প্রথম বাংলা – জমকালো ও আনন্দঘন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন হলো “বঙ্গবন্ধু ২য় দক্ষিণ এশিয়া স্যাম্বো চ্যাম্পিয়নশিপ-২০২৩”বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) ঢাকার শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ ইনডোর স্টেডিয়ামে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ প্রতিযোগিতার শুভ উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও বাংলাদেশ স্যাম্বো অ্যান্ড কোরাশ অ্যাসোসিয়েশন এর প্রধান উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম বলেন, খেলাধুলা মানুষের মনকে যেমন প্রফুল্ল রাখে তেমনি পারস্পরিক বন্ধন তৈরি করে। স্যাম্বো একটি নতুন খেলা যার মাধ্যমে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড়দের সাথে একটি ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরি করতে পারবে। এই খেলায় অংশগ্রহণ করে আন্তর্জাতিকভাবেও বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে আনা সম্ভব।
এটি বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় খেলা স্যাম্বো একটি অলিম্পিক ইভেন্ট হওয়ায় এই খেলার মাধ্যমে বাংলাদেশের পতাকা অলিম্পিক তথা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে।আমাদের খেলোয়াড়রা আগামীতে এই খেলার মাধ্যমে অলিম্পিকে দেশের পতাকা মেলে ধরবে এবং জয়ের মুকুট ছিনিয়ে আনবে।
তিনি আরো বলেন, নতুন একটি অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন আমাকে মুগ্ধ করেছে। এটি আন্তর্জাতিক মানের একটি আয়োজন। যে ছয়টি দেশের অ্যাথলেট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে তাদের সকলের প্রতি শুভেচ্ছা রইল। পদক অর্জনকারীদের প্রতি রইল আগাম অভিনন্দন। পরিশেষে, আয়োজকবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে এবং অ্যাসোসিয়েশনের সফলতা কামনা করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সকল ক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আমাদের দেশের খেলোয়াড়দেরও বিভিন্ন খেলায় সক্ষমতা ও পারদর্শিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দেশের খেলোয়াড়রা দেশে-বিদেশে বিভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণ করে পদক অর্জনের পাশাপাশি দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনছে। স্যাম্বো প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অ্যাথলেটগণ তাদের নৈপুণ্য প্রদর্শনের মাধ্যমে জয়ের মুকুট দেশের মাটিতেই রাখবে এই প্রত্যাশা করছি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ডিএমপি’র কল্যাণ ও ফোর্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ও বাংলাদেশ স্যাম্বো ও কুরাশ অ্যাসোসিয়েশন এর সভাপতি আর এম ফয়জুর রহমান পিপিএম। উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে স্বাগত বক্তব্যে স্যাম্বোর ইতিহাস তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন, স্যাম্বো রাশিয়ান মার্শাল আর্ট। ১৬ নভেম্বর ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত ইউনিয়নে স্যাম্বো খেলার আবির্ভাব হয়। IOC কর্তৃক স্বীকৃত গেমস স্যাম্বো। স্যাম্বো, এশিয়ান ইন্ডোর মার্শাল আর্ট গেমস এবং ওয়ার্ল্ড মার্শাল আর্ট অলিম্পিকে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ২০১২ আন্তর্জাতিক স্যাম্বো ফেডারেশন গঠিত হয়। স্যাম্বোর আন্তর্জাতিক সংস্থা হল FIAS, যার প্রেসিডেন্ট ভ্যালিসি শেস্তাকভ।