প্রথম বাংলা – ময়মনসিংহের তারাকান্দা থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার একই সাথে মাত্র ২দিনে চাঞ্চল্যকর ক্লু-লেস
হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শনিবার (৪জানুয়ারী) সকাল ১১টায় পিবিআই ময়মনসিংহ কার্যালয়ে এক প্রেস বিফিং এর মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেন পিবিআই ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার রাকিবুল আক্তার। । গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- আশিকুর রহমান (৩৫), রাহাত হোসেন তন্ময় (২৫), মোঃ পরশ চৌধুরী শ্রাবণ (২৯) ও মোঃ এহতেশামুল হক নিশাত (২৫)। পিবিআই জানায় তদন্তে নিহত অজ্ঞাত ব্যক্তির নাম জানা যায়।তার নাম
মোঃ আরিফুর রহমান (৪৬)। তিনি লক্ষীপুর জেলার রামপুর থানার লামচরী গ্রামের মোঃ রফিকুল ইসলাম পুত্র। সে রায়পুর উপজেলার ৬নং পূর্ব কেরোয়া ইউনিয়নের মেম্বার ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য একজন ফার্ণিচার ব্যবসায়ী ছিলেন।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার রাকিবুল আক্তার গণমাধ্যম কে বলেন
গত ১ জানুয়ারি সকাল ১০.০০ ঘটিকায় তারাকান্দা থানা পুলিশের মাধ্যমে পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলা সংবাদ পায় তারাকান্দা থানাধীন পিঠাসুতাগামী পাকা রাস্তার পাশে ধান ক্ষেতে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মৃতদেহ পড়ে আছে।উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে পিবিআই ময়মনসিংহ জেলার ক্রাইমসিন টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ডিজিটাল ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে অজ্ঞাত মৃত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করে।
পরে জেলার থানা পুলিশের মাধ্যমে খবরটি ডিসিস্টের পরিবারকে জানিয়ে দেয়। উক্ত ঘটনায় থানা পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি পিবিআই ময়মনসিংহ জেলাও ছায়া তদন্ত শুরু করে। বিষয়টি নিহতের স্ত্রী আয়শা আক্তার অবগত বাদী হয়ে তারাকান্দা থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তারাকান্দা থানার মামলা নং-০১, তাং-০২/০১/২০২৫ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ রুজু হয়। পরে থানা পুলিশের তদন্তকালে পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলা স্ব উদ্যোগে মামলাটি অধিগ্রহণ করে পিবিআই।
পরবর্তীতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অ্যাডি শনাল আইজিপি, মোঃ মোস্তফা কামাল এর তত্ত্বাবধানে পিবি আই, ময়মনসিংহ ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোঃ রকিবুল আক্তার এর সার্বিক সহযোগীতায় তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিনের নেতৃত্বে ২জানুয়ারী থেকে সকল অফিসার ও ফোর্সের আন্তরিকতা, নিরলস প্রচেষ্টা ও পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সের সহযোগীতায় তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে মাত্র দুই দিনের মধ্যেই হত্যাকান্ডের আসামীদের গ্রেফতার করতে সম্ভব হন।
তদন্ত টিম তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকান্ডে জড়িত অজ্ঞাত আসামীদের পরিচয় সনাক্ত করতে সক্ষম হন। পরে তাদেরকে ৩জানুয়ারী ময়মনসিংহের কোতোয়ালি মডেল থানা এলাকার দাপুনিয়া ইউনিয়নের খেজুরতলা নামক থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আসামীররা হলেন মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার কুতুবপুর এলাকার সোলায়মানের পুত্র আশিকুর রহমান (৩৫)
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার কুমারগাতি এলাকার ইসমাইল এর পুত্র রাহাত হোসেন তন্ময় (২৫), রংপুরের কোতোয়ালি এলাকার গণেশপুর এলাকার দেলোয়ার হোসেন চৌধুরীর পুত্র মোঃ পরশ চৌধুরী শ্রাবণ (২৯), তারাকান্দা উপজেলার রুপচন্দ্রপুর এলাকার এমদাদুল হক এর পুত্র
মোঃ এহতেশামুল হক নিশাত (২৫),। । গ্রেফতারকৃত সকল আসামীকে গত ০৩ জানুয়ারি বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করলে বিজ্ঞ আদালতে আসামীরা নিজেদেরকে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত জানিয়ে বিবরণ উল্লেখপূর্বক ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমোলক জবানবন্দি প্রদান করেছে বলে জানিয়েছেন পিবিআই পুলিশ সুপার রাকিবুল আক্তার জানান আসামীরা অপহরণ চক্রের সদস্য। এসময় তাদের নিকট থেকে অপরাধে ব্যবহৃত হাইস গাড়টি আলামত হিসেবে ঢাকা থেকে জব্দ করা হয়েী।
এ বিষয়ে পিবিআই পুলিশ সুপার ময়মনসিংহ জানায় আসামী শ্রাবণ ঢাকায় অবস্থানরত লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার ৬নং পূর্ব কেরোয়া ইউনিয়নের রানিং মেম্বার ও ফার্ণিচার ব্যব সায়ী আরিফুর রহমান এর তথ্য সংগ্রহ করে এবং তাকে জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা সাজায়। গত ২৫ ডিসেম্ব র ২০২৪ তারিখে আসামী শ্রাবণ ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে আসে এবং কয়েক দিন অবস্থান করে। এরপর গত ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে ময়মনসিংহ হতে তার বন্ধু তন্ময় ও নিশাতকে নিয়ে মিরপুর চলে যায়। সেখানে গিয়ে আসামী শ্রাবণ সুকৌশলে ভিকটিম আরিফুর রহমানকে মিরপুর-১ নম্বর এলাকা থেকে ডেকে নেয়। ভিকটিম আরিফুর রহমান সেখানে আসামাত্রই আসামী শ্রাবণ, আশিক, তন্ময় ও নিশাত মিলে তাকে ধরে ফেলে এবং প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে তাদের পূর্ব হতেই ভাড়া করে রাখা হাইস গাড়ীতে উঠতে বলে।
আরিফুর রহমান গাড়ীতে উঠামাত্রই তারা ময়মনসিংহের দিকে রওনা করে। আসামীরা জিম্মি আরিফুর রহমানের ফোন দিয়ে তার স্ত্রীর কাছে কল করায় এবং টাকা পাঠানোর জন্য এসএ মএস করায়। বিকাশ নম্বর হিসেবে আসামী আশিকের একটি নম্বর দেয়। গাজীপুরে জ্যামে গাড়ী আটকে গেলে ভিকটিম নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করলে আসামীরা অপহরণের বিষয়টি যাতে প্রকাশ না পায় সে জন্য ভিকটিমকে মারধর করতে থাকে।
একপর্যায়ে আসামীরা ভিকটিমকে হত্যা করে তারাকান্দার পিঠা সুতাগামী পাকা রাস্তার পাশে ধানক্ষেতে ফেলে রেখে আসে। পরে পিবিআই, ময়মনসিংহে সকল অফিসার ও ফোর্সের আন্ত রিকতা,নিরলস প্রচেষ্টা ও পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সের সহযোগী তায় মাত্র দুই দিনের মধ্যেই হত্যাকান্ডের আসামীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়।হত্যাকাণ্ডের সাথে আরো কেউ জড়িয়ে থাকলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান পুলিশ সুপার।