January 20, 2025, 12:38 pm
নোটিশঃ
আপনার আশেপাশের ঘটে যাওয়া খবর এবং আপনার ব্যবসার বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য যোগাযোগ করুন মানবাধিকার খবরে।

সীমান্ত পথ দিয়ে আসছে মাদক; অসাধু কিছু পুলিশ সদস্যদের ছত্রছায়ায় মোড়ে মোড়ে বসে মাদকের হাট

Reporter Name

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জেলা ও মহনগরের শতাধিক পুলিশ সদস্য জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। রাজশাহী জেলা ও মহান গর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে বসে মাদকের হাট। বছরের বারো মাসেই ঘটা করেই অভিযান চালায় পুলিশ,বিজিবি,ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্য রা। প্রায়ই রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে চৌকি ফেলে তল্লাশি করা হয়। এসব দৃশ্য দেখে আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে রাজশাহীতে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার হয়েছে।

কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিটা ঠিক তার উল্টো। অনুসন্ধা নে দেখা গেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মূল দায়িত্ব মাদক নিয়ন্ত্রণ হলেও বাস্তবে রাজশাহী মাদ কদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একক কোন মাদকবি রোধী অভিযান নেই বললেই চলে। জানা গেছে, প্রায় কয়েক বছর আগের একটি তালিকাকে পুঁজি করেই বিভিন্ন সংস্থা এসব অভিযান পরিচালনা করায়। কিন্তু মাদক চোরাচালানে যুক্ত নতুন নতুন মাদক ব্যবসায়ীরা সবার চোখের আড়ালে থেকে যাচ্ছে।

আবার বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদের নাম বাদ দিয়েই তালিকা মাঝে মাঝে হালনাগাদ করা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে,অধিকাংশ ক্ষেত্রে কয়েকটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এসব অভিযান করা হয়ে থাকে। অভিযানের অন্যতম উদ্দেশ্যই থাকে মাদক ব্যবসায়ীদের অভিযানের অগ্রীম ইঙ্গিত দিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হল এসব অভিযানে আটক বা জব্দ হওয়া হেরোইন, ইয়াবা ও ফেনসিডিল আটকের পর গায়েব করে দিয়ে পুনরায় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেয়া। আরএ কটি উদ্দেশ্য হল নকল হেরোইন,ইয়াবা ও ফেনসি ডিলের বোতলে পানি ভরে নকল মাদক দিয়ে মাম লা দেখানো যাতে সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ জনসাধারণ মনে করতে পারে মাদকবিরোধী অভিযান সফল হচ্ছে।

আটক বা জব্দ মাদকের সঙ্গে আটক ব্যক্তির (অধি কাংশ ক্ষেত্রে বাহক বা কামলা) স্বীকারোক্তির কথা বলে বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদের ফোন করে জানা নো যে,”আটক ব্যক্তি জানিয়েছে যে সে আটক মালের মালিক এবং পরবর্তীতে জব্দ মাদকের মালি ক হিসেবে তাকে পলাতক আসামি করা হবে” এক্ষে ত্রে নাম বাদ দেয়ার জন্য হাঁকা হয় বিপুল অঙ্কের টাকা। টাকা না দিলে পলাতক আসামি করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বড় মাদক ব্যবসায়ীরা টাকা দিয়ে পুলিশের সঙ্গে সমঝোতা করে। এক্ষেত্রে পুলিশ আটক ব্যক্তির সঙ্গে জব্দ করা হেরোইন বদল করে নকল হেরোইন দিয়ে আদালতে নমুনা পাঠায়। ফলে কেমিক্যাল পরীক্ষায় আটক মাদক নকল বলে প্রমাণিত হয়।

এতেমাদকের মামলাটিতে আটক ব্যক্তিরও কোনো শাস্তি হয় না। অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, হেরোইন চোরাচালানের আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে দীর্ঘ কয়ে ক বছর ধরে ব্যবহার হচ্ছে গোদাগাড়ী। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের লালগোলায় রয়েছে হেরোইন তৈরির কারখানা। সেখান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ভয়ঙ্কর মাদক হেরোইন আসছে গোদাগাড়ীতে। গোদাগাড়ী তে হেরোইন ব্যবসায় জড়িয়ে রয়েছে চার শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে শতাধিক মাদক সম্রাট কোটি কোটি টাকার হেরোইন এনে দেশের ভেতরে পাচার করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে রয়েছে ২৫৩ জন মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা। এ তালিকায় থাকা অধিকাংশ মাদক সম্রাট কখনোই ধরা পড়েনি। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের নীতি জিরো টলারেন্স। তবুও সক্রিয় হয়ে উঠেছে রাজশাহীর সীমান্ত

এলাকার চোরা কারবারি ও মাদক ব্যবসায়ীরা। পুলিশী তৎপরতায় চুনোপুঁটিরা ধরা পড়লেও ধরাছোঁ য়ার বাইরে মূল হোতা। সীমান্ত পথ দিয়ে আসছে মাদকের বড় বড় চালান। নিত্যদিন ভারত থেকে আসছে কোটি কোটি টাকার হেরোইন ,ফেন্সি ডিল,গাঁজাসহ বিভিন্ন নামি-দামি ব্র্যান্ডের মদ। এগুলো অবৈধ পথে নিয়ে এসে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়,মাদক পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে গোদাগাড়ী,সাহেবনগর,মানিকচক,কোদালকাটি, আলাতুলি বগচর, হাকিমপুর,সুইজগেট,কামার পাড়া,সুলতানগঞ্জ,সারাংপুর,ভগবন্তপুর,হাটপাড়া ,বারুইপাড়া,রেলবাজার,মাদারপুর,মাটিকাটা,

