September 11, 2024, 7:56 pm
শিরোনামঃ
যুগ্মসচিবকে যে কারণে দুই ঘণ্টা বাথরুমে আটকে রাখেন বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা সরকারের সব প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত, অভিযানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আজো চলছে দখলের এক মহাউৎসব নতুন ৮ ডিসির নিয়োগ বাতিল দুর্গাপূজায় স্বেচ্ছাসেবক হতে রাজি মাদরাসার ছাত্ররা: ধর্ম উপদেষ্টা দুর্গাপূজা ৩২,৬৬৬ মণ্ডপে, নামাজের সময় বন্ধ থাকবে বাদ্যযন্ত্র’ তিতাসের এমডি নিয়োগের প্রতিবাদে পেট্রোবাংলার কার্যালয়ে ভাঙচুর জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবে পুলিশ : আইজিপি ভূরুঙ্গামারীতে মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মানববন্ধন ও পদত্যাগের দাবী শিক্ষার্থীদের ডিএমপির ডেমরা পুলিশ লাইন্সে বিশেষ কল্যাণ সভা
নোটিশঃ
আপনার আশেপাশের ঘটে যাওয়া খবর এবং আপনার ব্যবসার বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য যোগাযোগ করুন মানবাধিকার খবরে।

গণপূর্ত বড় কাজের টেন্ডার এলেই ঠিকাদার বনে যান নির্বাহী প্রকৌশলী

Reporter Name

প্রথম বাংলা – যেখানেই বড় বড় কাজের টেন্ডার সেখানেই নির্বাহী প্রকৌশলী বনে যান ঠিকাদার। রাজধানীর বড় বড় ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশ করে নিজেই চালিয়ে যান তার ঠিকাদারি কাজ। আর অন্য ঠিকাদার কাজ করতে হলে ২০ শতাংশের বেশি ঘুষ দিয়েই কাজ পেতে হয়। বছরের পর বছর প্রকৌশলীর অবহেলায় অনেক বরাদ্দ ফেরত যায়। মৌলভীবাজার গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলীর এই কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ ঠিকাদাররা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবা জার গণপূর্তে যোগদান করেন নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান। যোগদানের পর থেকেই কাজের অবহেলার কারণে বিভিন্ন সময় তাঁর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ ওঠে। যোগদানের পর থেকেই যখন ইচ্ছে তখন আসেন অফিসে। অভিযোগ আছে, নিজেই পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেন।

আবার পছন্দের বাইরের কেউ কাজ পেলে তার কাছ থেকে আদায় করেন বড় অঙ্কের কমিশন। টেন্ডার পাশ করানোর আগে তিনি ঠিকাদারদের কাছে থেকে নেন বড় অংকের পিসি (পার্সোনাল কমিশন)। বিল পাশের আগেও ঠিকাদাররা বড় অঙ্কের কমিশন না দিলে বিল পাশ হয় না। এমনকি জামানত উঠাতেও দিতে হয় কমিশন এভাবেই দুই বছর ধরে চলছে মৌলভীবাজার গণপূর্তের কার্যক্রম।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, যোগদানের পরপরই অফিসে নিজস্ব সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন নির্বাহী প্রকৌশলী। নেমে পড়েন ঠিকাদারি ব্যবসায়। নিজের অফিসের কাজ নিজে পেতে ঢাকা থেকে বড় বড় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহার করে অটিএমে কাজ জমা দেয়ান। এরপর তিনি নিজেই ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ বাস্তবায়ন করেন।

সম্প্রতি মৌলভীবাজার জেলার বাইরের মেসার্স করিম অ্যান্ড কোং ঢাকা, কুটি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কন্সসালটেশন মিরপুর, ইএম কন্সট্রাকশন পরিবাগ, বাবর এসোসিয়েট ঢাকা, এসএ এন্টারপ্রাইজ ঢাকা, মৌসুমি এন্টারপ্রাইজ ব্রাক্ষণবাড়িয়া কাজ পেয়েছে। স্থানীয় গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদারদের অভিযোগ, নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান ওইসব প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ নিয়ে নিজেই এসব কাজ বাস্তবায়ন করছেন।

তিনি নিজেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হয়ে গেছেন তার ইচ্ছামতো যেমন খুশি তেমন কাজ বাস্তবায়ন করে। এমন কয়েকটি কল রেকর্ড এসেছে এ প্রতিবেদকের হাতে। কল রেকর্ডে শোনা গেছে, জেলার বাইরের ঠিকাদাররা বলছেন, তাদের লাইসেন্স নিয়ে প্রকৌশলী নিজেই কাজ করান। তারা শুধু নামে কাজ পান।

