নূর মোহাম্মদঃ
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব বটতলী গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ আবদুল মান্নান ও আম্বিয়া খাতুন দম্পতি। তাদের পরিবারের সাত মেয়ে। কোন ছেলে না থাকায় মেয়েদের নামে জমি লিখে দিয়েছেন তারা। বৃদ্ধ এ দম্পতির ৫ম মেয়ে অন্য বোনদের চেয়ে বাবা-মার কাছ থেকে অতিরিক্ত জমি হাতিয়ে নিয়েছেন।
বিনিময়ে আমৃত্যু তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানান। কিন্তু জমি লিখে দেওয়ার পর ‘পল্টি’ নিলেন মেয়ে নাজমা আক্তার এবং জামাতা মো. সেলিম।আব্দুল মান্নানের যে বসতঘরটি তৈরি করেছেন, সে ঘর এবং বসতভিটায় জায়গা হচ্ছে না তাদের। ভরণপোষণ তো দূরের কথা উল্টো মা-বাবাকে ভিক্ষা করে খেতে বলছেন পাষন্ড মেয়ে নাজমা আক্তার। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি জেরে মায়ের উপর নির্যাতনও করেছে সেই মেয়ে। ঘর খালি করে অন্যত্র চলে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছে মেয়ে এবং জামাতা।
প্রতিকার চেয়ে বৃদ্ধ এ দম্পতি রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মেয়ে এবং জামাতার বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।এর আগে শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নির্যাতনের শিকার হয়ে উপয়ান্তর না দেখে তারা জরুরি সেবা নাম্বার ৯৯৯ এ কল দিয়েছেন। পরে চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে যায়। রাতে থানা পুলিশকেও লিখিতভাবে জানান আম্বিয়া খাতুন।
৮০ বছর বয়সী আব্দুল মান্নান ও ৭০ বছর বয়সী আম্বিয়া খাতুন কান্নাজড়িত কন্ঠে এসব কথা জানান।বলেন, আমাদের সম্পত্তি, আমাদের ঘর। এখন সে ঘরেই আমাদের জায়গা হবে না। এ কেমন মেয়ে?তারা জানান, তাদের সংসারে কোন ছেলে সন্তান নেই। ৭ মেয়ে, সকলের বিয়ে দিয়েছেন। সব মেয়েকে সাড়ে ৭ শতাংশ করে জমি ভাগ করে লিখে দিয়েছেন। তবে ৫ম মেয়ে নাজমা অন্যদের থেকেও ৯ শতাংশ জমি বেশি হাতিয়ে নিয়েছে। বিনিময়ে তাদের দুজনের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
কিন্তু গত কয়েক মাস আগে জমি লিখে দেওয়ার পর থেকেই তাদের কোন খোঁজ নিচ্ছে না মেয়ে নাজমা ও জামাতা সেলিম। ফলে গত কয়েক মাস থেকে বাধ্য হয়ে অন্য মেয়েদের বাড়ি বাড়ি থাকতে হয়েছে তাদের।শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এক মেয়ের বাড়ি থেকে তারা নিজেদের বসত ঘরে উঠেন। কিন্তু মেয়ে নাজমা তাদেরকে ঘরে উঠতে বাঁধা দেন। বাকী জীবনটা অন্য মেয়েদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে থাকতে বলেন। প্রয়োজনে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে খেতে বলেন বৃদ্ধ মা-বাবাকে।
বৃদ্ধা আম্বিয়া খাতুন বলেন, আমাদের মেয়ে নাজমাকে সেলিমের কাছে বিয়ে দিয়ে তাকে ঘর জামাই হিসেবে রেখে দিই। প্রায় ২০ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই আমাদের সাথে আছে। এতোবছর তাদের ভরণপোষণ আমরা চালাতাম। জামাতা সেলিমকে টাকা খরচ করে বিদেশেও পাঠায়। আমরা এখন বৃদ্ধ হয়ে গেছি। তাই আমাদের দুইজনের নামের সম্পত্তিগুলো সাত মেয়েকে সমান ভাগ করে লিখে দিই।
তবে মেয়ে নাজমা বিভিন্ন কৌশলে আমাদের কাছ থেকে আরও ৯ শতাংশ জমি বেশি লিখে নিয়েছে। জমি লিখে দেওয়ার পর থেকে তারা এখন আর আমাদের কোন খোঁজ খবর নিচ্ছে না। আমার অন্য মেয়েরা আমাদের বাড়িতে আসলেও তাদের খোঁজ নেয়না মেয়ে নাজমা। উল্টো আমার সাথে ঝগড়া বিবাদ করে। শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঝগড়ার এক পর্যায়ে সে আমার ডান হাতে আঘাত করেছে। আমার এক মেয়ের জামাতাকে মারধর করেছে নাজমার স্বামী সেলিম। পরে আমাদের ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলে। নিজের ঘরে এখন আমরা পর হয়ে গেছি।
এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত নাজমা ও সেলিমকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। সেলিমের নাম্বারে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।স্থানীয় ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন বলেন, বৃদ্ধ দম্পতির কাছ থেকে তাদের মেয়ের নাজমা জমি লিখে নেওয়ার পর থেকে এখন আট তাদের খোঁজ নেয়না। বিষয়টি অমানবিক।
চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সুলাইমান বলেন, ৯৯৯ এ কল পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। তবে অভিযুক্ত মেয়ে এবং তার স্বামীকে পাওয়া যায়নি। ভূক্তভোগী বৃদ্ধা নারী লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।