বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি
বরগুনার বেতাগীতে উপজেলার দারুল ইসলাম মহিলা আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে পরিবার কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিনত করার অভিযোগ উঠে ছে। নিজে,স্ত্রী,শ্যালকের পর মেয়ে ও ভাগিনাকে এবারে নতুন নিয়োগ দিয়ে এখন আলোচনায় এসে ছেন। ওই মাদ্রাসায় ছুটির দিনে নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে স্বজনপ্রীতি ও নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযো গ পাওয়া গেছে। লিখিত পরীক্ষায় আগেই প্রশ্ন বলে দিয়ে অধ্যক্ষ তার মেয়ে ও ভাগিনাকে নিয়োগ পরী ক্ষায় উর্ত্তীর্ণ করিয়েছেন বলে এমনই অভিযোগ করা হয়েছে।
এবিষয়ে নিয়োগ বঞ্চিত একাধিক প্রার্থী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক,বরগুনা জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। শুধু তাই নয়,অধ্যক্ষ শর্র্ষীনা পীরের মুরী দ ও বংলাদেশ জমিয়াতে হিযবুল্লাহ‘র বেতাগী উপ জেলা সাধারন সম্পাদক। সেই হিসাবে পীর ভাইয়ের আত্মীয়কেও নিরাপত্তাকর্মী পদে এবারে নিয়োগে জন্য চূড়ান্ত করেছেন।
গত শুক্রবার (০৬ জানুয়ারি) বিকাল ৩ টায় উপজে লার পৌরশহরের দারুল ইসলাম মহিলা আলিম মাদ্রাসায় নামমাত্র ওই নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়।এতে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারে টর পদে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুস সালামের মেয়ে সুমাইয়া সুলতানা শেফা,অফিস সহকারী কাম হিসা ব সহকারী পদে তার ভাগিনা মো. মারুফ এবং
অপর দুটি পদে অধ্যক্ষের পছন্দের দুই প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দারুল ইসলাম মহিলা আলিম মাদ্রাসার অফিস সরহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী,নিরাপত্তাকর্মী ও নৈশপ্রহরী নিয়োগে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। পদগুলোতে আবেদন করেন ২৮ জন প্রার্থী।
গত ৬ জানুয়ারি নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। কিন্তু পরীক্ষার আগেই মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মেয়ে ও ভাগিনাসহ বিভিন্ন পদে প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার গুঞ্জন শুরু হয় ও অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। এসবের তোয়াক্কা না করে ওই দিন অনুষ্ঠিত সাজানো নিয়োগ পরীক্ষায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ তার মেয়ে ও ভাগিনাকে এবং অপর দুটি পদে অধ্যক্ষের পছন্দের দুই প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষায় আগেই প্রশ্ন বলে দিয়ে তাদেরকে নিয়োগ পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ করানো হয়।
এভাবে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারে টর পদের ৬ প্রার্থীর মধ্যে অধ্যক্ষের মেয়ে সুমাইয়া সুলতানা শেফা,অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকা রী পদের ৯ প্রার্থীর মধ্যে অধ্যক্ষের ভাগিনা মো. মারুফ,নিরাপত্তাকর্মী ও নৈশপ্রহরী পদে অধ্যক্ষের পছন্দের দুই প্রার্থী মো. রাজু এবং মো. রাকিবকে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করা হয়। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে তার আর এক মেয়ে সাইমা সুলতানা তৃণাকেও আবেদন করিয়ে সুমাইয়া সুলতানা শেফা দুই বোনকে পাশাপাশি বসিয়ে সাজানো পরীক্ষা নেওয়া হয়।
অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী পদে নিয়োগ বঞ্চিত প্রার্থী সুমি আক্তার অভিযোগ করেন, মাদ্রাসা র অধ্যক্ষ নিজেই লিখিত পরীক্ষায় আগেই প্রশ্ন বলে দিয়ে এবং নির্ধারিত সময়ের এক ঘন্টা পর লোক দেখানোর জন্য নামেমাত্র নিয়োগ পরীক্ষা নিয়েছেন। অধ্যক্ষের লোকজন প্রশ্ন পত্র হাতে পাওয়া মাত্র হুট হুট করে উত্তরপত্র লিখে ফেলায় সন্দেহের তীর আরও ঘনিভ’ত হয়। তিনি বারং বার পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশ করে তাঁদের অভয় দিয়েছেন। তা দেখে আম রা কয়েকজন প্রার্থী প্রতিবাদও করি। কিন্তু নিয়োগ বোর্ডের সদস্যরা তাতে সাড়া দেননি। তাই আমিসহ কয়েকজন ভাইভা পরীক্ষায় অংশ না নিয়েই সেখান থেকে চলে আসি।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মো. জসিম উদ্দিন নামে এক প্রাথীর স্বামী অভিযোগ করেন, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ডিজি’র প্রতিনিধিদের আগে থেকেই ম্যানেজ করে রেখেছিলেন। ঔ প্রতিনিধি বেতাগীতে পদার্পন করে অধ্যক্ষের বাড়ীতে অবস্থান করেন। এমনকি অধ্যক্ষ তার অনুসারীদের নিয়োগ বোর্ডের সদস্য করেছেন। এ জন্য একাধিকবার নিয়োগ কমিটির রেজুলেশন পরিবর্তন করা হয়। তারা অধ্যক্ষের পছন্দের প্রার্থী দেরকে পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন পত্র সরবরাহ করে। তারাই আবার সেই উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ,এর আগে অধ্যক্ষ আবদুস সালাম প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর থেকেই কয়েক বছর আগে তার স্ত্রী, শ্যালককে ওই মাদ্রাসায় সহকা রী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এই মাদ্রাসায় তার চাচাতো বোনসহ অন্যন্য একাধিক আত্মীয় বর্তমানে কর্মরত রয়েছে। তিনি স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি র আশ্রয় নিয়ে মাদ্রাসাটিকে একটি পরিবার কেন্দ্রি ক ও স্বেচ্চাচারিতার প্রতিষ্ঠানে পরিনত করেছেন। রয়েছে শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের ঘটনা। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে এ নিয়ে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ চলে আসলেও তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেন না।
দারুল ইসলাম মহিলা আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাও লানা আবদুস সালাম জানান,নিয়োগ নিয়ে এখানে আত্মীয়তা ও স্বজনপ্রীতির কোন সুযোগ নেই। যারা সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে তাদেরকেই নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। যারা এসব অভিযোগ করেছেন তারা অপপ্রচার চালাচ্ছেন।এবিষয়ে উপজেলা নির্বা হী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, মাদ্রাসার নিয়োগের বিষয়ে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।