মবশ্বির এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী মো. মবশ্বির আহমেদ বলেন, ঢাকার লাইসেন্স এনে নির্বাহী প্রকৌশলী নিজেই কাজ বাস্তবায়ন করেন। ক্ষেত্র বিশেষে তার মনোনীত ঢাকার কোন ঠিকাদার ব্যক্তিকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেন। তার কথা মতো স্থানীয় ঠিকাদাররা টাকা পয়সা না দিলে ওয়ার্ক অর্ডার পাওয়ার পরও ফান্ড ফেরতে দেওয়ার রেকর্ড আছে। যা অতীতে কোনো নির্বাহী প্রকৌশলীর করার নজির নেই।

মুজিব কন্সট্রাকশনের মুজিবুর রহমান বলেন, একটি কাজ পেলে ভ্যাট-ট্যাক্সে অনেক টাকা ব্যয় হয়। এরমধ্যে যদি বড় বড় পিসি প্রদান করতে হয় তাহলে কাজ সম্পূর্ণ হবে কীভাবে। এখন মৌলভীবাজারে যা হচ্ছে তা অতীতে হয়নি। আমরা দফায় দফায় কমিশন দিতে দিতে নিঃস্ব।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও কয়েকজন ঠিকাদার বলেন, তিনি সপ্তাহে দুই দিন অফিস করে বাকি সময় ঢাকায় ও তার বাসায় কাটান। আমরা ঠিকাদাররা কাজ ধরার আগে পার্সেন্টিজ অনুযায়ী টাকা দিয়ে দিতে হয়। দুঃখজনক বিষয় হলো কাজ সমাপ্ত করার পরে চেক নিতে গিয়েও চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। তার চাহিদা মতো টাকা দিলে তখন রেহাই মিলে। এই রকম অবস্থা দিনের পর দিন প্রকৌশলী নিজে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন। একটি কাজ পেলে মান ধরে রাখা কঠিন হচ্ছে। সকল টাকা তো ঘুষেই ব্যয় করতে হচ্ছে।

ঠিকাদাররা অভিযোগ শুধু ঘুষই না; লটারিতে কাজ পেলে কাজ করার প্রস্তুতি নেওয়ার পর ওই প্রকৌশলীর পক্ষ থেকে জানানো হয় এই কাজ এডজাস্টমেন্টের জন্য রাখা হয়েছে। এ রকম অনেক কাজ এডজাস্টমেন্ট বলে ঠিকাদারদের করতে দেওয়া হয় না। অনেক ঠিকাদারের কাজ শেষ, কিন্তু তার টেবিলে বিল আটকিয়ে রাখা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণপূর্তের এক কর্মকর্তা বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এই অফিসে কাজ করছি। এ রকম দুর্নীতিগ্রস্ত প্রকৌশলী আগে কখনও দেখিনি। নিয়মিত অফিস করেন না। যখন টাকা নেওয়ার সময় আসবে সেদিন অফিসে আসেন।

গণপূর্ত সূত্রে জানা যায়, বিগত দুই বছরে মৌলভীবাজার গণ পূর্ত থেকে রাজনগর কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, শেরপুর হাইওয়ে আউটপোস্ট, বড়লেখা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, জুড়ী থানা ভবন, কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের জেলা কার্যালয়, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, মণিপুরী ললিতকলা একাডেমি, জুড়ী ফায়ার সার্ভিস, জুড়ী ভূমি অফিস, কমলগঞ্জ ভূমি অফিস, মৌলভীবাজার জেলা মডেল মসজিদ ও বিভিন্ন বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ হয়।

এসব প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে প্রায় শত কোটি টাকা এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সংস্কারে ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি ৯ লক্ষাধিক টাকা।অভিযোগ উঠেছে, এসব সংস্কার কাজ গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী নিজেই ঠিকাদারি করে বাস্তবায়ন করেন। কামকাওয়াস্তে দুই-চারজন নির্দিষ্ট ঠিকাদার এসব কাজ করেন।

এসব বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান গণমাধ্যম কে বলেন, সব অভিযোগ অসত্য। যারা কাজ পায়না তারা-তো অভিযোগ করবেই। তাঁর আর কিছু বলার নেই বলে তিনি ফোন কেটে দেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Our Like Page