সুলতানা রাজিয়া (সান্ধ্য কবি) মুক্তিযুদ্ধ ৭১ সংবাদ : নির্বাহী সম্পাদক।
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে কামাত আঙ্গারীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো: সাইদুর রহমান এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ঘুষ দিতে গিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসের মাধ্যমে জানা যায় যে ২৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে ৩:৪৪ মিনিটের সময় স্যার অফিস থেকে বের হবে এই মুহূর্তে স্যারের রুমে প্রবেশ করে কামাত আঙ্গারিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মোহাম্মদ সাইদুর রহমান।প্রবেশ করে উক্ত কামাত আঙ্গারীয়া দাখিল মাদ্রাসার বিগত দিনের দুর্নীতি,অনিয়ম, নিয়োগ বাণিজ্য,মাদ্রাসার শিক্ষক কর্মচারী হয়রানির সুপারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ঢাকতে গিয়ে আমাদের স্যারকে তার পকেট থেকে টাকার একটি বান্ডিল স্যারের টেবিলে রাখে।স্যার এটি দেখে প্রচন্ড ভাবে উত্তেজিত হয়ে চিল্লা চিল্লি করে এবং আমাদের ডাকে।আমরা চিল্লা চিল্লি শুনে স্যারের রুমে প্রবেশ করার পূর্বেই সুপার টাকা বান্ডিল নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়।পরে স্যার ঘটনার বিষয়ে আমাদেরকে অবহিত করে তাকে তাৎক্ষণিক আটকের নির্দেশ দেয়। কিন্তু ততক্ষণে সে আমাদের ধরা ছোঁয়ার বাহিরে চলে যায়।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: গোলাম ফেরদৌস এর মুঠোফোনে (ঘুষের) বিষয়ে জানতে চাইলে তিনিগণমাধ্যম কর্মীকে ঘটনার সততা স্বীকার করে বলেন ঘটনা সত্যি। কামাত আঙ্গারীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার সাইদুর রহমানের বিগত দিনের দপ্তরের অভিযোগ গুলো আমলে না নেওয়ার জন্য আমাকে টাকা দিতে আসে।তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যাবস্থা নিবে কিনা সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সুপারের বিরুদ্ধে থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করা হবে।
তিনি আরও বলেন তার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ আছে সে গুলো তদন্তের মাধ্যমে আমার উপর মহলে পাঠিয়ে দিবো এবং তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কামাত আঙ্গারীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো: সাইদুর রহমানকে তার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য যে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে ৯ সেপ্টেম্বর সোমবার সকাল থেকে কামাত আঙ্গারিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে সীমাহীন নিয়োগ জালিয়াতি ও দূর্নীতির অভিযোগে পদত্যাগের দাবীতে দ্বিতীয় দিনের মত বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে ওই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।
শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী সূত্রে বলেন সুপার সাইদুর রহমান এক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মিথ্যা কথা বলে স্বাক্ষর নেয়।নিবন্ধন সনদ জাল করে সহকারী মৌলভী পদে মোস্তাফিজুর রহমান কে নিয়োগ প্রদান। ২.৫০ বিঘা জমি লিখে নিয়ে একজন অফিস সহকারী কর্মরত থাকা অবস্থায় আরেকজন অফিস সহকারী নিয়োগ প্রদান।
কোনো কারণ ছাড়াই শিক্ষকদের বেতন শিটে স্বাক্ষর না করে মাসের পর মাস বেতন বন্ধ রাখা প্রতিষ্ঠানের নামের জমি অন্যা য়ভাবে ভোগ দখল করে অর্থ আত্মসাৎ।কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগ সংক্রান্ত জাল কাগজপত্র তৈরী করে হয়রানী ।এই দাবী গুলোকে সহমত পোষণ করেছেন কামাত আঙ্গারীয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক শিক্ষিকাগণ।
