প্রথম বাংলা-মেহেরপুরের তিনটি উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে দলিল সম্পাদন ও নকল দলিলে জেলারেজি স্ট্রার (ডিআর) সাইফুল ইসলামের বছরে বাড়তি আয় প্রায় অর্ধকোটি টাকা। অতিরিক্ত এ টাকা না দিলেই অফিসের স্টাফ ও দলিল লেখকদের করেন হয়রানি।দলিল সম্পাদন থেকেই শুধু নয়,কাজীদের লাইসেন্স নবায়ন,দলিল লেখক দের লাইসেন্স নবায়ন,স্টাফদের বদলি বাণিজ্য,নকলনবিশ থেকে অফিস স্টাফদের চাকরি স্থায়ীকরণ ও উপজেলা অফিস নিরীক্ষাতেও নেন মোটা অংকের টাকা।তার কথাম তো কাজ না করলে দেওয়া হয় বদলির হুমকিও এছাড়াও মাসের অধিকাংশ দিন তিনি অফিস করেন না বলেও অভি যোগ রয়েছে। অফিস পরিদর্শনে গিয়ে না পেলে জানানো হয় তিনি ছুটিতে আছেন।
জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় তিনি অফি সে নেই। তার অফিসের টিসি সহকারী খাইরুল ইসলাম একটি চিঠি দেখিয়ে জানান ডিআর শ্রান্তি বিনোদনের ১৫ দিনের ছুটিতে আছেন। তবে কয়েক মাস আগেও তিনি শ্রান্তি বিনোদনের ছুটি কাটিয়েছেন বলে জানান তিনি।
জেলা রেজিস্ট্রার অফিসের তথ্য মতে, ২০২৩ সালেমেহের পুর সদর, মুজিবনগর ও গাংনী সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে নতুন দলিল সম্পাদন হয়েছে ২০ হাজার ২৪৫টি।এরমধ্যে জানুয়ারিতে ১৮৮৯,ফেব্রুয়ারিতে ১৪১৯,মার্চে ২১৭০,এপ্রি লে ৯৯৬,মে মাসে ২২৫০,জুনে ১৮৩৮,জুলাইয়ে ১৮৮৯, আগস্টে ১৯৭৬,সেপ্টেম্বরে ১৫৪৬,অক্টোবরে ১৪৬৯,নভে ম্বরে ১৪২২,ডিসেম্বরে ১৩৮১টি দলিল সম্পাদিত হয়েছে।
চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ঐ তিন সাব রেজিস্ট্রিঅফি সে নতুন দলিল সম্পাদন হয়েছে ৬ হাজার ৩৮৫ টাকা। এরমধ্যে জানুয়ারিতে ১৮৪০, ফেব্রুয়ারিতে ১৪৭৯, মার্চে ১৮৩৪ ও এপ্রিলে ১২৩২টি দলিল সম্পাদন হয়েছে। সে হিসেবে গড়ে এ বছরও ২০ হাজার দলিল সম্পাদন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।চলতি বছর এ দলিল সম্পাদন করতে জেলা রেজিস্ট্রার সাইফুল ইসলামকে দলিল প্রতি দিতে হচ্ছে ২০০ টাকা।তবে একটি সূত্রে জানা গেছে,জেলারেজি স্ট্রার এই টাকার মধ্যে কিছু অংশ তার অধীনস্থ স্টাফদের মাঝে বিতরণও করেন।
দলিল লেখকরা জানান,২০২৩ সালে তিনি দলিল প্রতি ১০ ০ টাকা করে নিলেও ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস থেকে তিনি দলিল প্রতি ২০০ টাকা করে নিচ্ছেন। আর এ টাকা দিতে অপরাগত প্রকাশ করলে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মচারী ও দলিল লেখকদের ওপর নেমে আসে নানা নির্যাতন ও হয়রানি।এছাড়া ২০২৩ সালে সার্টিফাইড নকল সরবরাহ করা হয়েছে ১৪৭৯২টি এবং ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সার্টিফাইড নকল সরবরাহ করা হয়েছে ৪৮৩৪টি। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি নকল সরবরাহের জন্য জেলা মহাফেজখানা থেকে ২৫০ টাকা করে নিয়ে থাকেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গাংনী সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কয়েকজন দলিল লেখক জানান, গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলা-রেজিস্ট্রারের খাতে দলিল প্রতি ১০০ টাকা করে দি তে হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সাল থেকে তিনি ২০০ টাকা করে আদায় করছেন টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই নানা অডি ট ওপরিদর্শনের ভয় দেখান।
মেহেরপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস ও মুজিবনগর সাব -রেজিস্ট্রার অফিসের কয়েকজন দলিল লেখকের সঙ্গে ক থা বলা হলেও তারাও পরিচয় দিয়ে কথা বলতে রাজিহননি কর্মকর্তাদের ভয়ে। তারা বলেন,গত বছর দলিল প্রতি ১০০ টাকা করে নিলেও এবছর ২০০ টাকা জোর করে নেয়াহচ্ছে ফলে জমি ক্রেতাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
জেলা রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে গাংনী সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যা লয়ে মাঝে মধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলিল লেখকরা। এ নিয়ে গত কয়েকমাসে কয়েকদফা মিটিং হয়েছে বলেও জানা গেছে।গাংনী সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের এক কর্মচা রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ডিআর স্যারের জন্য দলিল প্রতি ২০০ টাকা করে তুলে দিতে বলেন, না দিলে অন্যত্র বদলি করার হুমকি দেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা ছোট চাকরি করি,স্যারদেরকথা মতো আমাদের চলতে হয় এর বেশি কিছু বলতে পারবো না।গাংনী সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন পিন্টু বলেন,ডিআ র স্যারের কথা বলতে পারবো না,তবে ঐ অফিসের কিছু স্টাফ দলিল প্রতি ২০০ টাকা করে আদায় করার জন্য চাপ দেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে অডিটের নামে হয়রা নি শুরু করেন। এসব ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকার জন্য বাধ্য হয়ে টাকা দেন মুহুরিরা।
জেলা রেজিস্ট্রার সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যম কে বলেন, আমার নামে অফিস থেকে কোনো ধরনের টাকা তোলার অনুমতি কাউকে দেওয়া হয়নি। যদি আমার নামে কোনো স্টাফ এটা করে থাকেন, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া অন্যান্য অভিযোগের বিষয়গুলো অস্বীকার করেন তিনি। তবে অফিসে কম থাকেন বিষয়টি আংশিক স্বীকার করেছেন তিনি।
অপরদিকে ময়মনসিংহের বিভাগের শেরপুর,নেত্রকোনা, জামালপুর ঢাকা বিভাগের টাংগাইল,কিশোরগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার অফিস সমুহে চলছে এ ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি।