May 10, 2024, 2:38 pm
শিরোনামঃ
কাস্টমসে তোলপাড় গোয়েন্দার আটকে দেওয়া মার্সিডিজ গোপনে খালাস দূরারোগ্য কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত আনিসুরের পাশে দাঁড়ালেন ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার কাল বৈশাখী ঝড়ে ভেঙে গেছে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাবিটার ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ দুদকের মামলা ধান ও চালের মানে আপস করা হবে না – খাদ্যমন্ত্রী উপজেলা নির্বাচনী মাঠে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি এ্যাড. শেখ আব্দুল হামিদ লাভলুর নির্বাচনী আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত মুক্তাগাছা উপজেলা পিআইও সহকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ চকরিয়ায় জোড়া খুন: বাদীর বিরোদ্ধে ঘরবাড়ী, গরু লুট ও চাঁদাবাজীর অভিযোগে মামলা চকরিয়ার চিরিঙ্গায় ডেকোরেশন ব্যবসায়িকে মারধর করে সর্বস্ব লুট
নোটিশঃ
আপনার আশেপাশের ঘটে যাওয়া খবর এবং আপনার ব্যবসার বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য যোগাযোগ করুন মানবাধিকার খবরে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আইন বাতিলের পর সাইবার নিরাপত্তা আইন?

Reporter Name

নিজস্ব প্রতিবেদন

বাংলাদেশের বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন,পরিবর্তন ও প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সর কার। আইনটির বদলে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ নামে নতুন একটি আইন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নতুন আইনে ডিজিটাল মাধ্যমে মানহানিকর তথ্য প্রচার ও প্রকাশ করার ক্ষেত্রে আর কারাদণ্ডের বিধান থাকছে না। কারাদণ্ড বাতিল করে সেখানে শাস্তি হিসেবে জরিমানা রাখা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মুখে সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি সরিয়ে নিচ্ছে—এ কথা মানতে নারাজ সরকার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের’ বয়স পাঁচ বছর হয়ে গেছে। একটি আইন পাঁচ বছর কার্যকর থাকার পরে এটি অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকারি তাও হারিয়ে ফেলে। অপরাধের ধরনও বদলায়।এছাড়া অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় হয়েছে ব্যাপক। তাই এই আইনের অনেক ক্ষেত্রেই পরিবর্তন আনা হয়েছে মাত্র। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকার মনে করেছে সাইবার অপরাধ অনেক হচ্ছে, তাই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের অনেকগুলো ধারাকে সংযুক্ত করে নতুন আইনটি করা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি বিলুপ্ত নয়, নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ দিয়ে প্রতিস্থাপিত হচ্ছে।

নতুন আইনটিতে কী থাকছে, সংশ্লিষ্ট মহলে এটি নিয়ে নতুন কোনও আলোচনা-সমালোচনা হবে কিনা তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএস এ) পরিবর্তে প্রস্তাবিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’যেন কো নোভাবেই স্বাধীন মতপ্রকাশে বাধা ও গণমাধ্যমের কণ্ঠরো ধের হাতিয়ারে পরিণত না হয়,তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) বাতিলে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে টিআইবি বলেছে, ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ নামে নতুন যে আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে, তা যেন ভিন্নমত দমনের হাতিয়ারে পরিণত না হয়। আইন টি যেন শুধু সাইবার অবকাঠামোর নিরাপত্তার মধ্যে সীমা বদ্ধ থাকে। একই সঙ্গে নতুন আইনটি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত করতেও সরকারের প্রতি তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। সোমবার (৭ আগস্ট) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত এবং নতুন সাইবার সিকি উরিটি আইন নিয়ে এমন প্রতিক্রিয়া দিয়েছে টিআইবি।

সোমবার (৭ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতি ত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে সাইবার নিরাপত্তা আই নের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।মন্ত্রিপরি ষদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অনেক ধারা পরিবর্তন করে নতুন আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। নতুন আইন পাস হলে আগেরটি বাতিল হবে। নতুন আইনে যেসব পরিবর্তন আসছে তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মানহানির মামলায় আগে জামিন অযোগ্য জেল ও জরিমানার বিধান ছিল। নতুন আইনে জেলের বিধানটি বাদ দিয়ে শুধু জরিমানার বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। মানহানিকর তথ্য প্রকাশে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে নতুন আইনে।

