প্রথম বাংলা – : হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানব ন্দরের স্পর্শকাতর এলাকা রানওয়ে সাইট থেকে রাতের অন্ধকারে ২০ কোটি টাকার মূল্যবান মালামাল চুরি হয়ে ছে। এই মালামালের মধ্যে ১০-১২ কোটি টাকার অ্যাপ্রোন ও ট্যাক্সিওয়ে ভাঙা কংক্রিট স্লাব ছিল। এ ছাড়া রানওয়ে তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের মূল্যবান পণ্যসামগ্রীও রক্ষিত ছিল দীর্ঘদিন ধরে এসব পণ্যসামগ্রী বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে রাডার ভবন ও রানওয়ে ১৪ প্রান্তের কাছে স্তূপ আকারে পড়ে ছিল।
সম্প্রতি থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পের এক্সপোর্ট কার্গো ভবন নির্মা ণের কাজ শুরু করতে গেলে এই ভয়াবহ চুরি ধরা পড়ে। গত ১৭ জুলাই বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় থেকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া এক চিঠি থেকে এই তথ্য জানা গেছে। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব অনুপ কুমার তালুকদার স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বিষয়টি যথা যথ তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিমানবন্দরের রানওয়ে এলাকাটি সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ ও স্পর্শকাতর এলাকা। এখানে যে কেউ ইচ্ছা করলেই ঢুকতে কিংবা বের হতে পারবে না তা ছাড়া এত বড় অঙ্কের চালান কেউ হাতে করেও নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এজন্য ট্রাক কিংবা ভারী যানবাহন রানওয়ে সংলগ্ন এলাকায় নিয়ে পণ্যসামগ্রী বের করতে হবে। এজন্য অবশ্যই প্রয়োজনীয় গেট পাশসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন লাগার কথা।কারণ এগু লো সরকারি সম্পত্তি। তাছাড়া রানওয়ে সংলগ্ন এলাকা থেকে যে কোনো পণ্যসামগ্রী অপসারণ করতে হলে অবশ্যই টেন্ডারের মাধ্যমে কিংবা নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করার নিয়ম।
মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, এই ঘটনা সরকারি সম্প ত্তি দিনে দুপুরে ডাকাতির ঘটনার মতো। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের টার্মিনাল ভবন ও রানওয়ে সাইট দুটি অংশে ভাগ করে এর উন্নয়ন, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষ ণের কাজ করে থাকে সিভিল ডিভিশন-১। চুরি হওয়া প্রতিটি স্লাব ২৫ ফুট বাই ২৫ ফুট আকারের। থিকনেস ২৬ ইঞ্চি হয়ে থাকে। এ ধরনের একটি স্লাব বানাতে ১৩৬৫ সিএফ টি কংক্রিট ও ডাওয়েল বার ব্যবহার করতে হয়। পুরোনো স্লাব ভাঙলে ১৩৬৫ সিএফটি আকারের ভাঙা স্লাব পাওয়া যায়। ঢাকা শহরসহ সারাদেশে এসব পুরোনো ভাঙা স্লাব ক্রাশিং মেশিনে গুঁড়ো করে তা থেকে প্রাপ্ত স্টোন সিপস পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করা হয়। এভাবে রিসাইক্লিন করে নতুন স্লাব তৈরির শত শত কারখানা ঢাকার আশ পাশের জেলাগুলোতে গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় পুরোনো স্লাব ভাঙা স্টোন সিপস ৯০ থেকে ৯৫ টাকা দরে প্রতি ঘনফুট বিক্রি হয়ে থাকে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে সাইটে এসব ভাঙা স্লাব দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত রাডার ও রানওয়ের ১৪ প্রান্ত এলাকায় রাখা ছিল। সম্প্রতি থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পের এক্সপোর্ট কার্গো ভবন নির্মাণ করার জন্য জায়গা খালি করার নামে বিমানবন্দরের একটি সিন্ডিকেট কাউকে না জানিয়ে পুরো মালামাল গোপনে অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছে। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে থার্ড টার্মিনালের কতিপয় কর্মকর্তা ও কয়েক প্রভাবশালী ঠিকাদার জড়িত রয়েছেন।
মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এই সিন্ডিকেটের এক সদস্য এই স্লাব ভাঙা বিক্রি করে কাওলা এলাকায় ৭২ লাখ টাকার ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে যদি বছরে টেক্সওয়ে ও অ্যাপ্রোন থেকে ১ হাজার স্লাব ভাঙা হয় তাহলে গত ৫ বছরে যে স্লাব ভাঙা হয়েছে তার বাজার মূল্য হবে কমপক্ষে ১২ কোটি টাকা। কিন্তু বিমানবন্দর
সূত্রে জানা গেছে প্রতি বছর রানওয়ে থেকে গড়ে দেড় হাজারের বেশি স্লাব ভাঙা হয়ে থাকে। সে হিসাবে এর বাজারমূল্য ২০ কোটি টাকার বেশি। চিঠিতে বলা হয়, সরকারি সম্পত্তি স্পট নিলামের ব্যবস্থা না করে শুধু নিজদের পকেট ভারী করার জন্য এগুলো গোপনে সরিয়ে বাইরে বিক্রি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এ ঘটনা তদন্ত করলে আরও ভয়াবহ চিত্র রেরিয়ে আসতে পারে।