আবদুল মামুন, সীতাকুণ্ড প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বিভিন্ন জাগায় ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে বিনোদন ও পর্যটনের স্থান গুলোতে পর্যটকদের জনসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো যদিও বৃষ্টির কারণে ঈদের দিন এবং ঈদের পরবর্তী দু’দিন তেমন পর্যটক চোখে পড়েনি তবে শুক্রবার থেকে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকের ঢল নামে। শিশুসহ নানা বয়সী মানুষ পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভীড় জমায়। সারাবছরই এখানে দেশী-বিদেশী পর্যটকরা বেড়াতে আসেন।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গা র্ডেনে এসেছে। এছাড়া গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত,কুমিরা ঘাট,বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত,আকিলপুর বীচ,ঝরঝরি ঝর্ণা ট্রেইল,কমলদহ ঝর্ণা ট্রেইলসহ অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্র গুলোতেও নানা বয়সী নারী,পুরুষ ও শিশুদের পদচারণায় পুরো এলাকা মুখর হয়ে ওঠে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইকোপার্কে অসংখ্য পর্যটকের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এই পর্যটন স্পটটি।
পার্কের গাইড কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইকোপার্কের অন্যতম মূল আকর্ষণ হলো প্রাকৃতিক ঝর্ণা ও হাজারো রকমের দুর্লভ প্রজাতির গাছ। তাছাড়া পার্কের চূড়া থেকে সোজা পশ্চিমে তাকালে দেখা যায় বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউ। গাইডদের মতে পার্ক থেকে মাত্র কয়েক কিঃ মিঃ পশ্চিমে এই সমুদ্র হওয়ায় বিকেলে এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের বেশিরভাগই এখানে এলে সমুদ্রে সূর্যাস্ত দেখে যান। আর এক ঢিলে যেন দুই পাখি পাহাড় ও সমুদ্র দর্শন করে আবেগে আপ্লুত হন সবাই। পর্যটকরা উপভোগ করছেন পার্কের সামনে দুর্লভ প্রজাতির গোলাপ বাগান,অর্কিড হাউস,গ্রীণ হাউস,পদ্ম পুকুর, ভ্যালি ব্রিজ,প্রাকৃতিক লেক,নয়নাভিরাম ঝর্ণা, আর হাজারো পাখির কলতান। ভাগ্য ভালো হলে দেখা পেতে পারেন বানর,নানারকম মায়া হরিণ সহ কয়েক প্রকার বন্য প্রাণীরও।
ঢাকা থেকে আসা শাহিনুল ইসলামের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভেতরে জলপ্রপাতে বর্ষার রূপ দেখলাম। প্রবল বেগে পাথরের ওপর আছড়ে পড়ছে বৃষ্টির পানি। শহুরে একঘেঁয়ে জীবনের ক্লান্তি দূর করতে এমন পাহাড়ী নির্জনতা নিঃসন্দেহে সবার কাছেআকর্ষণীয়। তিনি আরো বলেন,এখানকার মূল আকর্ষণ যে ঝর্ণাটি তা দেখে তিনি মুগ্ধ। এখানে এসে তার মনে হয়েছে আসলেই এদেশে অনেক কিছুই দেখার আছে। চারদিকে সবুজ পাহা ড়,মাঝখানে পাহাড় থেকে অবিরাম পড়ছে জলপ্রপাত। পাহাড়ের নীচে দাঁড়িয়ে বারৈরয়াঢালা সহস্রধারা জলপ্রপা তের অপরূপ এই দৃশ্য দেখার জন্য ভীড় করছে অসংখ্য পর্যটক। তিন’শ ফুট উঁচু একটি পর্বত শীর্ষ থেকে জলধারা শিলাময় স্থানে পতিত হয়। এত উঁচু পাহাড় থেকে এভাবে যুগ যুগ ধরে জলপ্রপাতের ধারাটি নিচে যাওয়ার ফলে এখানে বিশাল কুণ্ড সৃষ্টি হয়েছে।
