আবুল হাশেম রাজশাহী বিভাগীয় প্রতিনিধিঃ
দেশের পেঁয়াজ ঘাটতি মোকাবেলা করার জন্য সর কারী কৃষি প্রনোদনা কর্মসূচীর আওতায় রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় গত আগস্ট মাসে রোপণকৃত গ্রীষ্ম কালীন পেঁয়াজ উত্তোলন শুরু হয়েছে।গড়গড়ি ইউ নিয়নের সুলতানপুর চরে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন পেঁয়াজ উত্তোলনে। সরেজমিনে দেখা যায়, লাল রঙের বড় সাইজের এই পেয়াজগুলো ৫-৬ টাতেই ০১ কেজি পরিমাণ ওজন হচ্ছে। কৃষক আব্দুস সালাম জানান, নাসিক এন-৫৩ জাতের এই পেঁয়াজ বীজ উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পেয়েছিলাম।
বীজ ছাড়াও সার,বীজতলা তৈরির পলিথিন,সুতলি, বালাইনাশকসহ নগদ সহযোগিতা পেয়েছিলাম। কৃষি অফিসের প্রতিটি অফিসার নিয়মিত এসে যাব তীয় পরামর্শ দিয়েছেন। আমার ০১ বিঘা জমিতে প্রায় ১৭০ মণ ফলন পেয়েছি। এত ফলন হবে আমি কল্পনাই করতে পারিনি৷ আগামী বছর ৮-১০ বিঘা এই পেঁয়াজ আবাদ করবো।কৃষক গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি ০১ বিঘায় প্রায় ১৮০ মণ ফলন পেয়েছি। প্রতি মণ পেঁয়াজ ১০০০/- টাকা দরে জমি থেকে পাইকারি দরে বিক্রি করলাম। প্রায়
১,৮০,০০০/- টাকা পেঁয়াজ বিক্রি করলাম। সরকারী সহযোগিতা বাদে বিঘা প্রতি আমার খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। আরো আনুষঙ্গিক ০৫ হাজা র টাকা বাদ দিলেও আমার বিঘা প্রতি প্রায় ০১ লাখ ৩০ হাজার টাকা লাভ থাকবে। আমাদের এই সাফ ল্যের সব অবদান বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসের। উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান স্যার, সেই সময়ের কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কামরুল ইসলাম স্যার,উপসহকারী কৃষি অফিসার সোহেল রানা ও আব্দুল মোতালেব উনারা সপ্তাহে দুই তিন এসে এসে আমাদের যাবতীয় পরামর্শ দিয়েছেন। যখন যা করতে হবে,সবকিছু শিখিয়ে দিয়েছেন। এজন্য আমরা স্যারদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আগামী বছর আমিসহ অন্যান্য কৃষকরা মিলে প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে এই পেঁয়াজ আবাদের পরিকল্পনা করছি।
বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ শফিউল্লাহ সুল তান বলেন,দেশে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ৩৪ লাখ টন,কিন্তু উৎপাদিত হয় ৩০ লাখ টন। ঘাটতি প্রায় ০৪ লাখ টন। এই ঘাটতি মূলত হয় সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসে। আর এই সুযোগে এক শ্রেণির অসা ধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয়,ফলশ্রুতিতে সরকারকে বাজার ঠিক রাখতে বাহির থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।
এ কারণে সরকার গ্রীশ্মকালীন পেঁয়াজ আবাদ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তারই ধারা বাহিকতায় এ বছর আমরা বাঘা উপজেলায় প্রায় ৪১০ বিঘা জমিতে এই পেঁয়াজ আবাদ করছি। আজকে প্রথমবারের মত এই পেঁয়াজ উত্তোলন শুরু হলো। বিঘা প্রতি প্রায় ১৭০-১৮০ মণ ফলন পাওয়া যাচ্ছে। আশা করি বাঘা উপজেলায় প্রায় ২৮০০ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হবে।
তানোর উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি অফিসার কাম রুল ইসলাম বলেন,অধিক ফলনশীল নাসিক এন- ৫৩ জাতের এই পেয়াজ মূলত খরিফ-২ অর্থাৎ জুলাই আগস্ট মাসে বীজতলায় বীজ ফেলতে হয়। তারপর ৩০-৩৫ দিনের চারা মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। রোপণের ৭০-৮০ দিনের মধ্যেই পেঁয়াজ উত্তোলনের উপযোগী হয়ে যায়। সঠিক পরিচর্যা ও সুষম সার প্রয়োগ করলে এই পেঁয়াজ বিঘা প্রতি ২০০-২৫০ মণ পর্যন্ত ফলন দিতে পারে। উৎপাদনের পাশাপাশি সঠিক বাজার লিংক আপ সৃষ্টি করতে পারলে এই পেঁয়াজ চাষ করে কৃষকরা আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হতে পারবেন বলে মনে করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।