সুলতানা রাজিয়া সান্ধ্য কবিঃ
মুক্তিযুদ্ধ ৭১ সংবাদ পত্রিকা সিনিয়র রিপোর্টার।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও টাকার অভাবে পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম আতিক হাসানের।
তীরে এসে তরী ডোবার মতো অবস্থা। মেধাবী শিক্ষার্থী আতিক হাসানের ছোট বেলা থেকে অভাবের সাথে যুদ্ধ করে তিনি এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে স্নাতক সমমান প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি হলেও উচ্চ শিক্ষার ব্যয় কিভাবে মিটবে সে দুচিন্তায় তারা করে ফিরছে তাকে।বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার প্রতিমাসে যে পরিমাণ টাকা প্রয়োজন ;তা তার দিন মজুর বাবার পক্ষে যোগান দেওয়া অসম্ভব টাকার অভাবে তার পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
সমাজের হৃদয়বান বা বা কোনো সংস্থার সহযোগীতায় আরো এগিয়ে যেতে চান; আতিক কি পারবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে।
এ জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
আতিকের সপ্ন ছিল একদিন দেশের বড় অর্থনীতিবিদ হবেন।
এখন তার এ সপ্ন ফিকে হয়ে এসেছে।
আতিক হাসান কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার অনন্তপুর মন্ডল পাড়ার বাসিন্দা।
বাবা দিন মজুর আব্দুল জলিল এবং মা গৃহনী গোলেনুর বেগমের কনিষ্ঠ পূত্র।
জলিল- গোলেনূর দম্পতির দুই ছেলের মধ্যে সে ছোট।
বড় ছেলে নূর আলম কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
আতিক হাসান উপজেলার গংগারহাট এম এ এস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি ও কাশিপুর ডিগ্রী কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে এইচ এস সি, পাশ করে এ বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক (কে ইউনিট) বিভাগের মেধা তালিকায় তার অবস্থান ছিল।
৮৩ তম গুচ্ছ পরীক্ষায় (৬০ দশমিক ২৫) আতিক হাসান জানান,
আমরা দুভাই। ছোট বেলা থেকে বাবার সাথে দিন মজুরের কাজ করে ও নীচের শ্রেনীর ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়িয়ে সংসারে সাহার্য্য করে পড়াশোনা চালিয়েছি।
ধারদেনা করে ও প্রতিবেশীদের সহায়তায় রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি।
১লা অক্টোবর থেকে ক্লাশ শুরু হয়েছে।
টাকার অভাবে ক্লাশের যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে পাচ্ছিনা। বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়ার মত এত টাকা কিভাবে যোগার করবো ভেবে কূল পাচ্ছিনা। আমার চিন্তায় মা-বাবা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন।
আতিক হাসানের বাবা আব্দুল জলিল জানান, তার মা -বাবা, (স্ত্রী,) সন্তান সহ ৬ জনের পরিবার।
বাবা হাঁপানী রোগী।
মা ব্যথায় নড়াচড়া করতে পারে না। স্ত্রী উচ্চ রক্তচাপ সহ নানা রোগে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
জমা-জমি তো দুরের কথা, থাকার জায়গা নেই।
স্থানীয় এক চাচার ভিটার পরিত্যক্ত জায়গায় ঘর তুলে কোনো মতে বসবাস করছি।পরিবারের ৬জনের দৈনন্দিন খাবারের যোগান দিতে এলাকা ছেড়ে বছরের প্রায় ৬মাস নোয়াখালী, মুন্সীগঞ্জ, সিলেটসহ নানা জায়গায় গিয়ে ক্ষেতের দিনমুজুরী খেটে চলতে হয়।
এখন ছেলেকে পড়াবো কেমন করে।আতিক হাসানের মা গোলেনুর বেগম বলেন,ছেলে দুটোকে পড়াতে চরম আর্থিক সংকটে ভুগছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলেও পড়াশোনা করানো আমাদের পক্ষে অসম্ভব।আতিক হাসানের দাদা জয়েন উদ্দীন বলেন, ছেলেকে পড়াতে করতে পারিনি কিন্তু নাতী দুটো আমার সেই আশা পূরণের অর্ধেক পথ পেরিয়েছে সমাজের হৃদয়বান ব্যক্তিরা এগিয়ে আসলে বাকি পথটুকু পেরিয়ে যাওয়া সম্ভব।উপজেলার গংগারহাট এম, এ, এস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হামিদুল ইসলাম বলেন, আতিক হাসান এ বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ছিল। আর্থিক সংকট থাকলেও পড়াশোনায় তার আগ্রহের কমতি ছিলনা।
তার হতদরিদ্র পিতার অবস্থা জেনে আমরাও চেষ্টা করছি তাকে সাহার্য্য সহযোগিতা করছি।আশা করছি সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায়ে অনেক ভাল করে তার সপ্ন পূরণ করবে।
কাশিপুর ডিগ্রীকলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ হেল বাকী- বলেন,আতিক হাসান এ কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে ভালো ফলাফল করতে সক্ষম হয়েছে।সে দারিদ্রের কাছে হার মানেনি।
সহযোগিতা পেলে বিশেববিদ্যালয় পর্যায়ে আরো ভালো ফলাফল করতে সক্ষম হবে।
আতিক হাসানের প্রতিবেশী মোশারফ হোসেন ও কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন বলেন, আব্দুল জলিলের দুইটা ছেলেই মেধাবী বিনয় এবং সৎ , বর্তমান সময়ে এ রকম ছেলে পাওয়া খুবই দুষ্কর।বড় ছেলেটাকে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে ভর্তিতে আমরা সহযোগীতা করেছি।এখন আতিককে নিয়ে সমস্যা। তার দিন মজুর পিতার পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ যোগানো অসম্ভব।আমরা সমাজের দানশীল এবং বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানাই,
তাহলে তার জীবনের লালিত সপ্ন পূরণ হবে।