফতার করে। উপরিউক্ত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদের সুত্রধরে ০৮/০৬/২০২৩ ইং তারিখ সকাল অনুমান ০৬.০০ ঘটিকার সময় আসামী ০৪। মোঃ জালাল (৪৬), পিতাঃ মৃত-আজগর আলি, সাং-লাঙ্গুনিয়া, থানা-মুক্তাগাছা, জেলা-ময়মনসিংহকে ঢাকা মহাখালী এলাকা হতে এবং একই তারিখ সকাল অনুমান ০৩.১৫ ঘটিকায় আসামী৫। মোঃ কামাল হোসেন (২৮), পিতাঃ গিয়াসউদ্দিন,সাং- দরি রামপুর,থানাঃ ত্রিশাল, জেলা- ময়মনসিংহকে ত্রিশাল বাস স্ট্যান্ড থেকে এবং একই দিনের সকাল ১০.২৫ ঘটিকার সময় আসামী ০৬। মোঃ আব্দুল ছত্তার (৩৮), পিতাঃ মৃত আবেদ আলী,সাং- বাগান,থানাঃ ত্রিশাল,জেলা- ময়মন সিংহকে ত্রিশাল থানাধীন রাগামারা এলাকা হতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় এবং তার হেফাজত হইতে ছিনতাইকৃত ভিকটিম কামালের থ্রি-হুইলার সিএনজিটি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, মুক্তা গাছা থানাধীন রঘুনাথপুর গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে মো. কামাল হোসেন ভাড়ায় সিএনজি অটো রিকশা চালাতেন। ঘটনার আগের দিন শফিক এবং কাসেম মোল্লা মিলে হঠাৎ বড়লোক হওয়ার পরিকল্পনা করে এবং সেই মোতাবেক তারা শর্টকাট টেকনিক হিসেবে সিএনজি ছিনতাই এর পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক তারা ছিনতাই এর উদ্দেশ্যে একটি মোবাইল ফোন এবং একটি বেনামী সিম সংগ্রহ করে। ঘটনার দিন গত ২৭ মার্চ ২০২৩ খ্রি. তারিখ বিকালে মুক্তাগাছা থেকে ইসলাম ও কাসেম সিএনজি চালক কামালকে ফোন করে ভাড়ায় সরিষাবাড়ি যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলে ভিকটিম রাজি হলে তারা তাকে নিয়ে সরিষাবাড়ী যায়। পথিমধ্যে, আসামীরা অপর আসামী শফিকুলকেও সিএনজিতে উঠিয়ে নেয়। সেখানে কালক্ষেপণ করলে ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসলে সবাই মিলে ইফতার করার সুযোগ হলে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ভিকটিম কামাল এর জুসের মধ্যে বিষাক্ত নেশা জাতীয় ঔষধ মিশিয়ে
ভিকটিমকে খাওয়ালে ভিকটিম অচেতন হয়ে মৃত্যুবরণ করলে ঘাতকরা তাকে সিএনজিতে উঠিয়ে নির্জনে ফেলে রেখে সিএনজি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ঘাতকরা সিএনজিটি মোঃ জালাল নামের দালালের কাছে বিক্রয়ের জন্য দেয়। পরবর্তীতে, জালালের ৩,৮০,০০০ টাকার বিনিময়ে কামালের কাছে বিক্রি করে। পরবর্তীতে, কামাল ৪,৩৫,০০০ টাকার বিনিময়ে ছত্তারের কাছে বিক্রি করে। উল্লেখ্য, এ ঘটনার মূলহোতা শফিকুল ইসলাম এর নামে আরো চারটি মামলা রয়েছে। উপরোক্ত ঘটনার মতো যাতে আর কোন ঘটনার না ঘটে সে প্রেক্ষিতে র্যাবের টহল তৎপরতা ও গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত থাকবে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে টাঙ্গাইল জেলার ধানবাড়ি থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীণ।