প্রথম বাংলা – সংবিধান বাতিল করলে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, সংশোধন বা সংযোজন করা যেতে পারে। দেশের সংবিধান বাতিল করা হলে ৭১-এর স্বাধীনতাযুদ্ধকে অস্বীকার করা হবে।
সোমবার বিকেলে নীলফামারী সদরের রামগঞ্জের দুবাছুরি দ্বিমুখী দাখিল মাদরাসা মাঠে জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন।
জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ২০১৪ সালের ১৮ জানুয়ারি নীলফামারী সদর উপজেলায় র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত বিএনপির নেতা গোলাম রব্বানীর পরিবারকে নতুন বাড়ি হস্তান্তর উপলক্ষে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আয়োজনে এ জনসভার আয়োজন করা হয়।
রিজভী বলেন, একটি জাতির আত্মজীবনী হচ্ছে সংবিধান। সেটির সংযোজন হতে পারে, সংশোধন হতে পারে। সেখানে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিজমের যে বৈশিষ্ট্য, সেটা বাদ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু বাতিল করা যেতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রে সংবিধানের ধারাবাহিকতা রয়েছে, সংশোধন রয়েছে। কিন্তু বাতিল করা হয়নি।
জনসভায় রুহুল কবির রিজভী বলেন, জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের পর প্রত্যেকেই সমর্থন দিয়েছেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবকে। কিন্তু আমাদের বক্তব্য, জনপ্রত্যাশা, জন-আকাঙ্ক্ষার বাইরে গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার অন্য এজেন্ডা নিয়ে কাজ করলে দেশের মানুষ মেনে নেবেন না।
তিনি বলেন, এখনো চালের দাম কমেনি, চিনি, আলুর দাম কমেনি। শেখ হাসিনার কারণে গত বছর থেকে ভারত থেকে আলু আমদানি করতে হয়। এবারও যদি আলু আমদানি করতে হয়, তাহলে মানুষ বলবেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারকে আমরা সমর্থন দিয়েছি, তাহলে কী লাভ হলো? বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কেন বাড়ছে?’
সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বিএনপির কেন্দ্রীয় এই নেতা বলেন, কেউ কেউ বলছেন, আনুপাতিক হারে নির্বাচন। কেন? আনুপাতিক নির্বাচন কিসের জন্য? এটা কি তৃণমূলের মানুষ বোঝে? যেসব রাজনৈতিক দলের ভোটের সংখ্যা বেশি নয়, তারা আনুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থার কথা বলছে। যারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়, যাদের ভোটের সংখ্যা বেশি নয়, তারা এটা একটা কৌশল হিসেবে নিয়েছে। এটা দেশের মানুষ মেনে নেবে না। এ ধরনের কোনো পদ্ধতি নিয়ে যদি আপনারা ষড়যন্ত্র করেন, এই ষড়যন্ত্র কিন্তু মানুষ ধ্বংস করে দেবে।
তিনি আরো বলেন, দেশে হত্যা, ছিনতাই, ডাকাতি, ব্যাংক ডাকাতি হচ্ছে। আইজিপি তার বক্তব্যে বলছেন, ‘আমাদের হাতে ম্যাজিক নেই।’ এক দিনে আইনশৃঙ্খলায় পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। কিন্তু দেশের মানুষ তো দেখবে আপনার দায়িত্ব ও উদ্যোগ। কেন ব্যবসায়ীদের হত্যা করা হচ্ছে, কারা করছে, কেউ প্রকৃত আসামিদের গ্রেফতার করতে পারছেন না। জনগণ আপনাদের ব্যর্থতা দেখতে চায় না, জনগণ ভালো ফলাফল দেখতে চায়।
আমরা বিএনপি পরিবার-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমানের সভাপতিত্বে এই জনসভায় সাবেক উপমন্ত্রী ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব (দুলু), দলের কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহবিজ্ঞান–প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন, পল্লি উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক ও পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ফরহাদ হোসেন, রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামছুজ্জামান, নীলফামারী জেলা বিএনপির সভাপতি আলমগীর সরকার, সহসভাপতি মীর সেলিম ফারুক, মোস্তফা প্রধান, সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।