নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
আজ ১২ রবিউল আওয়াল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব হযরত মোহাম্মদ (সা;) এর পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী।যিনি প্রথম এ পৃথিবীতে শান্তি, সাম্য আর ভাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনিই প্রথম ধনী, গরীব, শ্রেনী, গোত্র আর বর্ণ বৈষম্য দুর করে সবাইকে এক কাতারে সামিল করেন।
তিনিই প্রথম স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির উপর নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন, নারীর অর্থিক নিরাপত্তার জন্য মোহরানা আর নারীর ভরণ পোষনের দায়িত্বটা দেন পুরুষকে ।আর মা কে দেন মানুষের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট আসন।তিনি ঘোষনা দেন, বাবার চেয়ে মা উত্তম, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত। প্রাচ্য পন্ডিত গিব তাঁর “মুহাম্মডেনিজম” শীর্ষক ইংরেজি গ্রন্থে বলেছেন, “আজ এটা এক বিশ্বজনীন সত্য যে, মুহাম্মদ নারীদেরকে উচ্চতর মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন।”
প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ এডওয়ার্ড গিবন বলেন, আশ্রয় প্রার্থীর জন্য বিশ্বস্ততম রক্ষাকারী ছিলেন মুহাম্মদ (সা.)। কথাবার্তায় সবচেয়ে মিষ্টভাষী ও সবচেয়ে মনোজ্ঞ। তাকে যারা দেখেছেন তারা আবেগাপ্লুত হয়েছেন। যারা কাছে এসেছেন, তারাও তাঁকে ভালবেসেছেন। পরে তারা বিবরণ দিয়েছেন তাঁর মত মহামানব আগে কখনো দেখিনি পরেও না। মুহাম্মদ (সা.) এর স্মৃতিশক্তি ছিল গভীর, তাঁর রসিকতাও ছিল শালীন।
তাঁর কল্পনা ছিল উন্নত ও মহৎ। তাঁর বিচার বুদ্ধি ছিল তীক্ষ। জাগতিক শক্তির সর্বোচ্চ শিখরে পৌছেও মুহাম্মদ (সা.) নিজগৃহের কাজগুলোও করতেন। তিনি আগুণ জ্বালাতেন, ঘর ঝাড় দিতেন, দুগ্ধ দোহন করতেন এবং নিজ হাতে কাপড় সেলাই করতেন। তাঁর আনীত ধর্ম বিধান সর্বলোকের জন্য প্রযোজ্য।
প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও মার্কিন মুল্লুকে অধ্যাপনায় প্রশংসিত প্রফেসর ফিলিপ কে হিট্রি মহানবী সম্পর্কে বলেছেন, “মুহাম্মদ তাঁর স্বল্প পরিসর জীবনে অনুল্লেখযোগ্য জাতির মধ্য হতে এমন একটি জাতি ও ধর্মের গোড়াপত্তন করলেন যার ভৌগোলিক প্রভাব খ্রীষ্টান ও ইহুদীদেরকেও অতিক্রম করলো। মানব জাতির বিপুল অংশ আজও তাঁর অনুসারী। অমায়িক ব্যবহার, অনুপম ভদ্রতা ও মহৎ শিক্ষার দ্বারা তিনি আরব জাতির অবস্থার পরিবর্তন ঘটান।
মহত্ত্ব, সহানুভূতি ও বদান্যতার মাধ্যমে তিনি মানুষের হৃদয় জয় করেন। তিনি ন্যায়ের রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি কখনো ন্যায়-নীতি ও পূণ্যতার পথ পরিহার করেন নি। তিনি ওয়াদা খেলাপ করেন নি বা কাউকে প্রতারিত করেন নি। এমনকি তাঁর আজীবন শত্রু, যারা তাঁকে দেশ হতে বের করে দিয়েছিল এবং সমগ্র আরব জাতিকে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছিল চুড়ান্ত বিজয়ে তিনি প্রতিশোধ নেয়ার পরিবর্তে তাদেরকে ক্ষমা করে দেন।
ব্যক্তিগত আক্রোশে তিনি কখনো কাউকে শাস্তি দেন নাই। সমগ্র দেশের শাসনকর্তা হয়েও তিনি পূর্বের মতই দারিদ্রপূর্ণ জীবন-যাপন করতেন। যার ফলে মৃত্যুকালে তাঁর ওয়ারিশদের জন্য কিছুই রেখে যাননি।”
ইউরোপের প্রখ্যাত দার্শনিক-সাহিত্যিক জর্জ বার্ণার্ড শ’ (১৮৫৬-১৯৫০) মহানবী (স.) সম্পর্কে বলেন, “আমি মুহাম্মদকে অধ্যয়ন করেছি। আমার বিশ্বাস-তাঁকে মানব জাতির ত্রান কর্তা বলাই কর্তব্য। যদি তাঁর মত কোন ব্যক্তি আধুনিক জগতের একনায়কত্ব গ্রহণ করতেন তবে তিনি এর সমস্যাগুলো এরূপভাবে সমাধান করতে পারতেন যাতে বহু অনাকাঙ্খিত শান্তি ও সুখ অর্জিত হতো।
সুতরাং সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ আর মানুষ হত্যার পথ পরিহার করে সত্যিকার অর্থে মহানবীর আদার্শকে লালন করুন।তবেই অশান্তির অন্ধকার দুর হবে । শান্তির সূর্য উদিত হবে।আর মনে রাখতে হবে ISLAM= I Shall Love All Mankind। আর এটাই হোক পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর শপথ।