সিএন্ডবি আঁচুয়া,গড়ের মাঠ,রেলগেট বাইপাস, বিদিরপুর,প্রেমতলী,ফরাদপুর,রাজাবাড়ী,খরচাকা, নির্মলচর,পবা উপজেলার সোনাইকান্দি,গহমাবোনা ,জাহাজঘাটি,হরিপুর,হাড়পুর। চারঘাট উপজেলার ইউসুপপুর,মুক্তারপুর,গোপালপুর,টাংগন,পিরোজ পুর,রওথা এবং বাঘার মীরগঞ্জ,হরিরামপুর ও আলাইপুর চর মাজার দিয়ার সীমান্ত ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব সীমান্ত এলাকা দিয়ে ফেন্সিডিল,মদ ও গাঁজা আসলেও গোদাগাড়ী সীমান্ত পথগুলো দিয়ে বেশীর ভাগ হেরোইন প্রবেশ করে। হেরোইনের বড় চালান আসার পর সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে ভাগবাটোয়ারা হয়ে অভিনব কৌশলে তা পাচার করা হয়। হেরোইন বহনে নারী ওশিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে।

গোদাগাড়ী সীমান্তে শুধু হেরোইন পাচারের সঙ্গে ৫ শতাধিক চোরাচালানি জড়িত রয়েছে। রাজশাহী মহানগরী এলাকা গুলো হচ্ছে কাশিয়াডাঙ্গা, গুড়িপাড়া,লবডাংগা,মোল্লাপাড়া,বুলানপুর, ডাবতলা,তেরখাদিয়া,শিরোইল কলোনি,পদ্মা আবাসিক এলাকা,সিএমবির মোড়,পঞ্চবটি, কেঁদুর মোড়,তালাই মারি,শিরোইল বাস টার্মিনাল, খরবনা,শ্মশান ঘাট,এলাকা,টিকাপাড়া খুলি পাড়া, বারো রাস্তার মোড়, মিজানের মোড়,কাটাখালি, দাশমাড়ি,কাজলা,বিনোদপুর ও বেলপুকুর এলাকা। এরা অল্প সময়ের ব্যবধানে বনে গেছেন কোটিপতি। হেরোইনের খনিখ্যাত গোদাগাড়ীতে পাইকারি ছাড়াও খুচরাভাবে হেরোইন বিক্রি হয়। হেরোইন ও ফেন্সিডিলের সঙ্গে জড়িত মাদক ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা নিরাপদে চালিয়ে যেতে পুলিশ ও

সরকারী রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে গড়ে তুলেছেন সখ্যতা। পুলিশের অদৃশ্য মদদে মাদক কারবারিরা বেশি সক্রিয় বলে জানা গেছে। মাসিক মাসোহারা নেওয়ার কারণে মুলহোতারা থাকেন ধরা ছোঁয়ার অনেক বাহিরে। পুলিশের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করণে মাঝে মাঝে চুনোপুঁটিসহ কিছু মাদক কারবা রিকে আটক করে থানা পুলিশ। যা জনগণকে আইওয়াশ মাত্র। গোদাগাড়ী সীমান্তের মাদকের বড় বড় চালান দেশের বিভিন্ন স্থানে আটক করা হলেও সেই চালানগুলি ধরতে ব্যর্থ রাজশাহী জেলা ও মহানগর পুলিশ। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, রাজশাহী জেলা ও মহানগর পুলিশের একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা এই মাদকের সাথে জড়িত। মাদকের সাথে জড়িত থাকার দায়ে গ্রেফতার হয়েছেন অনেক পুলিশ সদস্য। এছাড়াও একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রয়েছেন বিভাগীয় মামলা।

মামলায় তদন্তে প্রমাণিত হলেও দৃষ্টান্তমূলক কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে লক্ষ্য করা যায়নি। যার ফলে বছর পর বছর কর্মরত রয়েছেন রাজশাহী জেলা ও মহানগর ইউনিটেই। দামি বাড়ি, ফ্লাট বাড়ি,গাড়ি সব কিছুই রয়েছে এসব পুলিশ কর্মকর্তাদের। যদি কোন কারনে বদলিও হয়। কয়েক মাস যেতে না যেতেই পুনরায় পোস্টিং নিয়ে আসেন এ অঞ্চলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, পুলিশ হেডকোয়ার্টার আদেশ অনুযায়ী একই জেলায় দুইবার যাওয়ার সুযোগ নেই। তাহলে কোন অদৃশ্য শক্তির বলে তারা বারবার একই জেলায় চাকরি করে যাচ্ছেন। এবিষয়ে অফিসার ইনচার্জ গোদাগাড়ী মডেল থানার কামরুল ইসলাম বলেন, বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে থানা পুলিশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে।

এবিষয়ে অফিসার ইনচার্জ, চারঘাট মডেল থানা মাহবুবুল আলম বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে থানা পুলিশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে। মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি। এবিষয়ে রাজশাহী জেলা পুলিশের মিডিয়া ও মুখপাত্র (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) ইফতেখায়ের আলমকে বদলি জনিত কারণে তাদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এবিষয়ে, রাজশাহী মহানগর পুলিশের মিডিয়া ও মুখপাত্র রফিকুল আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ না করাই তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।



Our Like Page
Developed by: BD IT HOST