শিক্ষার্থীরা বলেন আন্দোলন চলাকালে মাধ্যমিক অফিস থেকে আমাদেরকে জানানো হয় অফিস থেকে আমাদের আন্দোলনে প্রতিনিধিদল আসবে তদন্ত করার জন্য এবং আমাদের সাথে কথা বলার জন্য। কিন্তু আমরা দুপুর তিনটা পর্যন্ত থেকেও মাধ্যমিক অফিসের কোন অফিসার আমাদের কাছে আসেন নাই আমরা এর জবাব চাই।
আরও জানা যায় দীর্ঘ ২২ বছর যাবত অফিস সহকারি পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় ওই পদে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার যোগসাজসে অন্য একজনকে অফিস সহকারি পদে নিয়োগ দেন সুপার। গত ২২ এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী অফিস সহকারি সফিয়ার রহমান।
শুধু তাই নয় দীর্ঘ ২২ বছর অফিস সহকারি পদে চাকরি করার পর জালিয়াতি করে গত আগস্ট/২৪ মাসে অফিস সহকারি সফিয়ার রহমানকে এবতেদায়ী জুনিয়র শিক্ষক দেখিয়ে নতুন করে এমপিও ভূক্ত করেন সুপার। অথচ অফিস সহকারী পদে ২০০২ সালে (ইনডেক্স ২৬৯২৩৩২) নিয়োগ পান মোঃ সফিয়ার রহমান এবং ২০১৪ সালের জুলাই মাসে উচ্চতর স্কেল প্রাপ্ত হন।
এদিকে অফিস সহকারি পদ শূন্য দিখিয়ে গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে উক্ত পদে (এসিও) মোঃ খালেদুজ্জামান নামের একজনকে নিয়োগ দেন। যার ইনডেক্স (গ০০৫৪১৮ ০), এমপিও ভুক্তির তারিখ মার্চ, ২০২৪ইং। এ ঘটনা প্রকাশ হলে এলাকায় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং বিষয়টি তদন্তের দাবি করে সফিয়ার রহমান বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেন। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম ফেরদৌস উভয় পক্ষকে ডেকে সুপারকে বিষয়টি সংশোধনের নির্দেশ দেন।
বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে সুপার সাইদুর রহমান ও অফিস সহকারী শফিয়ার রহমানের মধ্যে দ্বন্ধ চলে আসছিল। এই দ্বন্ধ চলমান অবস্হায় মাহমুদুল হাসান নামের মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থীর নিকট থেকে কৌশলে সুপার সাইদুর রহমান তিনি মাদ্রাসার সকল কার্যক্রম পরিচালনা করেন এবং অফিস সহকারি শফিয়ার কোন কাজ করেন না এইরকম বক্তব্য লিখে সভাপতি বরাবর একটি অভিযোগ নামা লিখে নেন। এই ঘটনা ওই শিক্ষার্থী তার সহপাঠীদের জানালে তারা সুপারের দুরবিসন্ধি বুঝতে পেরে গত রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর ) মাদ্রাসায় গিয়ে ওই দরখাস্তের মুল কপি ফেরত চায়। এসময় দরখাস্তের মুল কপি ফেরত না দিয়ে সুপার কৌশলে মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যান। পরে সুপারের কক্ষসহ মাদ্রাসার সকল কক্ষে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।
এই ঘটনা জানাজানি হলে মাদ্রাসার অন্যান্য শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর ) সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে মাদ্রাসা সুপার সাইদুরের পদত্যাগের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার সুপার সাইদুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অসত্য।
অন্যদিকে, মুঠোফোনে কথা চলাকালীন তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, এবতেদায়ী জুনিয়র শিক্ষক হিসেবে শফিয়ারের নিয়োগ ২০০৫ সালে। তাহলে গত ২০ বছর অফিস সহকারি পদে বেতন ভাতা উত্তোলন করলো কি ভাবে এবং আগস্ট /২৪ একই ব্যক্তি কিভাবে অফিস সহকারি থেকে জুনিয়র শিক্ষকে এমপিও ভূক্ত হন? এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি ফোন কেটে দেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও অত্র মাদ্রাসার সভাপতি গোলাম ফেরদৌস জানান, একাডেমিক অফিসারকে ঘটনাস্থলে যেতে বলেছি।কিন্তু উনি ঘটনা স্থল থেকে ফিরে আসার পর তার সাথে এখনো কথা হয়নি আমার।আমি যেনে নিবো তদন্তে কি পেলো।