প্রথম বাংলা – শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) ভবনের অষ্টম থেকে দশম তলার ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের আগস্টে। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, দেড় বছরের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো তা হয়নি।
অথচ বিলের সিংহভাগ টাকাই আদায় করে নিয়েছেন ঠিকাদার। এমনকি সর্বশেষ কিস্তিতে নিয়মবহির্ভূতভাবে অগ্রিম বিলও দেওয়া হয়েছে তাঁকে। এই অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) আওতাধীন ঢাকা মেট্রো সার্কেল কার্যালয়ে।
ইইডি সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন,নতুন ভবন নির্মাণ,বিদ্যমান ভবনের সম্প্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণ,মেরামত,সংস্কার এবং আসবাব সরবরাহ করে। এ ছাড়া মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও আইসিটি ল্যাব স্থাপন,ইন্টারনেট সংযোগ,আইসিটি সুবিধা দেওয়ার কাজও করে থাকে অধিদপ্তরটি।
সরকারি কাজে ঠিকাদারদের অগ্রিম বিল দেওয়ার বিধান নেই। কাজের অগ্রগতি অনুযায়ী বিল দেওয়া হয়। অর্থাৎ যে পরিমাণ অর্থের কাজ শেষ হয়, সে পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা হয়। কিন্তু নায়েম ভবনের নির্মাণসহ ইইডির একাধিক কাজের বিল বাবদ অর্থ পরিশোধে কোনো নিয়মকানুনই মানা হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ‘অবৈধ যোগসাজশে’ নায়েমের কাজে বিল বাবদ অগ্রিম দেওয়া হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা, যা বিধিবহির্ভূত।
অগ্রিম বিলের বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী প্রকৌশলী বলেন,নায়েমের ভবন নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সর্বশেষ কাজের জন্য অগ্রিম ৪ কোটি টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। অথচ এই পরিমাণ টাকার কাজ করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ ক্ষেত্রে কোনো নিয়মকানুনই মানা হয়নি এটা বড় অনিয়ম।
নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়,নায়েম ভবনের অষ্টম থেকে দশম তলার ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শফিক এন্টারপ্রাইজ। নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট,এ কাজের ব্যয় ধরা হয় ১১ কোটি ৩৯ লাখ ৮২ হাজার ৯৭৮ টাকা।
নির্মাণকাজ শেষের মেয়াদ ধরা হয় ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু এখনো নির্মাণকাজের আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা কাজের বিল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে।
ভবন নির্মাণকাজের অগ্রগতি জানতে চাইলে নায়েম মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল করিম বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভবন নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য একাধিকবার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, শুধু নায়েমের ভবন নির্মাণ কাজ নয়,ইইডির ঢাকা মেট্রো কার্যালয়ের অধীন চলমান বেশ কয়েকটি কাজে‘অবৈধ সুবিধার’বিনিময়ে অগ্রিম বিল পরিশোধ করা হয়েছে,যা বিধিবহির্ভূত। এই তালিকায় সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ,ডেমরার এম এ সাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা সেন্ট্রাল বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নির্মাণও রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে ইইডির ঢাকা মেট্রো জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসান শওকত বলেন,‘অগ্রিম ছিল,এখন তা ওভারকাম করা হয়েছে। আমি বিষয়টি জানার পরই বিল প্রদান বন্ধ করেছি। এখন উল্টো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অর্থ পাবে।আর সব প্রকৌশলী কে তো সিসি ক্যামেরায় আওতায় রাখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’
এর আগে কাজ শেষ না হলেও অগ্রিম বিল দেওয়ায় ঢাকা মেট্রো জোনের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর ১০ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের অফিস আদেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় বর্তমানে বিভাগীয় মামলাটি চলছে।
বক্তব্য জানতে চাইলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার গণমাধ্যম কে বলেন,‘ঢাকা মেট্রো কার্যালয়ের অধীন চলমান কয়েকটি কাজের বিষয়ে কিছু অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি সব ধরনের অনিয়ম বন্ধে গত ১০ মে অফিস আদেশ জারি করেছি।
ছবি, সংগৃহীত