নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে অবৈধ পন্থায় বিক্রিত ৯৫ বস্তা গম জব্দ করেছে পুলিশ। এ সময় ট্রাকচালকসহ দুইজনকে আটক করা হয়েছে।এঘট নার পরে কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার ও জেলা জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।গত (৪ মার্চ) বিকে লে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট বাজার থেকে ট্রাকসহ গমগুলো জব্দ করে পুলিশ।
আটক দুজন হলেন- রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা র চানদার আড়া গ্রামের ট্রাকচালক হাসেম আলী (৪৫) ও মোহনপুরের কেশরহাটের গম ব্যবসায়ী নজ রুল ইসলাম (৫০)।রাজশাহীর মোহনপুর থানার ভার প্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম বাদশা বলেন,রাজশা হী কেন্দ্রীয় কারাগারের গম নিয়ে কেশরহাট বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে এমন গোপন খবর পেয়ে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে অভিযান চালায়। এ সময় সেখান থেকে ৯৫ বস্তা গমসহ একটি ট্রাক জব্দ করা হয়। পরে এ ঘটনায় চালকসহ দুইজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে আটক দুইজ নকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কীভাবে বিপুল পরিমাণ এসব গম বের হলো সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন,প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামের দাবি হুমায়ন আলী নামে রাজশাহীর এক ব্যবসায়ীর সহযোগিতায় গম গুলো তিনি কারাগার থেকে বৈধভাবেই কিনেছেন। যদিও জব্দ করা গমের বস্তার গায়ে সরকারি কোনো সিল নেই।তিনি আরও বলেন,এ বিষয়ে তারা কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তারা জানি য়েছে খারাপ গম বিক্রি করে ভালো গম কেনা হয়। আবার অনেক কারারক্ষী রেশনে পাওয়া গম বিক্রি করে দেন। এর অংশ হিসেবেই গমগুলো বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। অন্য সরকারি সংস্থাগুলোও একই ধরনের কাজ করে বলেও দাবি করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।
ওসি বাদশা বলেন,তারা এখন গমের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করছেন। বৈধ হলে গমগুলো ব্যবসায়ী র কাছে হস্তান্তর করা হবে। আর গম পাচার হলে মামলা হবে।এদিকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নিজাম উদ্দিন জানিয়েছেন, কারা অভ্যন্তরে প্রায় ৪০০ কারারক্ষী রয়েছেন। তাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যাদের পরিবার এখানে থাকে না। তাই তারা রেশনের গম বিক্রি করে দেন। আর এ গমগুলো রাজশাহীর এক ব্যবসায়ী কিনে নেন। তিনি এগুলো হয়তো কেশরহাটের আরেক ব্যবসায়ী র কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এর বাইরে কারাগার থেকে কোনোভাবে গম বিক্রির সুযোগ নেই বলেও দাবি করেন জেলার নিজাম।
তবে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দিদের খাদ্য ও রক্ষীদের রেশন নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নির্ধারিত খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বন্দিরা। তাদের বরাদ্দের ৩ ভাগের ১ ভাগ সরবরাহ করা হয়। বাকি ২ ভাগ গোপনে কারাগারে র বাইরে বিক্রি করা হয়। শুধু তাই নয়,কারারক্ষী দের রেশনের পরিবর্তে যে নগদ অর্থ দেয়া হয় সেখা নেও পদে পদে অনিয়ম। চাল,ডাল,চিনি,তেলসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের প্রকৃত দামের অর্ধেক টাকা পান রক্ষীরা। এসব ঘটনার নেপথ্যে রাজশাহী জেল সুপার আবদুল জলিলের নেতৃত্বাধীন,জেলার মোঃ নিজাম উদ্দিন,ডেপুটি জেলার মুহাম্মদ আবু সাদ্দাত ও কারারক্ষী আলমগীরসহ একাধিক কারারক্ষীর একটি শক্তিশালি সিন্ডিকেট প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
রাজশাহী সাহেববাজারে মুদি দোকান দার হুমায়ুনের কথা মতো রাজশাহী কারাগারের পেছন সাইডে আমার পিকআপ ট্রাকটি নিয়ে যায়। এ সময় কারা রক্ষী আলমগীর আমাকে ভ্যানের মাধ্যমে মালামাল গুলো বুঝিয়ে দেয়। তার কথামতো মালামাল গুলো কেশরহাট মোহনগঞ্জ এর আবুল হোসেন এর কাছে বুঝিয়ে দিতে নিয়ে এসেছি। সে প্রতিমাসে দুই তিন বার এমন কারাগার থেকে চাল,গম,ডাল,তেল,চিনি বের করে মুদি দোকানদার হুমায়ুনের গোডাউনসহ বিভিন্ন স্থানে দিয়ে আসে বলে জানান পিকআপ ট্রা কের ড্রাইভার।কারা অধিদপ্তরের একটি সুত্র জানি য়েছেন.. বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর কাজ করছে। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের কর্মকর্তারা গম পাচার করে বিক্রির সাথে জড়িত থাকলে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।