রাশেদুল ইসলাম রিয়াদ জাজিরা (শরীয়তপুর)
পাট-পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা। দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ যেদিকে তাকাই শুধু পেঁয়াজ।এবছর পেঁয়াজের বাম্পার ফলনওহয়েছে ইতোমধ্যেই চাষিরা খেত থেকে পেঁয়াজ তুলতে শুরু করেছেন। আমদানি নির্ভরতা কমাতে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।
জানা যায়,দেশের বেশিরভাগ কৃষক শীতকালীন পেঁয়াজ চাষ করেন। ফলে গ্রীষ্মকাল আসতে আসতে পণ্যটির দাম বেড়ে যায়। বিদেশ থেকে আমদানির পরও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। গত কয়েক বছর ধরে এই অবস্থা চলতে থাকায় কৃষি বিভাগ দেশে গ্রীষ্মকালেও পেঁয়াজ চাষের পদক্ষেপ নিয়েছে। গীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ করে লাখ টাকা আয় করছেন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা। স্বল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় অন্য কৃষকরাও ঝুঁকছেন নতুন গ্রীষ্মকালীন নাসিক এন-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পদ্মা নদীর তীরবর্তী জেলা হওয়ায় এ অঞ্চলের মাটি পেঁয়াজ চাষের উপযোগী। বেলে দোআঁশ মাটিতে উৎপাদনও বেশ ভালো। তবে বাজারে দীর্ঘ সময় পেঁয়াজের তেমন ভালো দাম পাওয়া যায়নি। এতে খরচ তোলাই কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে গত পাঁচ বছর ধরে বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপর থেকে জেলায় পেঁয়াজের আবাদ বেড়ে যায়।
উপজেলার রুব্বাবুর হাট ফেদুল্লা বেপারী কান্দি গ্রামের কৃষক মিজান জাতীয় দৈনিক মুক্তিযুদ্ধ ৭১ সংবাদ পত্রিকা কে বলেন, এবার ১০ কাঠা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। এবারও পেঁয়াজের ভালো ফলন হয়েছে একেকটি পেঁয়াজের ওজন ২০০ গ্রামের বেশি। আমার ১০ কাঠা জমিতে পেঁয়াজ চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ১২ হাজার টাকা। এখন এককেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৭০- ৮০ টাকা তাতে খরচ বাদ দিয়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভ হবে।
পেঁয়াজ চাষি হাবিব মাদবর জাতীয় দৈনিক মুক্তিযুদ্ধ ৭১ সংবাদ পত্রিকা কে বলেন, আমি এবার অন্য বছরের তুলানায় বেশি পেঁয়াজ লাগিয়েছি। পেঁয়াজ চাষ থেকে দুইভাবে টাকা আসে। প্রথম ধাপে কলি বিক্রি করি, পরে আবার পেঁয়াজ বিক্রি করি। এছাড়া একই জমিতে পেঁয়াজ ওঠানোর পর গম চাষ করা হবে। সবমিলিয়ে কয়েকবছর ধরে ভালো লাভ হচ্ছে।
একই এলাকার পেঁয়াজ চাষি মোসারফ বেপারী বলেন, গত বছর থেকে অন্য ফসলের তুলানায় পেঁয়াজ চাষ বেশি করছি। বৃষ্টির জন্য কিছু চারা মারা গেছে তবে পেঁয়াজের ভালো ফলন হয়েছে। একেকটি পেঁয়াজ ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম ওজন হয়েছে। বাজারে বর্তমান পেঁয়াজের দাম ভালো পাচ্ছি।
কাজিরহাট কাচা বাজারের আড়তদাররা জানান, কৃষকদের কাছ থেকে পেঁয়াজ কিনে আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে থাকি। এতে আমরাও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছি।
জাজিরা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা বিথী রানী বিশ্বাস বলেন, পেঁয়াজ চাষে কৃষকদের বীজ, সারসহ প্রয়োজীয় প্রনোদনা প্রদান এবং প্রযুক্তির ব্যবহার ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তারা আমাদের পরামর্শ মেনে চলায় ফলন ভালো হয়েছে। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় চাষিরা পোঁয়জ চাষ করে এবার লাভবান হবেন।
শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক আবুল হোসেন মিয়া বলেন, গত কয়েকবছর ধরে বাজারদর ভালো থাকায় আমাদের চাষিরা পেঁয়াজ আবাদের দিকে মনোযোগী হয়েছেন। জেলায় এখন চাহিদার চেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পর বাকি পেঁয়াজ আশপাশের জেলায় বিক্রি করা হয়। উৎপাদন বৃদ্ধি করতে আমরা সবসময় কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি।