…..প্রবারণার শুভেচ্ছা….
শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা (আগামি ০৯-১০-২০২২ খ্রিঃ) বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অতীব তাৎপর্য ও গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। বুদ্ধের অনুসারীগণ আষাঢ়ী পূর্ণিমা হতে প্রবারণা পূর্ণিমা পর্যন্ত এই তিন মাস (বর্ষাবাস) অধিস্হানের(প্রতিজ্ঞার) মাধ্যমে কঠোর ভাবে ধ্যান,সমাধি,সংযম নীতি অনুশীলন করে আত্মাধিক জগতে প্রবেশ করেন। তিন মাস পর্যন্ত আত্ম শুদ্ধি ও মনের পবিত্রতার জন্য ধ্যান,সাধনা,ভাবনা,নীতি অনুশীলন করে প্রবারণা পূর্ণিমার মাধ্যমে সমাপ্ত ঘোষণা করেন।
-প্রবারণার অর্থ হলো-আশার তৃপ্তি,অভিলাষ পূরণ,ধ্যান সাধনার শিক্ষার সমাপ্তি বুঝানো হয়। এটি আত্মাধিক সাধনার মাধ্যমে অাত্ম শুদ্ধি মনের পবিত্রতা বা আত্ম-সমালোচনাকেও বুঝায়। এই দিনে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে চারিত্রিক শুদ্ধির জন্য একে অপরকে করজোড়ে বলেন-বন্ধু আমার যদি কোনরূপে দোষ ত্রুটি ভুল দেখো বা কারও থেকে শুনে থাকো এবং এ কারণে যদি আমার উপর সন্দেহ হয়,তাহলে অামাকে বলো-আমি তার প্রতিকার করব।আর অন্যদিকে,প্রবারণা পূর্ণিমায় আকাশে ফানুস উত্তোলন করে উৎসব করা হয়!
আকাশে ফানুস উড়ানোর উদ্দেশ্যে হচ্ছে-সিদ্ধার্থ বুদ্ধ হওয়ার অাগে যখন গৃহত্যাগ করে অনোমা নদীর তীরে চলে যায়,তখন তাঁর মাথার চুল ধারালো অসি দিয়ে ছেদন করেন। চুল নিচে (মাটিতে)পতিত না হয়ে অলৌকিক ভাবে আকাশে ভাসমান হয়ে রহিল, সেই চুলকে দেবরাজ ইন্দ্র স্বর্গে নিয়ে চুল্লামণি ধাতু জাদি স্হাপন করলেন। তখন থেকে স্বর্গের সেই চুল্লামণি ধাতু জাদিকে বৌদ্ধগণ আকাশে ফানুস উড়িয়ে পূজা ও স্মরণ করেন।
প্রবারণা পূর্ণিমার পর পর এক মাস ব্যাপী প্রতিটি বৌদ্ধ-বিহারে কঠিন চীবর দান্যোৎসব শুরু হয়। মাস ব্যাপী এ কঠিন চীবর দান্যোৎসবের মাধ্যমে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা পূণ্যার্থীদের উদ্দেশ্যে অমৃতময় ধর্ম দেশনা (ধর্ম দান)প্রদান করে থাকেন।এই প্রবারণা পূর্ণিমার মাধ্যমে,জাতি,বর্ণ,ধর্ম,নির্বিশেষে সবাইকে জানাই প্রবারণার মৈত্রীপূর্ণ আন্তরিক শুভেচ্ছা। কামনা ও প্রার্থনা করি,প্রবারণা পূর্ণিমার মধ্যে দিয়ে সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ,শান্তি ও মঙ্গল বার্তা।পৃথিবীতে হানাহানি,মারামারি,অরাজকতা,
যুদ্ধ-বিগ্রহ বন্ধ হয়ে মানুষ একে অপরের প্রতি মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হোক।
“সব্বে সত্ত্বা সুখীতা হোন্ত” জগতে সকল প্রাণী সুখী হোক।
ভেন. সুদর্শী স্হবির
অধ্যক্ষঃ অার্য্যমিত্র বৌদ্ধ বিহার। তালতলা (জ্যোর্তিময় কার্বারী পাড়া) পানছড়ি,খাগড়াছড়ি।
সহ-সভাপতি, পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ।
পানছড়ি উপজেলা শাখা,খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা।