রাশেদুল ইসলাম(নিজস্ব প্রতিবেদক):-
মাহমুদুল হাসানের নিকট নিত্যদিনের শ্রবণকৃত শব্দগুলোর মধ্যে ক্লিক, ক্লিক, ক্লিক শব্দগুলো একদম কমন আওয়াজের শব্দ। হ্যাঁ এগুলো তার ক্যামেরায় ডান হাতের অঙ্গুলি কর্তৃক চাপের ফলে সৃষ্ট শব্দ তরঙ্গ।
আর এ ক্লিকের মাঝেই ক্যামেরায় আটকে পড়ে চারিদিকের বিচিত্রময় জিবনের সচিত্রতার প্রতি চ্ছবি। ক্যামেরার আলোকচিত্রে ফুটে উঠে বাস্তব জীবনের অনুষঙ্গে লুক্কায়িত থাকা অদৃশ্য গল্পগুলো।
তাই অনুসন্ধানী মনের উপযোগী খোরাক মেঠাতে প্রত্যাশিত ফটো- ফুটেজ ধারণ করা মাহমুদুল হাসানের এখন স্বপ্ন ও কর্ম উভয়ই। সে এখন ফটোগ্রাফির এ কাজটিতে নিত্যকার ব্যস্ত হয়ে থাকে। আজকে সে ও তার ক্যামেরার চিত্রের উপর যুগলবন্দী কর্মসাধন নিয়ে কিছু বলবো।
তরুন- কিশোর মাহমুদুল হাসান একজন ছাত্র। তিনি বর্তমানে নোয়াখালী কলেজে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক (সম্মান) ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত আছেন। তিনি নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লার্ক ইউনিয়নের কেরামত গ্রামে জম্ম গ্রহন করেন।তার বাবা একজন চাকুরীজীবি এবং তার মা একজন গৃহিনী।
পারিবারিক জিবনে প্রত্যাশিত প্রাপ্তির মাঝে আর নিভৃত সবুজ পল্লীতে বেড়ে উঠা মাহমুদুল হাসান বর্তমানে লেখাপড়ার পাশাপাশি প্রিয় শখ হিসেবে ফটোগ্রাফিতেও দিনের একটা সময় দিতে থাকেন। তবে এখন এটা শুধু ঠুকনো সময় দেয়া নয়, এটা এখন একটা তার নেশা ও পেশা উভয়ে পরিণত হয়েছে।
তিনি শুধু ছবি তোলা আর ভিডিও ধারণই করেননা বরং সুন্দর ভিডিও বানানোর জন্য ভিডিও এডিটং করে “কনটেন্ট ক্রিয়েট” ও করে থাকেন। ফটোগ্রাফিতে ভালো অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য কিছুদিন টিভি চ্যানেলের সাথে সমবয়সী ক্যামেরা পার্সন ও ভিডিও এডিটরদের সাথে সময় দিয়েছেন।
আরো ভালো দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা সঞ্চার করার জন্য স্বনামধন্য ফটোগ্রাফারদের যথাযথ অনুসরণ করে থাকেন। বর্তমানেও অনলাইনভিত্তিক নিউজ পেজ ও ইউটিউবের জন্য ফটোগ্রাফির কাজ সহ ভিডিও এডিটিংয়ে কাজটি নিখুঁতভাবে করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
সুন্দর ফটোগ্রাফির জন্য তার এলাকায় সর্বশ্রেণীর মানুষের কাছে তিনি ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন। তিনি মফস্বলে বসবাস করেন বিধায় তার উপজেলা এমনকি জেলার বড় বড় অনুষ্ঠানে ভিডিও ফুটেজে ধারণ এবং ছবি তোলার জন্য প্রায়ই ডাক পেয়ে থাকেন। এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ বা প্রতিষ্ঠান ভালো ছবি তোলার জন্য তাকে ডেকে নিতে কখনো ভুল করেননা।
মাহমুদুল হাসান একজন ছবির কারিগর হিসেবে সবসময় চেষ্টা করেন নান্দনিক ছবিগুলো খুঁজে খুঁজে তার প্রিয় সঙ্গী ক্যামেরায় ধারণ করতে। প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যের চিত্র ধারণে তিনি ছুটে চলেন নানা দিক-বিদিক। এর মধ্যে সমাজ জীবনের বাস্তবতার চিত্রগুলো ক্যামেরা বন্দী করতেও কখনো ভুল করেননা।
প্রান্তিক এলাকার মানুষের জীবনের সাথে জড়িত ঘনিষ্ঠ বিষয়গুলোর ছবি বা ভিডিও রেকর্ড করে তা যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেন। এটা নিতান্তই মানুষের কল্যাণে কাজ করার একান্ত বহিঃপ্রকাশ।
তাতে সামান্যতম হলেও স্থানীয় সমাজের মানুষেরা যদি উপকৃত হয়ে থাকে তাতে তিনি আত্মতৃপ্তি লাভ করেন। এ বিষয়ে দু’একটি উদাহরণ তুলে ধরছি। তার উপজেলায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার কারণে যাত্রী হয়রানির ফলে লোকজন খুবই অতিষ্ঠ হয়ে উঠছিল।
যাত্রীরা এর প্রতিবাদ করলেও কোনো কাজ হতোনা বরং উল্টো কিছু হতো। একদিন তিনি লক্ষ্য করলেন, তার উপজেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে যাত্রীর কাছ থেকে সিএনজি পরিবহন কর্তৃক অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করা হচ্ছে। যাত্রী এটার প্রতিবাদ করলে পরিবহন শ্রমিক কর্তৃক যাত্রীকে ব্যাপক মারধর করা হয়।
তৎক্ষনাৎ মাহমুদুল হাসান অতি কৌশলে ভিডিওটি ধারণ করেন এবং দ্রুত থানায় ফোন করেন। এতে নাগরিক সমস্যাজনিত বিষয় হওয়ায় মুহূর্তে ঐ ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। এবং গণমাধ্যমে সেটি বেশ গুরুত্বসহকারে প্রচার হয়। পরবর্তীতে সে সমস্যা সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে।
নাগরিক সেবা সংক্রান্ত আরেকটি ঘটনা উল্লেখ করছি। তার ইউনিয়নের দীর্ঘদিন যাবত বেহালদশা পূর্ণ একটি সড়ক অবহেলিত অবস্থায় পড়েছিল যেন সেটি দেখার কেউ ছিলোনা।
বিষয়টি তার ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করার পর সেটি একটি অনলাইন চ্যানেলকে দিলে তা প্রকাশের পর দ্রুত রাস্তাটি সংস্কার হয়। এছাড়াও এলাকায় মানবিক সহায়তা পেতে গৃহহীন পরিবার, চরম দারিদ্রতায় জর্জরিত দুঃখী মানুষ,কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত অসহায় রোগী প্রভৃতির চিত্র ধারণ করেছেন। তারা ঐ সকল পরিবার এবং মানুষগুলো সামান্যতম হলেও সহযোগিতা পেয়েছিলো।
মাহমুদুল হাসান এভাবে শত শত সামাজিক ও ইতিবাচক কাজের সাথে ফটোগ্রাফি নামক কর্মটির স্বপ্ন জালে জড়িয়েছে গেছেন। তিনি স্বপ্ন দেখেন ভালো কিছু করার জন্য, তাই নিরলস এ কর্মসাধনে কাজ করে যাচ্ছেন।
ফটোগ্রাফির মাধ্যমে তিনি চান প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের মানুষের জীবনঘনিষ্ঠ নানা ধরনের বিচিত্রতা ও মানুষের না বলা কথা গুলো এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জীবনের গল্পগুলো তুলে নিয়ে আসতে।
এরপর সেগুলো ক্যামেরায় বন্দি না নীতি ও স্বকীয়তা বজায় রেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ভিবিন্ন মাধ্যমের দ্বারা সবার দৃষ্টিগোচরে আনার জন্য চেষ্টা করেন।
ফটোগ্রাফির কল্যাণময় কর্মগুলো দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে দেয়ার প্রত্যয়ে তিনি হাঁটি হাঁটি পা পা করে ক্রমান্বয়ে সামনে এগুচ্ছেন।
ছোটবেলা থেকে ক্যামেরার প্রতি তার একটি বিশেষ ঝোঁক ছিল। স্মার্টফোন আসার পর স্কুল জীবনের ছাত্রাবস্থায় একটি স্মার্ট ফোনে মাধ্যমে গ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন ছবি তুলার মাধ্যমে তার ফটো গ্রাফির হাতে খড়ি হয়।
উচ্চমাধ্যমিক শেষ করার পর এই ছবি তোলার ঝোঁক থেকে শখ করেন একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা কিনেন এবং ভালোভাবে ফটোগ্রাফির নেশায় আঁটকে গেছেন। তার ইচ্ছে, স্নাতক শেষ হলে ফটোগ্রাফির উপরে তিনি লেখাপড়া করবেন এবং ভালো মানের প্রশিক্ষণও গ্রহন করবেন। তিনি তার বন্ধুবান্ধবসহ সকলের কাছে তার সফল কর্ম প্রত্যাশায় দোয়া চেয়েছেন।
তিনি মনে করেন, একজন ফটোগ্রাফারও দেশের কল্যাণে অনবদ্য ভূমিকা রাখতে পারে। তাই তিনি আশা করছেন, এই পেশাগত কাজ দিয়ে একদিকে যেমন একদিকে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলবেন, ঠিক তেমনি অন্যদিকে দেশের উন্নয়নে ও কাজ করবেন।