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে স্যাম্বো অলিম্পিক কাউন্সিল অব এশিয়া (OCA) দ্বারা সমর্থিত ৮৫ টি খেলার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির মধ্য দিয়ে এশিয়ান অলিম্পিক গেমসে অন্তর্ভুক্ত হয়। ২০০৬ আন্তর্জাতিক স্যাম্বো ফেডারেশন “ওয়ার্ল্ড অ্যান্টি-ডোপিং এজেন্সি” (WADA) এর ওয়ার্ল্ড অ্যান্টি-ডোপিং কোড গ্রহণ করে। ২০১৮ সালে FIAS আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির অস্থায়ী স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০১৯ সালে বেলারুশের মিনস্কে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ইউরোপীয় গেমসে স্যাম্বো অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ইতোপূর্বে প্রথম দক্ষিণ এশিয়া স্যাম্বো প্রতিযোগিতা ২০১১ সালে নেপালের কাঠমান্ডু-তে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশ স্যাম্বো ও কুরাশ অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে দীর্ঘ ১২ বছর পর বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় দক্ষিণ এশিয়া স্যাম্বো চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৩ বাংলাদেশের ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
উক্ত চ্যাম্পিয়নশিপে সর্বমোট ৫৬টি ওজন ক্যাটাগরিতে ছয়টি দেশের সর্বমোট ১৭২ জন অ্যাথলেট অংশগ্রহণ করবেন। প্রতিযোগিতাটি স্পোর্টস স্যাম্বো, কম্ব্যাট স্যাম্বো, জুনিয়র ও সিনিয়র, নারী ও পুরুষ মিলে মোট ৫৬টি ওজন শ্রেণিতে অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সিনিয়র খেলোয়াড়দের জন্য ৭টি ওজন ক্যাটাগরি স্পোর্টস স্যাম্বো (অ্যাডাল্ট-পুরুষ), ৭টি ওজন ক্যাটাগরি স্পোর্টস স্যাম্বো (অ্যাডাল্ট-নারী), ৭টি ওজন ক্যাটাগরি কমব্যাট স্যাম্বো (অ্যাডাল্ট-পুরুষ), ৭টি ওজন ক্যাটাগরি কমব্যাট স্যাম্বো (অ্যাডাল্ট-নারী) এবং জুনিয়র খেলোয়াড়দের জন্য ৭টি ওজন ক্যাটাগরি স্পোর্টস স্যাম্বো (জুনিয়র-পুরুষ), ৭টি ওজন ক্যাটাগরি স্পোর্টস স্যাম্বো (জুনিয়র-নারী), ৭টি ওজন ক্যাটাগরি কমব্যাট স্যাম্বো (জুনিয়র-পুরুষ), ৭টি ওজন ক্যাটাগরি কমব্যাট স্যাম্বো (জুনিয়র-নারী) রয়েছে। সর্বোচ্চ স্বর্ণপদক প্রাপ্ত দেশ বিজয়ী হিসেবে বিবেচিত হবে।
বাংলাদেশ স্যাম্বো অ্যান্ড কুরাশ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, দক্ষিণ এশিয়া চ্যাম্পিয়নশিপে স্বাগতিক বাংলাদেশ থেকে ৮৪ জন খেলোয়াড় এবং ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা থেকে ৮৮ জন খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করছেন। প্রতিযোগিতাটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও কিরগিজস্তান হতে ৭ জন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা বাংলাদেশে এসেছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইন্টারন্যাশনাল টেকনিক্যাল অফিসার কিরগিজ রিপাবলিক থেকে মি. আলেকজান্ডার ল্যারিনেড ও মি. আর্সেন কামচিকেন্ড; ইন্দোনেশিয়া রিপাবলিক থেকে মি. আর্নল্ড সিলালাহি ও মি. জয়নাল আরিফিন; ডিরেক্টর জেনারেল অব স্যাম্বো ইউনিয়ন অব এশিয়া অ্যান্ড ওশেনিয়া ও হেড অব লিগ্যাল, ইন্টারন্যাশনাল স্যাম্বো ফেডারেশন মি. সুরেশ গোপী; রিজিওনাল ভাইস প্রেসিডেন্ট স্যাম্বো ইউনিয়ন অব এশিয়া এন্ড ওশশেনিয়া ও প্রেসিডেন্ট সাউথ এশিয়া এবং নেপাল স্যাম্বো।ফেডারেশন মি. ধনঞ্জয় শ্রেষ্ঠা, বাংলাদেশ স্যাম্বো অ্যান্ড কুরাশ এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ও ডিএমপির এডিসি (ফোর্স) মোঃ শরিফুল আলম এবং
ডিএমপির এডিসি (কোয়াটার মাস্টার) ওবায়দুর রহমানসহ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের কর্মকর্তাগণ খেলোয়াড় বৃন্দ,ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাগণ,ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।