রৌমারী কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর আব্দুল হাই চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরিচয়ে একাধিক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রতারণা করে অর্থ আদায়ের অভিযোগে উঠেছে।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে সোমবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় গত বুধবার রৌমারী উপজেলা পরিষদ গেটের সামনে ভাগ্যকুল মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকে প্রতারণা কালে তাকে হাতে নাতে আটক করে জনতা।
আরও জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার পরিচয়ে রৌমারী থানা মোড় বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডার ও উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন ভাগ্যকুল মিষ্টান্ন ভান্ডারে বছরের শুরুর দিকে দুই দোকানে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এমন ভাবে মাঝে মধ্যে দোকানে গিয়ে টাকা আদায় করার চেষ্টাও চালিয়ে যেতো।
গত বুধবার রাত ৮ টার দিকে থানা মোড় বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডারে দোকান অপরিস্কার ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি ত্রুটির কথা জানিয়ে দোকানের শাটার বন্ধ করতে বাধ্য করায় কর্মচারিদের। ওই সময় মালিক দোকানে উপস্থিত না থাকায় ফোনে যোগাযোগ করতে বলে উপজেলা গেইট সংলগ্ন ভাগ্যকুল মিষ্টান্ন ভান্ডারে একই কান্ড শুরু করলে তারা আদর যত্নে মিষ্টি খেতে দিয়ে আশেপাশে অবস্থানরত লোকজনকে ডেকে নিয়ে আসে দোকানে।
পরে লোকজন আব্দুল হাইকে কি সমস্যা কিসের সমস্যা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি অনুমতিপত্র/প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদিহীন অবৈধভাবে দোকানে ব্যবসা করছেন তারা। কাগজ পাতি করার লক্ষে জেলা চীফ জডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে ফোনে চাপ প্রয়োগ করছেন। উপস্থিত লোকজন ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি পাশ কাটিয়ে যান। তখন তাকে অবৈধভাবে অর্থ আদায় প্রতারণার দায়ে আটক রাখে উপস্থিত জনতা।
জনতার হাত থেকে রক্ষা ও বিষয়টি সমাধান করার লক্ষে রৌমারী ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ওয়ার্ডের মেম্বার রবিউল করিমসহ স্থানীয় কয়েকজন প্রতারনার শিকার দোকানদারদের অর্থ ফিরিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জিম্মায় নেয় প্রতারককে।
অভিযোগে আরও জানা যায়, উপজেলার বড় বড় হোটেল গুলোতে মাঝেমাঝেই ঘটতো এমন প্রতারণার ঘটনা। অন্যান্য হোটেল মালিকদের কাছেও এ ভাবে অর্থ আদায় করা হয়েছে মুঠো ফোন ও বিভিন্ন কৌশলে।
থানা মোড় বিক্রমপুর মিষ্টি ব্যবসায়ী মিন্টু ও উপজেলা পরিষদের সামনে ভাগ্যকুল মিষ্টি ব্যবসায়ী সুজন মিয়া বলেন, চলতি বছরের প্রথম দিকে আব্দুল হাই কখনো উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবার কখনো জেলা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বানিয়ে ফোন ধরিয়ে দিতো। ফোনের ওপার থেকে বলতো আপনার দোকান অবৈধ। ভ্রাম্যমান আদালত দেয়া হবে। তবে আমাকে যদি ৫০ হাজার টাকা দেন, তবে আপনার দোকানে ভ্রাম্যমান আদালত বসানো হবে না।
এমন বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে পরে উপায়ন্তর না পেয়ে টাকা নিতে আসতে বললে, তিনি বলেন, ঘুষের টাকা সরাসরি নেয়া হয় না। বিকাশের মাধ্যমে টাকা চাইলে তৎক্ষনাত ৩৫ হাজার করে দুই দোকানে ৭০ হাজার টাকা ০১৯৩৩২১২১২০ নগদ ক্যাশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। গত বুধবার রাতে আবারো এমন ঘটনা ঘটানোর সময় টের পেয়ে তাকে জনতার হাতে আটক করা হয়। পরে স্থানীয় মেম্বার রবিউল ইসলামসহ স্থানীয় নেতারা তাকে টাকা পরিশোধ করে দেয়ার কথা বলে জিম্মায় নিয়ে ছেড়ে দেন।
মেম্বার রবিউল ইসলাম বলেন, সবকিছু জানাজানির পর ভূল শিকার করে মাফসাফ চেয়ে ২ দিনের মধ্যে তাদের দেয়া টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর আব্দুল হাই বলেন, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবুল কালাম আজাদ নামে আমাকে একজন বারবার ফোন দিয়ে দোকানদারদের লাইসেন্স দেখতে বললে আমি তাদের কাছে গিয়েছিলাম। তাদের অভিযোগের ৭০হাজার টাকা আমি পরিশোধ করেছি। যেহেতু আমি এমন একটি ঘটনার শিকার হয়েছি তাই আর ফোন ব্যবহার করবোনা।
উপজেলা নিবার্হী অফিসার মোহাম্মদ পূবন আখতারকে এ বিষয়ে বারবার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করে এবং অফিসে গিয়ে ও পাওয়া যায়নি।