সীতাকুণ্ড ইকোপার্কের ইজারাদার জানান,ইকোপার্কেকাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতি বিজড়িত সহস্রধারা ঝর্ণা,লেকসহ প্রাকৃতিক সোন্দর্য্য দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক এসে ছেন। এবারের ঈদে রেকর্ড পরিমাণ পর্যটকের আগমন ঘটেছে। পার্কে আমরা ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছি।সীতাকুণ্ডের ফকিরহাটে অবস্থিত উপজেলার সরকারী বিনোদন কেন্দ্র বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক। কোয়া টারনারী ভূতাত্ত্বিক যুগে ভূপিটিলা সিরিজের ও অপার মিডল টিপাম সেন্ডষ্টোনে তৈরী বোটানিক্যাল গার্ডেনে গর্জন,ধারমারা,ডেউরা,হলুদ,বাঁশপাতা,বহেরা,জারুল, পলাশ,সোনালু,শিমুল,হরিতকি,আমলকি ও বিরল প্রজাতির সাইকাসসহ রয়েছে ১৪৫ প্রজাতির উদ্ভিদ। এছাড়া হরিণ, ভাল্লুক,খরগোশ,মায়া হরিণের মত বিরল বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর আনাগোনায় দর্শনার্থী ও পর্যটকের কাছে আরো আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কঅন্যদিকে সদ্য সরকারী অনুমোদনপ্রাপ্ত বিনোদন কেন্দ্র গুলিয়াখালী বীচে গিয়ে দেখা গেছে দিগন্তজোড়া সমুদ্রের জলরাশি আর কেওড়া বন দেখতে ভীড় করেছে শত শত পর্যটক। কেওড়া বনের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের চারদিকে কেওড়া গাছের শ্বাসমূল দেখার জন্য এদিক ওদিক ছুটাছুটি করছে মানুষ। এখানকার সোয়াম্প ফরেষ্ট ও ম্যানগ্রোভ বনের মতো পরিবেশ ভিন্নতা দিয়েছে। সমুদ্রের ঢেউ বা গর্জন না থাকলেও এই নিরিবিলি পরিবেশের গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত ভিন্নভাবেই পর্যটকদের কাছে টানে। অনেকেই জেলেদের বোটে সমুদ্র দেখতে বেরিয়ে পড়েছেন।
তাছাড়া বাঁশবাড়িয়া বীচে লক্ষনীয় পর্যটকের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো ছিল । সমুদ্রের মাঝে চলে যাওয়া এই সৈকতের লোহার ব্রিজে দর্শনার্থীরা সেলফি তোলায় ব্যস্ত ছিল। এখানকার ব্রীজে দাঁড়িয়ে থেকে জোয়ারের স্রোতের আওয়াজ মনকে উজাড় করে দেয়। ঝাঁউ গাছের সারি, খোলামেলা পরিবেশ, জেগে ওঠা সবুজ ঘাসের চর সব মিলিয়ে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত অপূর্ব সৌন্দর্য্য উপভোগ করেছেন অসংখ্য দর্শনার্থী। বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে সেখানকার সূর্যাস্ত দেখা। স্পিডবোটে করে ঘুরতে দেখা গেছে অনেককে।এছাড়া এবারের ঈদে ভাটিয়ারীর গলফ ক্লাব,সানসেট রেঁস্তোরা, ক্যাফে ২৪ রেস্টুরেন্ট,ইকোপার্কে ভ্রমণপিপাসু মানুষ ছুটে এসেছেন।কুমিল্লা থেকে জসীম বলেন,পাহাড় ও সমতল মিলিয়ে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা ভাটিয়ারী ক্যা ফে ২৪ এর ভেতরে থাকা কাঠের তৈরি মার্মা ঘর,বাঙালী ঘর,পাহাড় ঢালে বসার ছাউনি ঘরগুলো,নানা রকম পাখ—পাখালির ঘর,লেকের পানিতে রঙিন রাইডগুলোতে ঘুরতে ঘুরতে কখন যে বেলা বয়ে যায় তা টেরও পাওয়া যায় না। তাছাড়া এখানকার নয়নাভিরাম কনফারেন্স রুম,হরেক রকম ফুল ও পাতা বাহার গাছ অনেক ভালো লেগেছে। ভেতরের রেস্টুরেন্টের বিশালাকার সবুজ মাঠের মধ্যে রয়েছে শিশুদের বিনোদনের জন্য নানারকম রাইড, সেনা সরঞ্জামের প্রতিকী রূপ মনকে নাড়া দেয়।