স্টাফ রিপোর্টার বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় আব্দুল্লাহ আল মামুনকে ওসিএলএসডি পদে দায়িত্ব দেয়া হলে চাউল চুরিসহ নানা কিসেমের অপরাধ করে।ও উপরস্থ কর্মকর্তাদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে।
তার অপরাধের রাস্তা বেড়েই চলছে। মামুনের চাউল চুরির সিন্ডেকেটের সাথে জড়িত রয়েছে জেলা উপজেলার কর্মকর্তারাও।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১০ সালে মামুন প্রথম খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব গ্রগন করেন। দায়িত্ব গ্রহনের পর ২০১১ সালে পটুয়াখালী সদর খাদ্য গুদামে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন পান। গোডাউনে দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকেই বিভিন্ন রকমের অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পরেন।
ট্রলার যোগে ২০ মেট্রিকটন গম পাচার কালে তৎকালীন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুল হক ও পটুয়াখালী পুলিশ তাকে গমসহ হাতে নাতে ধরে ফেলে। সিন্ডেকেট কর্মকর্তাদের তদবিরে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেন তিনি।
পরবর্তীতে তাকে খেবুপাড়া খাদ্য গুদামে ওসিএল এসডি হিসেবে বদলি করা হলে, গুদামের চাউল চুরির ঘটনা কেন্দ্র করে শ্রমিকদের সাথে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলে শ্রমিকদের হাতে গণধোলার শিকার হয়।
তৎকালীন আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আমজাদ হোসেনকে ম্যানেজ করে এক রাতের মধ্যেই খেবুপাড়া খাদ্য গুদাম থেকে বরিশাল সদর খাদ্য গুদামে ওসিএলএসডি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়।রাত ৮ টায় পদায়ন হয় সকাল ৬ টার মধ্যে দায়িত্বগ্রহণ করেন।
এ বিষয়টি নিয়ে তখন খাদ্য বিভাগে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। কিছুদদিন পরেই ২০ টন চাউল পাচার কালে বরিশাল র্যাবের হাতে ধরা পরলেও নিরাপত্তা প্রহরীর ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিয়ে কৌশলে এড়িয়ে যায়। ঐ বিষয়ে আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও ফৌজদারি মামলা হয়।
বিভাগীয় মামলা তাকে তিরস্কার দণ্ড দেয়া হয়। একের পর এক অপরাধ করে রেহাই পেয়ে লাগামহীন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তৎকালীন আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজা মোহাম্মদ মোহসিনের ছত্রছায়ায় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে। বরগুনা সদর খাদ্য গুদামে পোস্টিং দেয়া হয়।
বরগুনা তার নিজ জেলা হওয়ায় বেনামে রাইস মিল গড়ে তুলেন। ঐ মিল গুলোর নামে বিভিন্ন ডিও এর সাথে সংযুক্ত করে তার মিলের তৈরি নিন্ম মানের চাউল গোডাউনে দেয়া হত। চাউল চুরির আরো বৃদ্ধি করতে গোডাউনের কিছু শ্রমিক ও নিরাপত্তা প্রহরী সাথে নিয়ে ভয়ঙ্কর একটি বোংগাবাহীনি নিয়ে চাউল চুরির রাজ্যে পরিণত করে।
২০২০ সালের (৮ জুন) সোমবার গভীর রাতে বরগুনা খাদ্য গুদাম থেকে চাউলের বস্তায় পাইপ ঢুকিয়ে চাল চুরি করতে থাকে। ঐ রাতেই গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালিয়ে আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ ৭ জনকে গোডাউন থেকে চাল চুরির সময় গ্রেফতার করে পুলিশ। পরের দিন মঙ্গলবার (৯ জুন) বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
ঐ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫৯৪ কেজি চাল, ১টি চার্জার লাইট, ৩টি লোহার হুক, সুই ও প্রায় আধা কেজি সুতা উদ্ধার করা হয়। ঐ ঘটনায় তখন বরগুনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাকির হোসেন তালুকদার বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। চাউল চুরির মামলায় দীর্ঘ তিন মাস জেল খেটে বের হয় মামুন। মামলাটি পরে বরগুনা থানা থেকে দুদকে হস্তান্তর করা হয়।
ঐ ঘটনায় আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় একটি মামলা হয়। মামলাটি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তদন্ত কমিটির মাধ্যমে গোডাউন পরিদর্শন করালে চালের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ টাকার বিনিময়ে বিচারের নামে প্রহসন করে ব্যক্তিগত শুনানির মাধ্যমে মামুন কে নামেমাত্র লঘুদন্ড দেয়।
বর্তমানে দুদকে মামলাটি চলমান রয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে আব্দুল্লাহ আল মামুন মির্জাগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। সেখানেও অভিযোগ রয়েছে নিজের ইচ্ছে মত অফিস করেন।
গুঞ্জন উঠেছে মামুন চাউল চুরির সিন্ডেকেট তৈরি করে কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে বিভিন্ন মহলের তদবিরের জন্য দৌড়ঝাঁপ দিচ্ছে। নতুন করে নীলনকশা নিয়ে মাঠে নেমেছে মামুন। পটুয়াখালী সদর অথবা গলাচিপা খাদ্য গুদামে ওসিএলএসডি হতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
আব্দুল্লাহ আল মামুনের এমন কর্মকাণ্ডে খাদ্য বিভাগসহ জনসাধারণের মাঝেও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। একজন চিহ্নিত চাল চোর খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা মামুন বিভিন্ন দুর্নীতি ও অপকর্ম করেও রেহাই পেয়ে যাচ্ছে। আবারো যদি ওসিএলএসডি হিসেবে দায়িত্ব পায় তাহলে আবারো মামুন গরিবের পেটে লাথি দিয়ে চাউল চুরির মহা উৎসবে মেতে উঠবে।
সুত্রের দাবি, অসাধু ওই কর্মকর্তা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ফের ওসিএলএসডি হিসেবে যোগদানের জন্য আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে।