সুলতানা রাজিয়া সান্ধ্য কবি:
দৈনিক মুক্তিযুদ্ধ ৭১ সংবাদ পত্রিকা: সিনিয়র রিপোর্টার।নির্বাচনে হেরে গিয়েও জনতার মন কেড়ে নিলেন চানাচুর বিক্রেতার ছেলে হিরো আলম। হেরে গিয়েছেন নাকি তাকে হেরে দেয়া হয়েছে।জীবনে গায়ে রং বা শিক্ষাগত যোগ্যতা শুধু যে মাপকাটি নয় তা প্রমাণ করে গেলেন হিরো আলম।জীবনে কঠোর পরিশ্রমতা বা কঠোর ইচ্ছা শক্তি থাকলে সাফল্যের সিঁড়িতে পৌঁছাবে তা জলন্ত উদাহরণ হিরো আলম।কবি বলেছেন জীবনে তুমি এমন সপ্ন দেখ তা পূরণ হওয়ার পর হাজার মানুষ দেখার পর মানুষ সেই সপ্ন দেখার ইচ্ছা পোষণ করবে।টাকা পয়সা খ্যাতি প্রভাব বা রুপ কিছুই ছিলনা তাঁর।একটি নিম্নবিত্ত পরিবারের লোক। ছোটবেলা একবেলা খেতে পারলেও দু’বেলা না খেয়েও থাকতে হয়েছে। বাবা চানাচুর বিক্রি করে ঘরে ফিরে এসে মায়ের সাথে ঝগরা করা ছিল বাবার নিত্য দিনের কাজ।
ক্লাশ থ্রি কিংবা ফোরে থাকা অবস্থায় একটি বৃষ্টি চাদর ঢাকা এক রাতে হিরো আলমের মা’কে ছেলে সহ ঘর থেকে বের করে দেয় তাঁর বাবা।সেই রাতে হিরো আলম মায়ের সাথে চলে আসে নানা বাড়িতে। এখানে তার শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটে।তারপর ক্যাসেটের দোকান দিয়ে তাঁর পরিবার চালিয়েছে।কিন্তু তাঁর সপ্ন ছিল অনেক বড় আকাশ কুসুম কল্পনা।সিনেমায় অভিনয় করা ছিল তাঁর সপ্ন।
সিনেমায় কাজ করা যত পরিচালকের কাছে গিয়েছে ততজনে তাকে অপমান তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে বিদায় দিয়েছে।অথচ দেখুন তিনি দমে যাননি।
নিজের সপ্ন পূরণ করতে কোন কমতি রাখে নাই।
একটা বিপরিত পরিবেশে একাই লড়াই করে এবং বলা যায় সফল হয়েছে। আজ হয় আপনি ঘৃণা করতে পারেন মূর্খ বলে গালি মন্দ করতে পারেন। যিনি অভিনয় থেকে শুরু করে গান করা কবিতা নির্বাচন করেছে, তাকে নিয়ে ইন্টারনেট জগতে হাসি ঠাট্টা ও মজাও করেছে।
তাঁর চেহারা দেখতে কালো,শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই ,নিজের মনের জিরো ইচ্ছা এবং কঠোর পরিশ্রম করে সাফল্য এনে দিয়েছে তাকে। প্রথম থেকে নিজের গ্রাম এরুলিয়ায় সিটিবিক্রির কাজ করতেন এবং পরবর্তিতে স্যাটলাইট টিভি সংযোগ ক্যাবল পরিচালনার ব্যবসা করছেন। ক্যাবল সংযোগের ব্যবসার পাশাপাশি সখের বশে সংগীত ভিডিও নির্মাণ শুরু করেন। তাঁর অভিনিত ছবি”মারছক্কা” মুক্তি পায় ১১ আগস্ট ২০১৭ সালে বেশ কিছু বিজ্ঞাপন চিত্র সল্পদীর্ঘ চলচিত্র অভিনয় করেছেন।
২০১৮ সালে তিনি বিজতা হিরো নামে একটি বলি উড চলচিত্র সিনেমা নামে চুক্তিবদ্ধ হন।হিরোর দ্বিতীয় সিনেমা সাহসী হিরো আলম।১৬অক্টোবর ২০২০ সালে মুক্তি পায়। সাহসী হিরো আলম পরিচা লনা করেছেন,এ আর মুকুল নেত্রবাদী এবং প্রযোজ না করেছে হিরো আলম নিজেই।হিরো আলমের বিপরীত অভিনয় করেছেন তিন নায়িকা নুসরাত জাহান,শাকিরা মৌ,এবং রাবীনা বৃষ্টি।হিরো আলম একাদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে বগুড়া ৪ আসন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়ন পত্র কিনেন।তিনি দল থেকে মনোনয়ন না পাবার পর বগুড়া ৪আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।ট
