সীমান্ত মোল্লা জেলা প্রতিনিধি শরীয়তপুর!
শরীয়তপুরের নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার পদ্মা নদীর ডান তীরে নির্মাণ করা ১০ কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষা বাঁধ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে নদীভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছে অন্তত ১১ হাজার বসতবাড়ি। বাঁধটি নির্মাণের ফলে পাঁচ হাজার ৭০০ কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা পেয়েছে বলে দাবি পানি উন্নয়ন বোর্ডের।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গণভবন থেকে ভার্চুয়াল সভার মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে ১০ দশমিক ২ কিলোমিটার পদ্মা নদীর বাঁধ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, দেশের প্রধান নদী পদ্মা শরীয়তপুরের নড়িয়া ও জাজিরার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নড়িয়ার ঘড়িষার, কেদারপুর, মোক্তারের চর, নড়িয়া পৌরসভা, জাজিরার কুন্ডের চর ও বিলাশপুর ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনে নদীর আশপাশের ৩০টি গ্রামের অন্তত ২০ হাজার পরিবার গৃহহীন হয়ে যায়। শুধু ২০১৮ সালেই ভাঙনের শিকার হয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার পরিবার। ওই বছর নড়িয়ার পাঁচটি ছোট-বড় বাজারের ৩৫০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পদ্মায় বিলীন হয়। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হাসপাতালের ভবন বিলীন হয়ে যায়।
এরপর নড়িয়ার সুরেশ্বর লঞ্চঘাট থেকে জাজিরার সফি কাজির মোড় পর্যন্ত পদ্মা নদীর তীর রক্ষা প্রকল্প হাতে নেয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ওই প্রকল্পের আওতায় এক হাজার ৪১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ দশমিক ২ কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষা ও ১১ দশমিক ৮ কিলোমিটার নদীর চর খনন করা হয়। প্রথমে বালুভর্তি জিও বস্তা ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এরপর নদীতে সিসি ব্লক ফেলা হয়। তার ওপর দিয়ে নদীর নিচ থেকে তীর পর্যন্ত সিসি ব্লক বসিয়ে বাঁধটি নির্মাণ করা হয়েছে।
ওই ১০ কিলোটার নদীর তীর রক্ষা বাঁধের ওপর চার কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকার হাতিরঝিলের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে একটি দৃষ্টিনন্দন সেতু। সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ওয়াকওয়ের পাশে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। দর্শনার্থীদের বসার জন্য বসানো হয়েছে বেঞ্চ। নদীতে নামার জন্য সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। ওই চার কিলোমিটার ওয়াকওয়ের নামকরণ করা হয়েছে ‘
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব দৈনিক মুক্তিযুদ্ধ ৭১ সংবাদকে বলেন, নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার পদ্মা নদীর ভাঙন বন্ধ করার জন্য বাঁধটি নির্মাণ করা হয়েছে। ওই বাঁধের কারণে ১১ হাজার ৩০০টি বসতবাড়ি, স্কুল, কলেজ, সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামো ও সড়ক রক্ষা পেয়েছে। যে পরিমাণ সম্পদ রক্ষা পেয়েছে তার মূল্য পাঁচ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। বাঁধটি টিকিয়ে রাখার জন্য পাউবো কাজ করে যাচ্ছে।
২০১৮ সালে নড়িয়ার কেদারপুর গ্রামের বাসিন্দা তন্ময় রায়ের বসতবাড়ি বিলীন হয়ে যায়। তখন তিনি ওই এলাকা ছেড়ে পার্শ্ববর্তী চাকধ এলাকায় চলে যান। পরে ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পাওয়া জমিতে গত ফেব্রুয়ারিতে একটি রেস্তোরাঁ খোলেন।
তন্ময় রায় জাগো নিউজকে বলেন, ‘পদ্মার ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছি। বাঁধ নির্মাণ করায় এখন ভাঙন থেমেছে। ভাঙনের কবল থেকে যে জমিটুকু রক্ষা পেয়েছিল তাতে রেস্তোরাঁ খুলেছি।’তিনি আরও বলেন, ‘এ বাঁধটি এখন পর্যটন এলাকা হয়েছে। প্রতিদিন এখানে হাজারও মানুষ ভিড় করেন। তাদের জন্যই রেস্তোরাঁটি খোলা হয়েছে।’
উত্তর কেদারপুর গ্রামের রতন কুমার রায়ের পরিবারের ৬৫ শতাংশ জমির ওপর বসতবাড়ি ছিল। ২০১৮ সালে ভাঙনে ৩৫ শতাংশ জমিসহ বসতঘর বিলীন হয়ে যায়। আতঙ্কে তারা অন্যত্র আশ্রয় নেন। বাঁধের কাজ শুরু হলে ২০২২ সালে ভাঙন থেকে রক্ষা পাওয়া ৩০ শতাংশ জমিতে আবার বসতি গড়েছেন।
রতন কুমার রায় বলেন, ‘বাঁধের কাজ শুরু না হলে আমাদের পুরো জমিটি নদী গ্রাস করতো। বাঁধের কারণে আমার মতো হাজারও মানুষের বসতবাড়ি ও সম্পদ রক্ষা পেয়েছে। আমি বাপ-দাদার ভিটায় ফিরতে পেরে আনন্দিত।’
জানতে চাইলে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য এনামুল হক শামীম বলেন, নড়িয়ার ভাঙন রোধ করা ছিল অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধান ও নির্দেশে বাঁধের কাজটি শেষ করতে পেরেছি। তবে করোনার কারণে একটু সময় বেশি লেগেছে।
তিনি বলেন, এ বাঁধের সবচেয়ে বড় সফলতা হচ্ছে গত পাঁচ বছরে এ এলাকায় একটি বাড়িও নদীতে বিলীন হয়নি। এ বাঁধের কারণে ১১ হাজারেরও বেশি পরিবার ভাঙনের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেয়েছে।