জানা গেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারায় মানহানির বিষয়টি রয়েছে। এতে বলা আছে, যদি কোনও ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনও ইলেকট্রনিক বিন্যাসে পেনাল কোডের (দণ্ডবিধি) সেকশন ৪৯৯-এ বর্ণিত মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, সে জন্য তিনি অনধিক তিন বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আর যদি কোনও ব্যক্তি উপধারা (১)-এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ সংঘটন করেন, তাহলে ওই ব্যক্তি অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। প্রস্তাবিত আইনে এই অপরাধের জন্য কারাদণ্ড বাদ দিলেও জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।

এ ছাড়া নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাইবার নিরাপত্তার জন্য যেসব ধারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ছিল, সেই ধারা প্রস্তাবিত আইনে অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে। তবে অনেক গুলো ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন আইন অনুযায়ী একটা সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সি থাকবে। এছাড়া আগের আইনে জেলের বিধান বেশি ছিল। নতুন আইনে জরিমানার পরিমাণ বেশি রাখা হয়েছে। নতুন আইনে জামিনঅযোগ্য ধারাগুলো হচ্ছে— ১৭, ১৯, ২১ ও ৩৩। আর জামিনযোগ্য ধারাগুলো হচ্ছে— ১৮, ২০, ২২, ২৪, ২৬, ২৮, ২৯। ভেটিং (আইন মন্ত্রণালয়ের যাচাই-বাছাই) শেষ করে আবার মন্ত্রিপরিষদে আসবে আইনটি।

জানা গেছে, প্রস্তাবিত আইনে অনেকগুলো ধারা জামিন যোগ্য করা হয়েছে, যা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জামিন অযোগ্য ছিল। এ ছাড়াও বিভিন্ন অপরাধের জন্য শাস্তি ক মানো হয়েছে নতুন আইনে। যেমন— ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা-২১-এ বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনও প্রকার প্রোপাগান্ডা বা প্রচারণার জন্য দণ্ডের বিধান রয়েছে। যদি কোনও ব্যক্তি এই অপরাধ করেন, তাহলে তিনি অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

নতুন আইনে এই সাজা কমিয়ে এখন করা হয়েছে সাত বছর। এ ছাড়া অনেকগুলো ধারায় দ্বিতীয়বার অপরাধের জন্য সাজা দ্বিগুণ বা সাজা বাড়ানো ছিল। প্রস্তাবিত আইনে প্রত্যেকটি ধারায় যেখানে দ্বিতীয়বার অপরাধের ক্ষেত্রে বাড়তি সাজার কথা আছে, সেগুলো বাতিল করা হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৮ ধারা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করার বা উসকানি অভিপ্রায়ে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনও ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা প্রচার করেন বা করান, যা ধর্মীয় অনুভূতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর আঘাত করে, তাহলে এই ব্যক্তির এই কাজ হবে একটি অপরাধ। কোনও ব্যক্তি এই অপরাধ সংঘটন করলে তিনি অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। আর এই অপরাধ দ্বিতীয় বার করলে সাজা আরও বেশি হবে।

প্রস্তাবিত আইনে এটি (২৮ ধারা) পরিবর্তন করে জামিনযোগ্য করা হয়েছে (আগে অজামিনযোগ্য ছিল) এবং সাজা কমানো হয়েছে। এখন এই অপরাধে সাজা হবে সর্বোচ্চ দুই বছর। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩১ ধারাও পরিবর্তন করা হচ্ছে প্রস্তাবিত আইনে। এই ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনও ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন বা করান, যা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অথবা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় বা ঘটার উপক্রম হয়, তাহলে ওই ব্যক্তির অনধিক ৭ বছর কারাদণ্ড, বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। প্রস্তাবিত নতুন আইনে সাজা কমিয়ে ৫ বছর করা হয়েছে। দ্বিতীয়বার একই অপরাধের বাড়তি সাজা বাতিল করা হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারায় সরকারি গোপনীয়তা ভঙ্গের অপরাধের জন্য অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান ছিল। এটি কমিয়ে সাত বছর করা হয়েছে। হ্যাকিংয়ের জন্য অনধিক ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অনধিক এক কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে একটি ধারায়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নতুন আইনে মোট ধারা রয়েছে ৬০টি। যার ৯০ শতাংশ ধারাই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট থেকে প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি আগামী সেপ্টেম্বরে সংসদে বিল আকারে পাসের জন্য সংসদে উত্থাপন করা হবে। সেখানে এটি অনুমোদিত হবে।

নতুন আইন সম্পর্কে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিক দের বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার রোধ করার জন্য এই আইনের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Our Like Page