নিজস্ব প্রতিবেদক খান মেহেদী :- বাকেরগঞ্জ উপজেলায় পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডে ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন মহাসড়কে র পূর্বপাশে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নির্মাণকাজে ব্যবহার হচ্ছে নিম্নমানের পাথর, বালি ও রড। এছাড়াও পাথর ও বালির মিশ্রণেও রয়েছে অনিয়ম,স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডি কেটের মাধ্যমে নির্মাণ সামগ্রী ক্রয় করছেন ঠিকাদার।
জানা যায়,সারাদেশের ন্যায় স্থানীয় যুবসমাজকে খেলামুখি করতে ও জনগণের দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্পের (২য় পর্যায়) আওতায় মোট ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৮ হাজার ২৬ টাকা ব্যয়ে এ নির্মাণকাজ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এস এস এসটি অ্যান্ড এস এস কনস্ট্রাকশন। যাহা বাস্তবায়নে রয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।
আর এর স্থানীয়ভাবে দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেউপজেলা প্রশাসন।কাজ শুরুর প্রথম থেকেই নিম্নমানের রড পাথর ও বালি ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে।তবে শেখ রাসে ল স্টুডিয়াম নির্মাণ কাজে দেখভালের ধারে কাছেও নেই উপজেলা প্রশাসন। আর এই সুযোগে ব্যাপক অনিয়মকরে যাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।২০২২ সালের ১২ জুন কাজ শু রু করে ৯ মাস মেয়াদে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও অর্ধেক কাজও শেষ হয়নি এখন পর্যন্ত।
৩০ সেপ্টেম্বর (শনিবার) সকাল ১১ টায় সরেজমিনে যায় সংবাদ মাধ্যম,নির্মাণাধীন শেখ রাসেল স্টুডিয়ামের দ্বিতীয় তলায় গেলে দেখা যায় সাধারণ ও ভিআইপি গ্যালারি ওযে সিঁড়ি বালু সিমেন্ট পাথরের যে ঢালাই দেয়া হয়েছে অত্যন্ত নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে। এবং নির্মাণাধীন গ্যালারির বিভিন্ন স্থানে ঢালাই কাজে সিমেন্টের পরিমাণ কমদেওয়ায় এখন হাত দিয়ে ধরলেই ঝর ঝর করে খসে পড়ে।
এছাড়াও স্টুডিয়ামের মূল ভবনের পিলার গুলোতে বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। গ্যালারির পলেস্তারার কাজ চ লছে সেখানেও দেখা গেছে ব্যাপক অনিয়।নিম্নমানেরবালু না পরিষ্কার করে পলেস্তারার কাজের জন্য দ্বিতীয় তলায় উত্তোলন করছে শ্রমিকরা।গ্যালারিতে রড সিমেন্টের ঢালা ই দেয়ার সময় ব্যবহার করা প্লাস্টিকের চট ও পলিথিন ঠি কমতো পরিষ্কার না করে পলেস্তারা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করছে শ্রমিকরা।
নির্মাণ কাজের জন্য মাঠের সামনে ফেলে রাখা হয়েছে লোহার রোড। যেই রডের গায়ে কোন কোম্পানির নাম লেখা নেই। পুরাতন রড গুলো মরিচা ধরে বিভিন্ন স্থান থে কে চিকন হয়ে গেছে। অধিকাংশ রড গুলোই ক্ষয়ে ক্ষয়ে গেছে মরিচা ধরে আবার বিভিন্ন স্থানে পানির মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে রডের তৈরি রিং যা মরিচা ধরে নষ্ট হ য়ে যাচ্ছে এই রড ব্যবহার করলে স্টেডিয়ামের স্থায়িত্ব থা কবে না।কয়েক বছর গেলেই গ্যালারি গুলো ধ্বসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে স্টুডিয়াম নির্মাণ ঠিকা দারি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার জামিল তড়িঘরি করে ছুটে এসে বলেন কাজ কিভাবে করব সেটা তো আমরাই ভালো জানি।সাংবাদিকদের থেকে আমাদের কাজ শেখার দরকার নাই। তার কাছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের ফোন নাম্বার চাইলে তিনি ফোন নম্বর দেননি। তার ফোন থেকে কল ক রে সাংবাদিকদের সাথে তিনি কথা বলিয়ে দেয় প্রজেক্ট ডা ইরেক্টর আহসান নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। আহসান নামের ঐ ব্যক্তি তখন সংবাদ মাধ্যমকে জানান,কোন অনিয়ম হলে কাজ বন্ধ রাখা হবে। এবং তিনি তখন সাংবাদিকদের তার ফোন নাম্বার দিয়ে বলেন,সাংবাদিক ভাইরা কাজে কো ন অসঙ্গতি হলে সরাসরি আমাকে জানাবেন।
সরজমিন আরো দেখা যায়, নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে অত্যন্ত নিম্নমানের কালো রঙের পাথর।ঢালাই কাজে র পূর্বে পাথর পরিষ্কার করার কথা থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তা মানছেন না। এছাড়াও যে সমস্ত কালো পাথর স্তূপ রাখা হয়েছে, তা ব্যবহারে অযোগ্য। ২.৫ এফএম বালি ব্যবহার করার নির্দেশনা থাকলেও লোকাল বালি ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার সেটাও করা হচ্ছে না সঠিক পরিমাপে। স্থানীয় লোকজন দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কোনো কর্ণপাত করছে না।
পরবর্তীতে এ বিষয়ে প্রজেক্ট ডাইরেক্টর আহসান বলেন, শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজে কোন নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়নি। এমনকি কাজেও কোন অনিয়ম হয়নি।
এছাড়াএ অভিযোগ রয়েছে, লোকাল বালির সঙ্গে সিমেন্ট ও পাথর ব্যবহার করা নির্মাণ কাজ করে আসছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।তাছাড়া রডের ব্যবহার হচ্ছে নিম্নমানের।এর পরি মাপও সঠিক নয়। বালি পাথর ওয়াশ করার কথা থাকলে ও তা করা হচ্ছে না। ব্যবহৃত হচ্ছে ধুলা ময়লা মিশ্রিত পাথ র বালি।স্থানীয় জসিম হাওলাদার জানান,কাজ শুরুর প্রথ ম থেকে যে রড, বালি ও পাথর আনা হয়েছিল,তাও ছিলো অত্যন্ত নিম্নমানের।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সজল চন্দ্র শীল জানান,স্টেডি য়াম নির্মাণে কোনো দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। নিম্নমা নের সামগ্রী দিয়ে কাজ করলে তা বন্ধ করে দেয়া হবে।