তিনি নির্বাচনী পান ৬৩৮ ভোট এবং মোট প্রতত্ত্ব ভোটে একঅষ্ট অংশ ভোট না পাওয়ায় তাঁর জামানত বাজে আপ্ত হয়।তিনি ২০১৯ সালের মে, মাসের জাতীয় পার্টির সাংস্কৃতিক অঙ্গসংগঠন জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টি কেন্দ্র কমিটির সহ সাংগাঠনিক সম্পাদক হিসাবে যোগদেন।তাঁর পর আবার ২০২৩ সালে উপনির্বাচনে অংশ নেন হিরো।ভোটের আগে তিনি দাবি করেছিলেন এবার তাঁর জয় হবে সুনিশ্চিত।অন্যদের চেয়ে সংসদে গিয়ে ভাল কাজ করবেনা তিনি এবং এবারও তার জয়ের আশা পূর্ণ হলনা।
দুটি আসনেই হেরে গেলেন হিরো।২০১৮ সালে নির্বাচনে তিনি লড়াই করেন নির্দলীয় প্রার্থী হিসাবে। বুধবার ১লা ফেব্রুয়ারি বগুড়া ৪ কাহালু নন্দিগ্রামে বগুড়া ৬, সদর আসনে উপ নির্বাচনে ভোট গ্রহন করা হয়।সাড়ে চারটা পর্যন্ত ভোট নেয়ার পর গণনা করা হয় ভোট।বগুড়ার জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন ,দুটি কেন্দ্রেই পরাজয় হয়েছেন হিরো আলম। হিরো বগুড়া ৬আসনে গোলযোগ হবে বলে তিনিট আগে আশঙ্খা করেছেন তার আশঙ্খায়ন সত্য হয়েছে।
তার অভিযোগ এখানে তার নির্বাচনী এজেন্টদের ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।তবে সুষ্ঠ ভোট হলে তিনি বিজয় হতেন।মানুষের মনে বিশ্বাস ফেরানোর লক্ষ্য বগুড়ার ২টি আসনে লড়েন হিরো আলম।হিরো বাড়ি বগুড়ার এরুলিয়া পলিপাড়া গ্রামে।সকালে এরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি।সেখানে তাকে ঘিরে উচ্ছ্বাস ছিল এখানে তিনি চেয়েছিলেন জাতীয় পার্টি হয়ে নির্বাচনে লড়াই করতে কিন্তু তাকে প্রার্থী করতে চায়নি জাতীয় পার্টি।তাই নির্দলীয় হিসাবে মনোনয়ন পত্র জমা দেন তিনি।দুটি আসনেই তার মনোনয়ন বাতিল করা হয় এবং প্রতিবাদ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনও গিয়েছেন তিনি।সেখানেও একটি নির্দ্দেশ দেয়া হয়, পরে আদালতে গিয়েছিলেন হিরো।আদালতে নির্দেশ পেয়ে তিনি প্রার্থী হতে পারবেন।
এবার একতারা প্রতীক নিয়ে লড়াই করেন তিনি।
তবে শুধু মাত্র হিরো আলম নন,ভোট কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বেরা করে দেয়া হয় বলে দাবি করেন আরো দু’জন প্রার্থী।বগুড়া ৬আসনে নির্দলীয় প্রার্থী জেলা সচেতন কমিটির নাগরিক কমিটির সভাপতি মামুদা রহমানকে অভিযোগ করেন শহরের মিশন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টকে বের করে দেয়া হয়েছে।তাদের অভিযোগ আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে।যদিও অভিযোগ উড়িয়ে দেন বগুড়া জেলার আওয়ামীলীগের সভাপতি মুজিবুর রহমানের তাঁর দাবি সেখানে সুষ্ঠ নির্বাচন হয়েছে।
হিরো আলম ২০১৯ সালে ২১শের বই মেলায় তাঁর আত্ম জীবনী “দৃষ্টি ভঙ্গি বদলান” আমরা সমাজকে বদলে দিব প্রকাশিত বইটি সম্পাদন শোরুম আলম সাবিদ,হিরো আলম তার ব্যক্তিগত জীবনে সাবিয়া আক্তার সুমীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
এ দম্পতির একটি ছেলে কবির, আলো ও আখি নামে দুটি মেয়ে রয়েছে।স্ত্রীর নির্যাতনে অভিযোগ ২০১৯ সালের মার্চে তিনি এক মামলায় গ্রেপতার হন।পরবর্তিতে এপ্রিল মাসের জামিনে মুক্তি পান।
কিন্তু দুর্ভাগ্য হিরো আলমকে নিয়ে অনেকে সোসাল মিডিয়ায় হাসি ঠাট্টা এবং বিদ্রুপ করতেন যা সংখ্যা শিক্ষিত সমাজের লক্ষণ নয়। কারণ মানুষের রং এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা সাফল্যের মাপকাটি হতে পারেনা।